বাঙালি বিজ্ঞানীর হাত ধরে ভূমিকম্পের রহস্য সন্ধান
ভূমিকম্পের রহস্য সন্ধানে বাঙালি বিজ্ঞানী। মহারাষ্ট্রের কোয়েনা বাঁধের কাছে গোথান মালভূমিতে প্রায় ৩০৫১ ফুট উঁচু পাহাড় ঘেরা জায়গায় রহস্য সন্ধানে মগ্ন ভূপদার্থবিদ সুকান্ত রায়
ভূমিকম্পের রহস্য সন্ধানে বাঙালি বিজ্ঞানী। মহারাষ্ট্রের কোয়েনা বাঁধের কাছে গোথান মালভূমিতে প্রায় ৩০৫১ ফুট উঁচু পাহাড় ঘেরা জায়গায় রহস্য সন্ধানে মগ্ন ভূপদার্থবিদ সুকান্ত রায়।
জায়গাটি এশীয় কৃষ্ণসার হরিণ ও বুনো শুয়োরের বিচরণ ভূমি হলেও বর্তমানে বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণের জায়গা।
এখানে খনন করা হচ্ছে ৫ হাজার মিটার গভীর গর্ত। এর চেয়েও গভীর গর্ত আগেও হয়েছে। রাশিয়ায় ১২ কিমি গভীর, জার্মানিতে প্রায় ৮ কিমি গভীর গর্ত খোঁড়া হয়েছিল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের জন্য। ভারতে ওএনজিসি হিমাচল প্রদেশে ৬ কিমি গভীর গর্ত খুঁড়েছিল খনিজ তেল অনুসন্ধানে। সেগুলি ছিল নরম মাটিতে। কিন্তু কোয়েনায় এই গর্ত খুঁড়তে নরম মাটি নেই। পুরোটাই পাথর। গর্তগুলির সর্বোচ্চ ব্যাস ২৬ ইঞ্চি।
গোথানের ১০ কিমির মধ্যে রয়েছে, ১৯৬২ সালে তৈরি কোয়েনা বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বরে এখানেই রিখটার স্কেলে ৬.৩ মাত্রার বিধ্বংসী ভূমিকম্প হয়েছিল। সেই ভূমিকম্পে ১৭৭ জন মারা যান, আহত হয়েছিলেন ২০০০ জনের বেশি ।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজনে পাহাড়েই বড় জলাধার তৈরি করা হয়। এর ফলে ভূত্বকে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ওই অতিরিক্ত চাপই ভূমিকম্পের কারণ বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ হর্ষ কে গুপ্তার মতে, কোয়েনাই হল ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণের জন্য বিশ্বের সেরা জায়গা। এটি পৃথিবীর নিয়মিত ভূমিকম্পের হটস্পট। ১৯৬৭ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত এই এলাকায়, হাজারবার ভূমিকম্প হয়েছে। রিখটার স্কেলে ৫ থেকে ৫.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে ২২ বার, রিখটার স্কেলে ৪-এর থেকে বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে ৪০০ বারের মতো। শেষ ভূমিকম্পটি হয় এবছরের ৩ জুন, মাত্রা ছিল ৩.৮। ভূমিকম্পের উৎসগুলির সবই ভূপৃষ্ট থেকে ২ থেকে ১০ কিমি গভীরে।
২০১২ সাল থেকে এখানে কাজ চলছে। ২০১২ থেকে ২০১৪-র মধ্যে এলাকার নটি জায়গায় মাটির নিচে ১.৫ কিমি পর্যন্ত গর্ত করা হয়েছিল। এরপর আরও গভীরে ঢোকার চেষ্টা। গত জুনে মাটির নিচে ৩ কিমি পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব হয়েছে। যেখানকার তাপমাত্রা প্রায় ৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। বর্ষার পর বোরহোল দিয়ে থার্মোমিটার, সিসমোমিটার, স্ট্রেসমিটার মাটির নিচে পাঠিয়ে নানা পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ডক্টর সুকান্ত রায়। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, সামনের বছরেই ৫ কিমি নিচে পর্যন্ত পৌঁছনোর চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আমেরিকায় স্যান আন্দ্রেজ-এ ভূমিকম্প জোনের গভীরে সেখানকার বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ ভারতীয় বিজ্ঞানীদের অনুপ্রেরণা দিয়েছে।