লাদাখের বুকে রেকর্ড গড়ে বিশ্বের উচ্চতম রাস্তা নির্মাণ ভারতের, চিন সংঘাতের আবহে বাড়ছে স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব
চিন ও ভারত সংঘাতের মধ্যেই লাদাখে স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ নির্মাণ কাজ শুরু করতেই কার্যত তা বেজিং এর ঘাড়ে নাভিশ্বাস ফেলছে। বলিভিয়ার রেকর্ড ভেঙে ইতিমধ্যেই ভারত বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু এলাকায় রাস্তায় নির্মাণ করে ফেলেছে লাদাখে। আর এই নয়া সম্মানের অংশিদার হয়ে ভারত রেকর্ড বুকে নাম তোলার পাশাপাশি কূটনৈতিক দিক দিয়েও বাড়তি সুবিধা পাবে বলে মনে করছেন অনেকে। মূলত, চিন-ভারত সংঘাতের আবহে ভরতের বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন একটি নতুন রাস্তা নির্মাণ করেছে লাদাখের উঁচু এলাকা দিয়ে। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু এলাকায় এটই 'মোটরেবল রোড' হিসাবে পরিচিত হতে চলেছে।
বিআরওর নয়া নির্মাণ
প্রসঙ্গত, বিআরও বা বর্ডার রোড অর্গানাইজেশনের হাত ধরে বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চতম স্থানে ১৯,৩০০ ফুট উপরে লাদাখের বুকে নির্মাণ করা হয়েছে এই রাস্তা। এদিন একটি বিবৃতিতে একথা জানিয়েছে কেন্দ্র। মোদী সরকারের হাত ধরে এই নয়া রাস্তা নির্মাণ কার্যত লাদাখে ভারত-চিন সংঘাতের মধ্যে নয়া স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। মূলত, মাউন্ট এভারেস্ট বেস ক্যাম্পের থেকেও উঁচু জায়গায় রয়েছে এই নয়া লাদাখের এই রাস্তা। এমনকি নেপালের সর্বোচ্চ জায়গায় যে বেস ক্যাম্পটি রয়েছে সেটি সমুদ্রতল থেকে ১৭,৫৯৮ ফুট উঁচুতে। লাদাখের নয়া রাস্তা সেই উচ্চতাকেও এবার ছাড়িয়ে গিয়েছে। নেপালের দক্ষিণে রয়েছে এই নয়া বেসক্যাম্প।
রাস্তার গুরুত্ব
তিব্বতের বেস ক্যাম্প থেকে প্রায় ১৬ হাজার ৯০০ ফুট ওপরে অবস্থিত লাদাখের এই নয়া রাস্তা। এক বিশাল আকারের কমার্শিয়াল বিমান উড়তে পারে ৩০ হাজার ফুট ওপরে। এই রাস্তা ৩০ হাজারের অর্ধেক উচ্চতার বেশি। ফলে বিমানের চলাফেরার নিরিখে এই রাস্তার উচ্চতার গুরুত্ব স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রসঙ্গত, এই রাস্তার বিশেষত্ব হল, বিশ্বের বহু উঁচু জায়গায় রাস্তা রয়েছে ঠিকই, তাতে গাড়ি চলাফেরার সুবিধা সেভাবে নেই। তবে লাদাখের এই রাস্তায় তা রয়েছে। ফলে এই রাস্তা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু এমন এক রাস্তা যেখানে সহজেই গাড়ি চলাফেরা করতে পারবে। যা নিঃসন্দেহে বড় ঘটনা। এর আগে গত ২০২০ সালের ৫ মে লাদাখে চিনের আগ্রাসন দেখা যায়, মুহূর্তে পাল্টে যেতে থাকে পরিস্থিতি। চিনকে পাল্টা জবাব দেয় ভারতও। সংঘাতের রেশ কার্যত শীতের আগে পর্যন্ত চলে। যদিও এবার ধীরে ধীরে লাদাখের একাধিক স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্ট থেকে সেনা প্রত্যাহারে রাজি হয়েছে চিন। যা কার্যত লাদাখে শান্তি প্রক্রিয়ায় বড় ঘটনা।
বলিভিয়ার রেকর্ড ভেঙে নয়া রেকর্ড
১৯,৩০০ ফুট উঁচু এই রাস্তা উমলিঙ্গা পাসে তৈরি হয়েছে। লাদাখের বুকে মনোরম সৌন্দর্যের অধিকারী এই উমলিঙ্গা পাস। এর আগে, বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চতম এলাকায় বলিভিয়া তৈরি করেছিল রাস্তা। বলিভিয়ার তৈরি রাস্তার উচ্চতা ১৮,৯৫৩ ফুট। সেই রেকর্ড ভেঙে এবা উমলিঙ্গা পাসের রাস্তার হাত ধরে বিশ্বের দরবারে নয়া রেকর্ড গড়ছে ভারত।
লাদাখের রাস্তা ও স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব
জানা গিয়েছে , লাদাখের ওপারে চিন সেদেশের বুকে সবচেয়ে উঁচু এলাকায় গড়ছে এক অত্যাধুনিক বিমানবন্দর। যে বিমানবন্দরের আন্ডারগ্রাউন্ডে রয়েছে বিশেষ কিছু সুবিধা। কার্যত এই বিমানবন্দরের সুবিধা নিয়ে বেশ ফোকাসে রয়েছে দিল্লি। সাম্প্রতিক কালে এক মিডিয়া রিপোর্টে প্রকাশিত এক স্যাটেলাইট ছবিতে ধরা পড়েছে এই উচ্চতম স্থানে বিমানবন্দরের ছবি। লাদাখের বুকে চিনের এই কর্মকাণ্ডে ওয়াশিংটনেও সাড়া ফেলেছে।তারপরই ভারতের বুকে এই উমলিঙ্গা পাসের রাস্তা রীতিমতো গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রসঙ্গত, উমলিঙ্গা পাস লাদাখের ব্ল্যাক টপ রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত। যে ব্ল্য়াকটপ চিন-ভারত সংঘাতের মাঝে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। ফলে এই এলাকায় নয়া রাস্তা নির্মাণ লাদাখের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতিকে সুস্থির করছে। শীতকালে এই এলাকায় মাইনাস ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকে, এখানে অক্সিজেনের পরিমাণও কম থাকে। ফলে এই এলাকা দিয়ে যাতায়াতে বাসিন্দাদের খুবই অসুবিধা হয়। তবে নয়া রাস্তা চিন ভারত সংঘাতের আবহে যেমন নয়া 'পথ' দেখাবে ভারতের স্ট্র্যাটেজিক কূটনীতিকে, তেমনই তা এলাকারও উন্নয়ন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।