জোর দেওয়া হোক সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থায়, ভারতে প্রাণ বাঁচবে ৩০ হাজার মানুষের, মত সমীক্ষার
ভারতে পথ দুর্ঘটনা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন কোণায় কেউ না কেউ এই পথ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। সম্প্রতি ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করা হলে প্রত্যেক বছর দেশে ৩০ হাজার প্রাণকে বাঁচানো যেতে পারে। এই জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষা জানিয়েছে যে গতি, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, হেলমেট ও সিটবেল্ট না পরার গাফিলতি এই চারটে প্রধান কারণকে যদি সনাক্ত করা যায় তবে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু অনেক হ্রাস পাবে।
সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় জোর
গবেষকরা দেখেছেন যে দেশে গতি পরীক্ষা যদি পরীক্ষা করা হয় তবে ২০,৫৫৪ জনের প্রাণ বাঁচতে পারে। অন্যদিকে, হেলমেটের প্রচার যদি সঠিকভাবে হয় তবে দেশে ৫,৬৮৩ প্রাণ বাঁচতে পারে। অপরদিকে, সিটবেল্ট ব্যবহারে উৎসাহিত করলে দেশে ৩,২০৪টি জীবন বাঁচানো যেতে পারে। মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর পরিসংখ্যান ভারতের জন্য উপলব্ধ ছিল না। এটিই প্রথম সমীক্ষা যা ১৮৫টি দেশের জন্য হস্তক্ষেপের মাধ্যমে চারটি প্রধান সড়ক নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ মোকাবিলা প্রভাবের দেশ-নির্দিষ্ট অনুমান দেয়।
বিশ্বজুড়ে মৃত্যু ১৩.৫ লক্ষ
প্রসঙ্গত, বিশ্বজুড়ে প্রত্যেক বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ১৩.৫ লক্ষ মানুষের। যার মধ্যে নিম্ন ও মাঝারি দেশদুলিতে ৯০ শতাংশের বেশি নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত ল্যানসেট সিরিজ রাজনৈতিক ও আর্থিক প্রতিশ্রুতি বৃদ্ধি এবং সড়ক নিরাপত্তাকে মূলধারার উন্নয়ন নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। ল্যানসেটে উল্লেখিত সমীক্ষা জানিয়েছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও আহতদের সংখ্যা কমিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে।
নিম্ন ও মাঝারি দেশে মৃত্যু বেশি
এই সিরিজের সমন্বয়কারী অধ্যাপক আদনান হায়দার বলেন, 'অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু প্রতিরোধ করা যায়, কিন্তু অতীতের কিছু দশক ধরে দেখা গিয়েছে যে নিম্ন আয়যুক্ত দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু যেমন ক্রমাগত বাড়ছে তেমনি উচ্চ আয়যুক্ত দেশে এই মৃত্যু কমছে।' হায়দার আরও বলেন, 'সড়ক নিরাপত্তার জন্য দ্বিতীয় রাষ্ট্রপুঞ্জের ডিকেড অফ অ্যাকশন (২০২১-২০৩০) চলছে, এই সিরিজের জন্য আমাদের কাজ স্পষ্টভাবে দেখায় যে প্রমাণিত সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ধনী-দরিদ্র সকল দেশেই জীবন বাঁচাতে পারে।' বিশ্বজুড়ে ১৮৫টি দেশে ৭৪টি সমীক্ষার মাধ্যমে উঠে এসেছে যে নিয়মিত হেলমেট ও সিটবেল্ট পরলে, গতিসীমা মেনে চললে ও মদ্যপ অভস্থায় গাড়ি চালানো এড়ালে ৩৪৭,০০০ (৩.৪৭ লক্ষ) থেকে ৫৪০,০০০ (৫.৪ লক্ষ) জীবন প্রত্যেক বছর বাঁচতে পারে। গবেষকরা বলেছেন, সমস্ত দেশ বিভিন্ন মাত্রায় সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধির ফলে উপকৃত হবে।
আমেরিকা ও চিন নিয়েছে উদ্যোগ
উদাহরণস্বরূপ বলা চলে আমেরিকায় ও চিনে সিটবেল্ট পরার ওপর জোর দেওয়ায় এই দুই দেশে প্রত্যেক বছর যথাক্রমে ১৪,১২১ জন ও ১৩,২২৮ জনের জীবন বাঁচে। বাইকে হেলমেট পরা বাড়ানোর সুবিধাগুলি চিনে সবচেয়ে বেশি, বছরে ১৩,৭০৩ জনে জীবন বাঁচে। এরপরই রয়েছে ব্রাজিল (৫,৮০২), এবং ভারত (৫,৬৮৩), যেখানে বাইক চালকের আঘাতের ঘটনার সংখ্যা বেশি রয়েছে, গবেষকদের মতে।