পাকিস্তানের মন্দির ভাঙচুরের ঘটনার সমালোচনায় দিল্লি, পাক কূটনীতিককে ডেকে পাঠাল ভারত
পাকিস্তানের মন্দির ভাঙচুরের ঘটনার সমালোচনায় দিল্লি
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে হিন্দু মন্দিরের ওপর হামলা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাকিস্তানের কূটনীতিককে ডেকে পাঠিয়েছে ভারতের বিদেশমন্ত্রক। মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় দিল্লির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দাও করা হয়েছে।
গণেশ মন্দির ভাঙচুর
বুধবার রহিম ইয়ার খান জেলার ভোঙ্গ গ্রামে শতাধিক উন্মত্ত জনতা মন্দির ভাঙচুর করে এবং মন্দির সংলগ্ন হাইওয়ে অবরোধ করে। জানা গিয়েছে, এক স্থানীয় ৮-৯ বছরের শিশু মাদ্রাসায় প্রস্রাব করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। ওই শিশুকে গ্রেফতার করা হলেও স্থানীয় আদালত তাকে জামিন দেওয়ার পরই পরিস্থিতি আরও অশান্ত হয়ে ওঠে। মন্দির ভাঙচুরের ছবি ও ভিডিও উভয় দেশের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ব্যাপকভাবে শেয়ার ভাইরাল হয়। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের মুখ্য বিচারপতি গুলজার আহমেদ বৃহস্পতিবার এই ঘটনা বিষয়ে সংসদীয় সদ্য রমেস কুমার ভঙ্কওয়ানির টুইট থেকে জানতে পারেন। ইতিমধ্যেই তিনি মুখ্য বিচারপতির সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
কূটনীতিককে তলব
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি জানিয়েছেন যে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রহিম ইয়ার খানে গণেশ মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় উদ্বিগ্ন দিল্লি ৷ উন্মত্ত জনতা মন্দিরে হামলা চালিয়ে মূর্তি ভাঙচুর করে ৷ পরে মন্দিরে আগুন লাগিয়ে দেয় ৷ মন্দির সংলগ্ন হিন্দুদের বাড়িতেও হামলা করা হয়েছে ৷ দিল্লি এই হামলার তীব্র নিন্দা করে ৷ সেই সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত পাক কূটনীতিক আফতাব হাসান খানকে ডেকে পাঠানো হয়েছে ৷ ভারতের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং তাঁদের ভালো থাকা নিশ্চিত করতে পাকিস্তানকে তলব করা হয়েছে।
গত বছরও একাধিক মন্দির ভাঙচুর
বাগচি যুক্তি দিয়ে জানান যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা, বৈষম্য এবং নিপীড়নের ঘটনা, মন্দিরে হামলার সব খবরই পাকিস্তানের কাছে রয়েছে। তিনি বসেন, 'গত বছরও একাধিক মন্দির ও গুরুদ্বার সহ গত বছরের জানুয়ারিতে সিন্ধু প্রদেশে মাতা রানী ভাতিয়ানির মমন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ওই বছরের ডিসেম্বরে খাইবার পাখতুনের করকে হিন্দু মন্দির ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনাগুলি আশঙ্কাজনক হারে ঘটছে, যখন পাকিস্তান রাষ্ট্র ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলি সংখ্যালঘুদের এবং তাদের মন্দিরে হামলা নিষ্ক্রিয়ভাবে এবং প্রতিরোধে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।'
সুপ্রিম কোর্টে শুনানি
এখানে উল্লেখ্য, ভারত ও পাকিস্তান প্রায়ই একে-অপরের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগ তোলে, যার প্রভাব দেখা যায় তাদের দ্বিপাক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে। ৬ অগাস্ট পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে মন্দির হামলার শুনানি হবে এবং মুখ্য বিচারপতি প্রধান সচিব ও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন যে এই ঘটনার রিপোর্ট নিয়ে যেন তাঁরা শুনানিতে হাজির থাকেন। ভোঙ্গ গ্রামের পুলিশের কাছে মুসলিম মৌলবীর এক অভিযোগে জানা গিয়েছে যে গত ২৫ জুলাই মাদ্রাসাতে প্রস্রাব করে এক হিন্দু ছেলে। এই ঘটনায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রামের হিন্দু বর্ষীয়ান বাসিন্দারা ক্ষমা চান এবং জানান যে ছেলেটি বালক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। স্থানীয় আদালত ওই বালককে জামিন দেওয়ার পরই অজ্ঞাতপরিচয়রা স্থানীয় বাসিন্দাদের উস্কানি দিয়ে বুধবার প্রতিবাদ করতে বলে।
পাকিস্তানের পাঞ্জাবে হিন্দু মন্দিরে হামলা উন্মত্ত জনতার, গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ভগবানের মূর্তি
মন্দির ভাঙচুরের ভিডিও ভাইরাল
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছে লাঠি এবং লোহার রড নিয়ে মন্দিরের কাঁচের দরজা, জানলা আলো ভাঙছে জনতা এবং মূর্তি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। তবে অনেকেই বলছেন এই হিংসার ঘটনার প্রকৃত কারণ হল ভোঙ্গে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যেকার পুরনো বিবাদ।