বালাকোট হামলার তিন বছর, শত্রুকে ভারতের উপযুক্ত জবাব ছিল এয়ার স্ট্রাইক
বালাকোট হামলার তিন বছর, শত্রুকে ভারতের উপযুক্ত জবাব ছিল এয়ার স্ট্রাইক
১৪ ফেব্রুয়ারি। গোটা দেশে ভালোবাসার দিন হিসেবে উদযাপিত হয়। ২০১৯ সালের আগে পর্যন্ত এমনটাই করা হত। কিন্তু ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভূস্বর্গে ঘটে গিয়েছিল সেই নক্কারজনক ঘটনা। ভূস্বর্গ বলে পরিচিত কাশ্মীরকে মৃত্যু উপত্যকা বললেও কম বলা হত সেই ঘটনার পর। পুলওয়ামার অবন্তীপোড়ায় বরফের সাদা রঙ বদলে গিয়েছিল রাঙা রক্তে। আর এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ১২ দিনের মাথায় আকাশপথে পাক সীমান্ত অতিক্রম করেছিল ১২ মিরাজ ২০০০। পাকিস্তানে ঢুকে জৈশের তিনটি ঘাঁটি ধুলিস্যাৎ করেছিল ভারতীয় যুদ্ধবিমান। ভোররাতের স্ট্রাইকের পিছনে ছিল প্রায় ২০০ ঘণ্টার নিখুঁত পরিকল্পনা। আকাশপথে বোমাবর্ষণ করে যুদ্ধবিমানের সফলতার তিনবছর পূর্তি হল শনিবার, অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি।
অপারেশন বান্দর
বালাকোট, মুজাফফরবাদ পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ভিতরে ঢুকে আক্রমণ করেছিল ভারত। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ২ বা এয়ার স্ট্রাইক হিসেবে পরিচিত এটি। ভারতের এই অভিযানের পোশাকি নাম ছিল অপারেশন বান্দর যার ফলে বিরাট সংখ্যক জঙ্গী নিকেশ করার ঘটনা সামনে আনে ভারত। তাঁদের মধ্যে ছিল জঙ্গি প্রশিক্ষক থেকে জেএম সন্ত্রাসী, প্রশিক্ষিত জিহাদিরা। এই ঘটনায় ইউসুফ আজহারের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছিল ভারত। ভারত সরকার বলেছিল, মাসুদ আজহারের নেতৃত্বাধীন জেইএম ভারতের বিভিন্ন অংশে সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা করছিল। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ধূলিসাৎ হওয়া জঙ্গি ঘাঁটিগুলোতে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। তাই সে গুলোকে ধ্বংস করা আগে প্রয়োজন ছিল।
টার্গেটে জইশ
ইউসুফ আজাহার ও মাসুদ আজহার বালাকোটের ওই শিবিরগুলোতে নেতৃত্বের দায়িত্বে ছিল। ইউসুফ আজহার নামটি নিয়ে চর্চা শেষ নেই। ভারতীয় বিমানবাহিনীর হানায় যে জঙ্গি বলে নিশ্চিত করেছে ইউসুফ তাঁর প্রধান। কান্দাহার বিমান ছিনতাইয়ের অন্যতম কুশীলব ছিল সে। সেই ২০০২ সালে দিল্লি ইসলামাবাদের কাছে কুড়িজন মোস্ট ওয়ান্টেড এর নাম পাঠিয়েছে। সেই কুড়ি জনের মধ্যেই একজন ইউসুফ আজাহার।
মিরাজের গর্জন
ভারত পরিকল্পনা করে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলোকেই নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। সাধারণ মানুষের যাতে ক্ষতি না হয় সেই জন্যই ভোররাতের দিকে সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল মিরাজ। সন্ত্রাস ঘাঁটিগুলোকে ভারত যে ধ্বংস করতে সফল হয়েছে তা কখনো মানতে চায়নি পাকিস্তান। আচমকা গভীর রাতে পাকিস্তানের আকাশ সীমা অতিক্রম করার ঘটনায় যথেষ্ট বিব্রত হয়েছিল ইসলামাবাদ। এই ঘটনার পর ভারত পাকিস্তানের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। প্রতিশোধ নিতে পিএএফ বিমান পাঠিয়েছিল ইসলামাবাদ । কিন্তু সেখানেও মুখ পোড়ে পাকিস্তানের।
বীরত্বের অভিনন্দন
সীমান্ত লঙ্ঘনকারী পাক বিমান এফ-১৬ কে তাড়া করতে গিয়ে পাক সীমান্তের ঢুকে পড়েছিলেন বায়ুসেনার বিগ কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। তাঁর বিমাণে গুলি লাগার পর তিনি পতিত হন পাকিস্তানের সীমান্তে। সেখানেই তাঁকে আটক করা হয়। পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়লেও কোন নথি তিনি তুলে দেন নি শত্রুদের হাতে। আমি এই কথা বলতে বাধ্য নই, অভিনন্দনের সেই উক্তি চিরদিনের জন্য লেখা হয়ে আছে দেশের গৌরব গাথায়। শনিবার সেই এয়ার স্ট্রাইকের তথা শত্রুদের বিরুদ্ধে ভারতের গৌরবময় বিজয়ের তৃতীয় বছর। আরও একবার স্মরণ করার পালা দেশের সীমান্তের প্রহরী তথা ভারত মায়ের সেইসব বীর সন্তানদের অপরিসীম সাহস আর কঠিন আত্মত্যাগের কথা, যাঁদের জন্য দেশবাসী নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন।
কীভাবে বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের জন্য নিজেদের তৈরি করেছিল ভারতীয় সেনা? জেনে নিন