আবহাওয়ার চরম পরিস্থিতির জের , প্রভাব পড়ছে দেশের খাদ্য শস্যের উপর
বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। ক্রমে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ভারতেও এর প্রভাব স্পষ্ট। বেড়েই চলেছে সাইক্লোনের পরিমাণ। বৃষ্টি হলে তা ভাসিয়ে দিচ্ছে শহর থেকে গ্রাম। আবার বজ্রপাত হলে তা মানুষের প্রাণ কাড়ছে। যেমন এই বছর দিল্লিতে তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছিল ৫০ ডিগ্রির কাছে। আবার তারপরেই প্রবল বৃষ্টি সঙ্গে প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগে নাগাড়ে ঝড় হয়।
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে প্রায় আড়াই কেজি ওজনের শিলা পড়তে দেখা গিয়েছিল। প্রায় ৭০০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এই দুর্যোগে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা বলছেন, আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে এমন দুর্যোগে কোনও বছর কম হয় কোনও বছর বেশি কিন্তু যদি ট্রেন্ড দেখা যায় তাহলে দেখা যাবে এই দুর্যোগের পরিমাণ বাড়ছে। আগে সম্ভাবনা তৈরি হত কিন্তু সবসময় তা মানুষের উপর প্রভাব ফেলত না এখন সেটা হচ্ছে। এই যে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বেড়ে যাওয়া দেশের খাদ্য শস্যের উপর বড় প্রভাব ফেলছে বলে জানা যাচ্ছে।
কী বলছেন বিজ্ঞানীরা ?
বিজ্ঞানীরা বলছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে দেশে চরম আবহাওয়ার পরিস্থিতি ঘন ঘন ফলপ্রসূ হচ্ছে। এর কারণে এই বছর দেশে বেশ কিছু ফসলের উৎপাদন কমেছে, ফল ও সবজির দাম বেড়েছে বলে জানা গিয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রক কী বলছে ?
খাদ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, টমেটোর গড় খুচরো মূল্য, এক মাস আগের থেকে ৭০ শতাংশ বেড়ে ২ জুন পর্যন্ত প্রতি কিলোগ্রামে ৫৩.৭৫ টাকা হয়েছে। এটি এক বছর আগের তুলনায় ১৬৮% বৃদ্ধি পেয়েছে।অন্ধ্রপ্রদেশ এবং কর্ণাটকের মতো রাজ্যগুলি থেকে টমেটোর সরবরাহ কমেছে বলে জানা গিয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে দেশ জুড়ে। যোগান নেই, চাহিদা আছে। তাই স্বাবাভিক কারণেই বাড়ছে দাম।
ক্ষতি লেবুতে
জানুয়ারিতে বেশ কয়েকটি রাজ্যে ফুল আসার সময় অসময়ের বৃষ্টিতে লেবু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তারপরে, মার্চ-এপ্রিল মাসে ফসল কাটার সময় তাপপ্রবাহের ফলে উৎপাদন কমে যায়। এপ্রিল মাসে, লেবুর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে ২০০ টাকা প্রতি কিলো পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল, যা মানুষকে অবাক করেছে। এদিকে খাদ্য মুল্যে মূল্যস্ফীতিও হয়েছে। এক বছর আগের থেকে এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতি আট বছরের সর্বোচ্চ ৭.৭৯% এ পৌঁছে যাওয়ায় মানুষের খরচা বেড়ে গিয়েছে।
ফলের রাজা আম। তার উৎপাদন এই গ্রীষ্মে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ২০% কমে গিয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। "উত্তর প্রদেশে ফলন প্রায় ২০% কম এবং গুণমানও কমে গিয়েছে," , এমনটাই বলেছেন হাজি কলিমুল্লাহ খান, যিনি "ভারতের ম্যাঙ্গো ম্যান" হিসাবে পরিচিত৷ ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে ভারী বৃষ্টি হয় তার ফলে যখন আম গাছে ফুল আসে তা ক্ষতি হয় এবং গ্রীষ্মের শুরুতে যখন ফল আসে তখন তাই ফলন কমে যায়।
Recommended Video
জলবায়ু পরিবর্তন
"জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে বৃষ্টির দিনের সংখ্যা হ্রাস পাবে তবে বৃষ্টিপাতের মোট পরিমাণ একই থাকবে," বলেছেন কেজে রমেশ, আইএমডি-র প্রাক্তন প্রধান৷ এর মানে কম সময়ে বেশি বৃষ্টি। এর প্রভাব পড়ছে খাদ্যের উপর।
মার্চ মাসে, পাঞ্জাবের মতো রাজ্যে ১২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ গ্রীষ্মে গমের উৎপাদন আনুমানিক ৪.৭% কমে ১০৬ মিলিয়ন টন হয়েছে, যা ভারতকে গত মাসে রপ্তানি নিষিদ্ধ করতে প্ররোচিত করেছিল। এই নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যাপী দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার মুদ্রাস্ফীতির পূর্বাভাস বাড়িয়েছে। বলেছে যে এটি ২০২৩ আর্থিক বছরে-এ মূল্যস্ফীতি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ৫.৭%-এ পৌঁছবে, যা আগের পূর্বাভাস ৪.৫% থেকে বেড়েছে৷ এপ্রিলে খাদ্যের দাম রেকর্ড ৮.৩৮% বেড়েছে। ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে সংকট আরও খারাপ হয়েছে, যা গম, সার, ভোজ্য তেল এবং পশুখাদ্যের ঘাটতি তৈরি করেছে। ভোজ্য তেলের দাম বছরে ৮-১৩% বেড়েছে।
অন্যদিকে, দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে ভারী বৃষ্টি খাবারের ট্রাকগুলিকে আটকে দিয়েছে, ফলে সেখান থেকে দাম বেড়ে গিয়েছে।