করোনা সংকটের আবহে গুজরাট মডেলের বদলে কেরল মডেলের পক্ষে সওয়াল রামচন্দ্র গুহের
করোনা সংকটের আবহে গুজরাট মডেলের বদলে কেরল মডেলের পক্ষে সওয়াল রামচন্দ্র গুহের
করোনা আবহে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা। ভারতীয় অর্থনৈতিক পরিকাঠামোও নড়বড়ে হয়ে উঠেছে। এমন অবস্থার মাঝেই বেঙ্গালুরু নিবাসী ঐতিহাসিক ও অর্থনীতিবিদ রামচন্দ্র গুহ জানালেন, "আমাদের কেরল মডেল চাই, গুজরাট মডেল না এবং যেকোনো দিন আমরা এটা গ্রহণ করতে প্রস্তুত।"
কি এই কেরল মডেল?
রামচন্দ্র গুহের মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণে এই 'গুজরাট মডেল'-এর কথা উঠে আসার আগেই প্রায় ১৯৭০ সাল নাগাদ 'কেরল মডেল'-এর নাম শোনা যায়। গত কয়েক দশকে কেরলে জন্মহার নিয়ন্ত্রণ, পুরুষ-নারীর অনুপাত, মহিলাদের শিক্ষার হার বা স্বাস্থ্যব্যবস্থা, প্রায় সবদিক থেকেই ভারতে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল কেরল। সমাজবিদ ও অর্থনীতিবিদদের মতে, কেরলে জাতিভেদ প্রথা যেমন লঘু হয়ে এসেছে তেমনই সংবিধানের ৭৩ ও ৭৪ ধারার প্রয়োগে পঞ্চায়েতগুলি সর্বশক্তি দিয়ে উন্নয়নের কাজে নামতে পেরেছে। ফলত ইউরোপ ও ল্যাটিন আমেরিকার কিছু অঞ্চলের থেকেও এগিয়ে এই ক্ষুদ্র রাজ্য। এদিকে সফল হওয়ার পরই এর কৃতিত্ব কখনও দাবি করে বামপন্থী সরকার, আবার কখনও স্যার নারায়ণ গুরুর সাম্যবাদী অনুগামীরা।
কি এই গুজরাট মডেল?
২০০৭ সালে নরেন্দ্র মোদির বর্ণনায় উঠে আসে গুজরাট মডেল। মোদির মতে, গুজরাট মডেল সবসময়ই কেরল মডেলের থেকে অধিক গুণাবলী সম্পন্ন। রামচন্দ্র গুহর মতে, কেরল মডেল যেভাবে মার্ক্সের নীতি মেনে পুঁজিবাদকে দমন করে জনসাধারণের উন্নতি করেছে, গুজরাট মডেল ঠিক সেভাবেই এসব নীতি না মেনে বেসরকারি লগ্নির মাধ্যমে শিল্পকে উন্নত করে জনসাধারণের ভালো করার লক্ষ্যে তৈরি। মোদির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, গুজরাটকে ভারতের অর্থনৈতিক পাওয়ারহাউস হিসেবে গড়ে তোলা এবং পরবর্তীতে একই মডেলের আওতায় সমগ্র ভারতকে নিয়ে আসা। ফলত দুর্নীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ যুবসমাজ চাকরির আশায় মোদির পাশে এসে দাঁড়ায় এবং ২০১৪-এ নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি আসেন ক্ষমতায়।
কেন ক্রমেই শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পাচ্ছে কেরল মডেল
অর্থনীতিবিদ রামচন্দ্র গুহর মতে, নরেন্দ্র মোদির বহুল প্রশংসার মাঝে গুজরাট মডেলের অন্ধকার দিকগুলি ঢাকা পড়ে যায়। বিরোধীদের চুপ করিয়ে দেওয়া, প্রতিবাদীদের বাক স্বাধীনতা হরণ করা, শাসকদলের সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, সংখ্যালঘুদের বিশেষত মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিরূপ ভাব পোষণ করা, এইসকল কারণে গুজরাট মডেল একটু ভ্রান্ত চিন্তা। মোদি ক্ষমতায় আসার পরে সাম্প্রদায়িকতা, আর্থিক তছরূপের মত ঘটনা প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে যা গুজরাট মডেলের ত্রুটি স্পষ্ট করে বলে মত রামচন্দ্রের। আর এইসকলক কারণেই বিচক্ষণরা ঝুঁকছেন কেরল মডেলের দিকে। রামচন্দ্র গুহর মতে, করোনা মহামারীর কারণেই সবাই বুঝছেন যে কেরল মডেল কেন গুজরাট মডেলের চেয়ে উপযোগী।
শিক্ষার হার অনেক বেশি হওয়ায় জাত-পাত, কুসংস্কার সহজেই এড়ানো সম্ভব হয়
শিক্ষার হার খুবই উচ্চ হওয়ায় কেরলে করোনা মোকাবিলা সহজ হয়েছে প্রশাসনের কাছে। জাতপাতের কড়াকড়ি না থাকায় সকলে সমান চিকিৎসা পেয়েছেন। সচেতনতা কেরলর সব প্রান্তে সমানভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার অসুস্থরা চিকিৎসার আওতায় এসেছেন দ্রুত। গ্রাম পঞ্চায়েত হোক বা রাজ্যের মন্ত্রী, সকলের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভবপর বলেই মানুষের সমস্যার কথা পৌঁছে দেওয়া সহজ। অন্যদিকে, গত কয়েক দশকে কোনোরকম বড়সড় রাজনৈতিক বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার খবর নেই কেরলে।
"কেরলের থেকে অনেক কিছু শেখার আছে"
সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেই রামচন্দ্র গুহ মনে করেন, "কেরলবাসীদের থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।" তিনি কেরল মডেলের চারটি স্তম্ভ হিসেবে বেছে নিয়েছেন - বিজ্ঞান, স্বচ্ছতা, বিকেন্দ্রীকরণ ও সামাজিক সাম্যতা। অপরদিকে গুজরাট মডেলের ব্যর্থতার কারণ হিসেবে তিনি তুলে ধরেছেন চারটি কারণ - অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, কেন্দ্রীকরণ ও সাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনা।
ভাইরাস থাকবে অনেকদিন! এখনও অনেক লড়াই বাকি, করোনা সঙ্কটে সতর্কবাণী হু-র