ওমিক্রনের কম ঝুঁকি, ফেব্রুয়ারিতে হয়ত হাল্কা শিখরে পৌঁছবে ভারত, অনুমান কোভিড প্যানেলের
নভেম্বরের গোড়ার দিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় সনাক্ত হওয়া করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন বিশ্বের একাধিক দেশে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। যার মধ্যে ব্রিটেনে ওমিক্রনের কারণে সর্বোচ্চ সংখ্যায় কোভড–১৯ কেস ধরা পড়েছে। তবে ন্যাশনাল কোভিড–১৯ সুপারমডেল কমিটির প্রধান এম বিদ্যাসাগর জানিয়েছেন যে ভারতে এই ওমিক্রনের কম ঝুঁকি লক্ষ্য করা গিয়েছে।
ভারত কম ঝুঁকিপূর্ণ
হায়দরাবাদ আইআইটির অধ্যাপক বিদ্যাসাগর এও জানিয়েছেন যে তাঁর বিশ্বাস ভারতে ব্রিটেনের মডেল অপ্রাসঙ্গিক। তিনি এটি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেছেন, 'দু'টি করণ রয়েছে। প্রথমত, ব্রিটেনে কম সেরো-পজিটিভিটি এবং উচ্চ ভ্যাকসিন অনুপ্রবেশ রয়েছে, যেখানে ভারতে উভয়ই রয়েছে, যা ভারতকে কম ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।' দ্বিতীয় কারণটিকে তুলে ধরে তিনি বলেন, 'ব্রিটেনে অধিকাংশ এমআরএনএ ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়েছে যা খুব অল্প সময়ের জন্য আপনাকে সুরক্ষা দিচ্ছে। ভারতে এই ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয় না।' অনুচ্চ সেরো-পজিটিভিটির অর্থ হল প্রকৃত সংক্রমণের মাধ্যমে কম সংক্রমিত হওয়া।
ওমিক্রন নিয়ে গবেষণা জারি রয়েছে
সুপারমডেল কমিটিতে অধ্যাপক বিদ্যাসাগর ছাড়াও রয়েছেন আইআইটি কানপুরের অধ্যাপক মণীন্দ্র আগরওয়াল ও সেনা মেডিক্যাল পরিষেবার ডেপুটি প্রধান মাধুরী কানিতকার। কোভিড-১৯ মহামারির বিস্তার সম্পর্কে সম্ভাব্য অনুসন্ধান করার জন্য এই কমিটি গঠন করেছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। ভারতে ওমিক্রনের আবির্ভাব সম্পর্কে সন্ধান করতে গিয়ে নতুন পরিসংখ্যান হাতে আসে এই কমিটির। এই কমিটির মতে, ওমিক্রনে করোনা কেসের সংখ্যা জানুয়ারি থেকে বাড়তে শুরু করবে এবং ফেব্রুয়ারির শেষে গিয়ে শীর্ষে পৌঁছবে। যদিও এই তথ্য এখনও সরকারের কাছে পৌঁছায়নি এই কমিটি এবং এটি একেবারে ব্যক্তিগত স্তরে করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই কমিটির শেষ বৈঠক হয়েছিল।
জানুয়ারি থেকে ওমিক্রনের কেস সংখ্যা বাড়বে
এই প্যানেলের সদস্য মণীন্দ্র আগরওয়াল এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, 'দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রিটেন ও ডেনমার্ক থেকে আসা তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে আমরা এই দেশে ওমিক্রনের জন্য কেস বৃদ্ধি জানুয়ারিতে দেখতে পারব যা শিখরে পৌঁছবে ফেব্রুয়ারির শেষে।' যদিও দৈনিক কতগুলি করে কেস হবে সে বিষয়ে এখনও সঠিক কোনও পরিসংখ্যান তিনি দিতে পারেননি। তিনি বলেন, 'এই মুহূর্তে দৈনিক করোনা সংখ্যা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে, কারণ যেহেতু ভারতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা ক্ষয় হবে তার সঠিক পরিমাণ অনুমান করা কঠিন। অন্যান্য দেশের তথ্য এখনও বেশ আংশিক।'
দ্বিতীয় ওয়েভের চেয়ে ওমিক্রন কম ভয়াবহ
প্রসঙ্গত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার পলায়ন বা ফাঁকি দিয়ে দেওয়ার ফলে যেটা হয় সেটা হল এক ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাসকে সনাক্ত করতে ও তা নির্মূল করতে সক্ষম হয় না।
এর মধ্যে আগরওয়াল যোগ করেন যে ভারতে দ্বিতীয় ওয়েভের শিখরের তুলনায় ওমিক্রনের শিখর অনেক ছোট হবে। তবে তিনি এও বলেন যে এটি অস্থায়ী দাবি (গবেষণা) ও আরও তথ্য আসলে এই দাবি বদলে যেতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে এই প্যানেলের গত দু'সপ্তাহের পূর্ববর্তী অনুমান বদলে গিয়েছিল কারণ অন্যান্য দেশ থেকে বেশ কিছু তথ্য প্যানেলের হাতে আসে।
কমিউনিটি সংক্রমণের সম্ভাবনা
বিদেশ ভ্রমণের আগের কোনও অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও ভারতে ওমিক্রনের জন্য একাধিক কোভিড-১৯ কেস সনাক্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আগরওয়াল জানিয়েছেন যে হয়ত কমিউনিটি সংক্রমণ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, 'যখন এই অনুমান তৈরি হচ্ছে, আমরা মনে করছি কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে। যদিও এটা খুবই হতাশবাদী অনুমান এবং জিনিসগুলি ক্রমে কতটা খারাপের দিকে যেতে পারে তা আমরা অধ্যয়ন করছি।'