মানবতাই প্রথম, প্রতিদিনই প্রমাণ করছেন হায়দরাবাদের এই যুবক
হায়দরাবাদের যুবক মহম্মদ সুজাতুল্লা প্রতিদিন নিজের অর্থ ব্যয় করে ১০০০ জন অভাবীকে খাওয়ান। আর এভাবেই গড়ে তুলেছেন নিজের সংস্থা হিউম্যানিটি ফার্স্ট ফাউন্ডেশন। প্রতিদিনই বাড়ছে তার কর্মকাণ্ড।
হায়দরাবাদের ২৪ বছরের যুবক মহম্মদ সুজাতুল্লা। প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ তিনি বাড়ি থেকে বের হন। যান কোটি মাতৃসদন হাসপাতালে। সেখানে ৩০০ জন দরিদ্র রোগীর হাতে তুলে দেন খাওয়ার। তারপর যান কলেজে। একদিনও তাঁর এই রুটিনের হেরফের হয় না।
তবে শুধু কোটি মাতৃসদনেই নয়, হায়দরাবাদের নিলোফার হাসপাতালেও তিনি দরীদ্রদের জন্য খাওয়ার পৌঁছে দেন। আর একদিন দুদিন নয়, ২০১৬ সাল থেকেই নিজের পকেটের টাকা খরচ করেই তিনি এই কাজ করে আসছেন। আর এভাবেই গড়ে ফেলেছেন আস্ত একটি সংস্থা - 'হিউম্যানিটি ফার্স্ট ফাউন্ডেশন'। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে অভাবকে দূর করতে চান তিনি। তাঁর কাছে মানবতাই প্রথম।
চলার শুরু
২০১৬ সালে তিনি প্রথম দরীদ্রদের খাওয়ানোর কাজ শুরু করেন। তিনি জেনিয়েছেন নিজের পকেট মানি থেকেই তিনি সেকেন্দ্রাবাদ রেল স্টেশনের কাছে গরীবদের জন্য ভাত ও সব্জি বিতড়ন করতেন। তিনি জানিয়েছেন, যেভাবে ক্ষুধার্ত মানুষগুলো দুমুঠো খাওয়ারের আশায় তাঁর দিকে ছুটে আসত, তাতে তিনি বিস্মিত হয়ে যান। তারপর থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি এই কাজেই তিনি নিজেকে ন্য়স্ত করেন।
হিউম্যানিটি ফার্স্ট ফাউন্ডেশন
মানবতার শিক্ষা সুজাতুল্লা পেয়েছেন তাঁর বাবা-মায়ের থেকেই। কিন্তু সুজাতুল্লা যখন ঠিক করেন পড়াশোনার পাশাপাশি এই সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবেন তখন ছেলের জন্য চিন্তায় পড়েছিলেন সেই বাবা-মা'ই। তাঁরা সুজাতুল্লাকে বোঝান পড়াশোনা শেষ করে, চাকরি পেয়ে, বিবাহ করে, অবসরের পর দানধর্মী কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য। সুজাতুল্লা অবশ্য নিজের সিদ্ধান্তে অটুট থাকেন। এখন গর্বিত বাবা-মা'ও তাঁকে যতটা সম্ভব সাহায্য করেন। সাহায্যের হাত বাডড়িয়ে দিয়েছেন পরিচিত আরও কেউ কেউ। এভাবেই গড়ে উঠেছে তাঁর নিজের সংস্থা, 'হিউম্যানিটি ফার্স্ট ফাউন্ডেশন'।
দরীদ্রদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাওয়ার
দরীদ্রদের
খাওয়াবেন
বলে
যেমন
তেমন
খাওয়ার
কিন্তু
আনেন
না
সুজাতুল্লা।
সকালে
কোটি
ও
নিলোফার
হাসপাতালে
রোগীদের
একেবারে
খাঁটি
ঘি
দিয়ে
তৈরি
উপমা
সরবরাহ
করেন
তিনি।
সঙ্গে
থাকে
চাটনি।
পদ্মরাও
নগরের
এক
হোটেলে
১০০০
জনের
জন্য
রান্না
করা
হয়
সেই
খাওয়ার।
সুজাতুল্লার
জন্য
কিছুটা
কম
দামেই
তাঁরা
সে
কাওয়ার
তৈরি
করে
দেন।
তাও
প্রতিদিন
প্রায়
২০
কেজি
খাওয়ারের
জন্য
গড়ে
লাগে
সাড়ে
৩
হাজার
টাকা।
এছাড়া
প্লাস্টিকের
বাটি
চামচের
জন্য
খরচ
হয়
আরও
৫০০
টাকা।
ফাউন্ডেশনের অন্যান্য কাজ
দরীদ্রদের সকাল-বিকেল খাওয়ার দেওয়া ছাড়াও সুজাতুল্লার সংস্থা দিন দিন তার সামাজিক কর্মকাণ্ডের পরিসর বাড়াচ্ছে। অনাথ আশ্রমের শিশু, বা প্রতিবন্ধী মানুষদের পাশেও দাঁড়িয়েছে হিউম্যানিটি ফার্স্ট ফাউন্ডেশন। সুজাতু্ল্লাহ তাঁর ফাউন্ডেশনকে নিয়ে পৌঁছে যান এসব জায়গায়। সেখানকার বাসিন্দাদের খাওয়ান, তাদের সঙ্গে সময় কাটান। নানাভাবে তাদের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটান। জামাকাপড় থেকে শুরু করে চাল, ডাল, তেল, নুনের মতো জিনিসও বিতড়ন করা হয়। অর অনাথ আশ্রমের শিশুদের জন্য বাড়তি থাকে চকোলেট ও খেলনা।
বস্তিতে মেডিক্যাল ক্যাম্প
ভারতে জনস্বাস্থ্যের বেহাল দশা। বিশেষ করে বস্তি এলাকায় বাস করা দরীদ্র মানুষগুলি অনেকসময়ই চিকিৎসার সুবিধা পান না। হিউম্যানিটি ফার্স্ট ফাউন্ডেশন কিন্তু বস্তি এলাকাগুলিতে মাঝে মাঝেই মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করে। সেখানে জেনারেল ফিজিশিয়ানরা থাকেন, থাকেন দাঁতের বা চোখের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররাও। চিকিৎসার পাশাপাশি ওষুধও মেলে বিনামূল্যে।
ফুটপাথবাসীদের জন্য
এছাড়াও ফুটপাথে রাত কাটানো মানুষগুলির জন্যও আলাদা উদ্যোগ নিয়েছে সুজাতুল্লার ফাউন্ডেশন। শীতকালে গরীব মানুষদের মধ্যে কম্বল বিতড়ন তো আছেই। তার সঙ্গে রয়েছে সংগঠনের 'প্রোজেক্ট ট্রান্সফরমেশন'। ফুটপাথের ভবঘুরেদের চুল দাড়ি কেটে, তাদের স্নান করিয়ে, পরিষ্কার জামাকাপড় পরিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখান সুজাতুল্লা। বয়স্ক মানুষদের সেষ জীবনটা কাটানোর জন্য বেশ কিছু বৃদ্ধাশ্রমের সঙ্গেও চুক্তি করেছে হিউম্যানিটি ফার্স্ট।