মহারাষ্ট্রের জেলে ভূতের উপদ্রব! তাড়াতে এলেন যুক্তিবাদী দিদিমা
জেলবন্দীদের সামলানোটা এমনিতেই দুরুহ কাজ। সেই কাজটাই আরও কঠিন হয়ে পড়েছে মহারাষ্ট্রের কারারক্ষীদের জন্য। শুধু বন্দীদেরই নয় কারাগারে কারাগারে তাঁদের সামলাতে হচ্ছে ভূতও! ওয়ার্ডেনরা জানিয়েছেন প্রায়শয়ই অনেক বন্দী অভিযোগ করেন তাঁর সেলে ভূত আছে। এই ঝামেলা দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে ভূত তাড়াতে ওঝা নয়, ডাকা হয়েছে একদল যুক্তিবাদী ভূততাড়ানেকে।

মুম্বইয়ের আর্থার রোড জেল থেকে শুরু করে বাইকুল্লা, থানে, পুনে, নাশিক - মহারাষ্ট্রের প্রায় সব জেল থেকেই রাতে ভূত দেখার অভিযোগ আছে। ওয়ার্ডেনরা জানিয়েছেন, কেউ কেউ অভিযোগ করেছে রাতে ঘুঙুরের শব্দ শোনা যায়, কেউ বলেছেন দেওয়ালে অশরীরী ছায়া দেখা যায়, কেউ আবার বলেছেন ভূতেরা তাদের শরীরে ঢুকে অত্যাচার করে। কোথাও কোথাও আবার শোনা যায় মধ্যরাতের পর তিন চোখ ওয়ালা, লম্বা চুলের সাদা কাপড় পড়া এক মহিলার ছায়ামূর্তি ঘুরে বেড়ায়। তার পায়ের পাতা কখনও থাকে পিছনের দিকে ঘোরানো, কখনও বা সাপের মতো আকার ধারণ করে।
একবার কল্যান জেলে এক মহিলা জানিয়েছিলেন রাতে তার উপর ভূতের ভর হয়। প্রত্যেক রাতেই তার জন্য তার ঘুম হয় না। জেলের বিভিন্ন প্রান্তে তাকে ছুটিয়ে নিয়ে বেড়ায় সে ভূত। তাই সকালে সে উঠতে চাইত না, অন্যান্য বন্দীদের সঙ্গে রুটিন মেনে কাজও করত না। বাইকুল্লা মহিলা জেলের সুপার অরুণা মুগুতরাও জানিয়েছেন, অমাবস্যা বা নবরাত্রীর রাতে বন্দীদের মধ্যে এই ধরণের ভীতি প্রবল হয়ে ওঠে। একবার তাঁর জেলে এক মহিলাকে ভূত তাড়ানর জন্য বাকি বন্দীরা প্রবল প্রহার করছিলেন, তাঁর হস্তক্ষেপে মহিলা বেঁচে যান।
এবার এই ধরণের ঝামেলা থেকে মুক্ত হতে একদল যুক্তিবাদী সংস্থা মহারাষ্ট্র অন্ধশ্রদ্ধা নির্মোলন সমিতিকে ডাকা হয়েছে। বিজ্ঞানের সহায়তায় যুক্তি দিয়ে অতিলৌকিক ঘটনা ব্যাখ্যা করাই তাদের কাজ। আর তাদের নেত্রী হলেন ৭২ বছরের বন্দনা সিন্দে, যাঁকে জেলের বন্দীরা অধিকাংশ দিদিমা বানিয়ে ফেলেছেন। একের পর এক জেলে গিয়ে তাঁরা এইসব অতিলৌকিক মিথগুলি ভাঙার কাজ করছেন।
সিন্দে জানান, 'ভূত অন্ধবিশ্বাস জন্ম নেয় কিছু তথ্য আর কিছু কল্পনা থেকে। এই বন্দীরা অধিকাংশই সমাজের প্রান্তিক মানুষ। যুক্তি দিয়ে ভাবতে তারা শেখেনি। যা তারা শোনে বা দেখে তার বেশিরভাগটাই প্রচলিত গল্প কাহিনী নির্ভর।' কাজেই তাদের অন্ধত্ব দূর করতে তিনি তাঁর দলবল নিয়ে জেলে জেলে ঘুরে বন্দীদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করছেন।
পেরেকের শজ্জায় শুয়ে থাকা, ভর হওয়ার মতো তিনি কোনও একটি অতিলৌকিক ঘটনা প্রথমে বন্দীদের সামনে করে দেখান। তারপর তের পেছনের বিজ্ঞানের খেলাটি ফাঁস করে দেন। এভাবেই ধীরে ধীরে বন্দীদের বিশ্বাস অর্জন করেছেন বন্দনা সিন্দে। গত মাসেই এক জেলে দুই বন্দী তাদের চোখ উল্টে, তাদের উপর ভর হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। সিন্দে গিয়ে তাদের সেই বুজরুকি ধরিয়ে দেন।
তাঁর মতে জেলে বাকিদের থেকে কিছুটা সমিহ আদায় করে নেওয়ার জন্যই কোনও কোনও বন্দি এইসব নাটক করা থাকেন। মুখে মুখে ছড়িয়ে তাই গণ হিস্টিরিয়া তৈরি করে। সিন্দের ওয়ার্কশপের পর বন্দীদের সাইকোথেরাপিও করা হচ্ছে। জেলের ভূত তাড়িয়েই ছাড়বেন দিদিমা।