প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকেও কাঁদিয়ে ছেড়েছিলেন লতা মঙ্গেশকরের, কিন্তু কেন?
প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকেও কাঁদিয়ে ছেড়েছিলেন লতা মঙ্গেশকরের, কিন্তু কেন?
দেশে আজ আবারও এক নক্ষত্রের পতন হল। সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরের জীবনাবসানে শোকস্তব্ধ গোটা ভারত। ২৭ দিনের লড়াইয়ে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর। কোভিড আক্রান্ত হয়ে মুম্বাইয়ের ব্রীচ ক্যান্ডি হাসপাতালে গত ৮ জানুয়ারি ভর্তি হয়েছিলেন গায়িকা লতা মঙ্গেশকর। শনিবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আবার আইসিইউতে রাখা হয়। চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাও করা হচ্ছিল। কিন্তু রবিবার তিনি প্রয়াত হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। একবার প্রজাতন্ত্র দিবসে লতা মঙ্গেশকর দেশের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে কাঁদিয়ে ছেড়েছিলেন। কিন্তু কেন কেঁদেছিলেন তিনি!
লতাজির গানে কেঁদেছিলেন নেহেরু!
সালটা ১৯৬৩। সেবারের প্রজাতন্ত্র দিবসের এক অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন সুর সম্রাজ্ঞী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, রাষ্ট্রপতি এস রাধাকৃষ্ণণ, ইন্দিরা গাঁধীর মতন বিশেষ ব্যক্তিরা। সেই বিশেষ দিনে লতাজি দেশাত্মবোধক গান 'অ্যা মেরে ওয়াতন কে লোগো' গেয়েছিলেন, আর তা শুনেই আবেগপ্রবণ হয়ে কেঁদেছিলেন সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী লতাজিকে ডেকে বলেছিলেন, 'তুমি খুব সুন্দর গেয়েছো। যে আমার চোখে জল এনে দিয়েছো।' তখন লতাজি তাঁকে বলেছিলেন, 'কে জানতো যে এই গানটি সকলের পছন্দ হবে।' (ছবি সৌজন্য: লতা মঙ্গেশকর ফেসবুক পেজ)
সাক্ষাৎকারে গায়িকা কী জানিয়েছিলেন
এক সাক্ষাৎকারে গায়িকা জানিয়েছিলেন, অ্যা মেরে ওয়াতন কে লোগো' গানটি লিখেছিলেন প্রদীপজি অমর। লতা মঙ্গেশকরের অনুষ্ঠানের আগের প্রচণ্ড পেটে ব্যাথা হয়েছিল। প্রদীপজি গানটি লেখার পর আমাকে গাইতে বলেছিলেন। কিন্তু সেভাবে কোনও রেওয়াজ না থাকার জন্য আমি গানটি গাইতে চাইনি। প্রায় জোর করেই আমাকে দিয়ে গানটি গাওয়ানো হয়েছিল। আমাকে তিনি জানিয়েছিলেন, যদি আমি গানটি না গাই তাহলে তিনি অনুষ্ঠানের পুরো পরিকল্পনাই বাতিল করে দেবেন।
‘অ্যা মেরে ওয়াতন কে লোগো’ গানটির বিশেষত্ব কী
সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর অনেক গানই গেয়েছেন। কিন্তু 'অ্যা মেরে ওয়াতন কে লোগো' গানটির একটি বিশেষত্ব রয়েছে। ১৯৬৩ সালের প্রথম বার রামলীলা ময়দানে গানটি তিনি গেয়েছিলেন। অনুষ্ঠানের পর যখন লতাজিকে জওহরলাল নেহরু ডেকেছিলেন তখন গায়িকা খুব নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন। কারণ তিনি ভবেছিলেন বিশেষ ব্যাক্তিসম্পন্ন মানুষ কেন তাঁকে ডাকল? নেহেরু লতাজিকে বলেছিলেন,'তুমি আমাকে কাঁদিয়ে ছাড়লে'।
ভারতের একজন স্বনামধন্য গায়িকা তিনি
সুর সম্রাজ্ঞী এক হাজারেরও বেশি হিন্দি ছবিতে গান গেয়েছেন। তিনি ভারতের একজন স্বনামধন্য গায়িকা ছিলেন। তিনি গানে রেকর্ড গড়ে ছিলেন। ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষাতে ও বিদেশি ভাষায় গান একমাত্র তিনিই গেয়েছিলেন।
গায়িকার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সঙ্গীতমহল
ঠিক ৮০ বছর আগে শুরু হয়েছিল লতাজির গানের সফর। তিনি গান গেয়ে ভারতরত্ন (২০০১), পদ্মবিভূষণ (১৯৯৯), দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (১৯৮৯), মহারাষ্ট্রভূষণ পুরস্কার (১৯৯৭), এনটিআর জাতীয় পুরস্কার (১৯৯৯), পদ্মভূষণ (১৯৬৯) সালে পেয়েছিলেন। তাঁর সুন্দর গানে মুগ্ধ শ্রোতা। গায়িকার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সঙ্গীতমহল থেকে সাধারণ মানুষ।
ছবি সৌজন্য: লতা মঙ্গেশকর ফেসবুক পেজ