দেশজুড়ে লকডাউনে বিয়ে সারলেন এই যুগল, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা ইন্টারনেটে সারলেন ভার্চুয়াল কন্যাদান
করোনা সংক্রমণের জেরে এ বছর বহু শুভকাজই পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে বা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বিবাহর মতো বড় অনুষ্ঠানের কাজও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে অনেকে, কারণ করোনা সংক্রমণের জেরে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। তবে এই লকডাউনের আবহাওয়াতেও অনেকে যুগল এমনও রয়েছেন যাঁরা ডিজিটাল বিয়ে সেরে নিচ্ছেন।
একশো অতিথি নিয়ে জুমেই হল বিয়ে
২৬ বছরের সুশেন ডাঙ্গ ও তাঁর বাগদত্তা কীর্তি নারাঙ্গ ভেবেছিলেন যে সকলে মনে রাখবে এমন স্বপ্নের বিয়ে তাঁরা করবেন। কিন্তু বাস্তব দেখালো অন্য চিত্র। জঙ্গলের মাঝে রিসর্টে কয়েকদিন ধরে একশো জন অতিথি ককটেল পার্টি ও খাওয়া-দাওয়া, নাচ-গানে মেতে থাকবেন। তার বদলেওই যুগলের বিয়ে হল ভিডিও কনফারেন্স অ্যাপ জুমে। জ্যোতিষিদের দ্বারা নির্ধারিত তাঁদের বিয়ের দিনটি করোনা ভাইরাসের জেরে দেশজুড়ে চলা লকডাউনের মধ্যে পড়েছিল।
ডিজিটাল কন্যাদান, সাত পাক ঘুরে সম্পন্ন হল বিয়ে
মুম্বই থেকে নিজের অভিভাবককে সঙ্গে নিয়ে সুশেন জুমের পর্দায় আসেন। তাঁর মাথায় ছিল মায়ের লাল ওড়না দিয়ে বাঁধা ঐতিহ্যশালী পাগড়ি। পেশায় মেকআপ আর্টিস্ট নারাঙ্গ বহু ক্রোশ দূরে মধ্য ভারতের বরেলি থেকে অনলাইন হন, তাঁর পরনে ছিল মায়ের বিয়ের লহেঙ্গা। পুরোহিত বসেছিলেন আর এক শহরে, রায়পুরে। তিনি পবিত্র আগুনের সামনে বসে বিয়ের মন্ত্র পড়ছেন এবং হবু বউয়ের বাবাকে এরপর ‘ডিজিটাল কন্যাদান' করতে বলেন। একশো জন অতিথি নিজেদের বাড়িতে বসেই জুমে এই বিয়ে দেখেন এবং নবদম্পতিকে আশীর্বাদও দেন। শুধু তাই নয় বলিউডের হিট গানের সঙ্গে অতিথিরা এরপর নাচতেও শুরু করেন। টরোন্টোর কম্পেটেটিভ ইন্টালিজেন্স অ্যানালিস্ট সুশেন ডাঙ্গ বলেন, ‘এমনকি আমাদের বন্য স্বপ্নেও আমরা ভাবিনি যে আমাদের বিবাহটি এরকম অনন্য হয়ে উঠবে।'
ভারতে বিয়ে এখন ব্যয়বহুল
করোনা মহামারি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বে বহু ইন্ডাস্ট্রির বেহাল দশা হয়। তার মধ্যে ভারতের ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিয়ের ইন্ডাস্ট্রিতে মহামারির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে কারণ বিয়ের মরশুমের সময়ই অধিকাংশ বিয়ের কাজ স্থগিত করে দেওয়া হয়। জ্যোতিষ বা পুরোহিত দ্বারা বিয়ের শুভদিন ঠিক হওয়ার পরও সেগুলি সম্পন্ন হচ্ছে জুম, ইউটিউব বা গুগল হ্যাঙ্গআউটের মাধ্যমে। বাড়ি কেনার মতো দামি হয়ে গিয়েছিল হোটেল বুকিং ও ক্যাটারিং পরিষেবাগুলি। সরকার যা বহু বছর ধরে চেষ্টা করেও পারেনি করোনা ভাইরাস তা করে দেখিয়েছে। ভারতের পরিবারগুলি, এমনকী দরিদ্ররাও নিজেদের সন্তানের বিয়ে দেওয়ার সময় খরচার কথা ভাবেন না, নিজেদের সারা জীবনের সঞ্চয় অথবা ব্যাঙ্ক থেকে মোটা ঋণ নিয়েও তাঁরা সন্তানের বিয়ে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে চান। গরীবদের বাদ দিয়ে বিশ্বের মানুষ এমন কিছু ব্যয়বহুল বিয়ের সাক্ষী রয়েছেন। এক বছর আগে কোটিপতি মুকেশ আম্বানির মেয়ে ইশা আম্বানির বিয়েতে খরচ হয়েছিল ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে যুক্ত ছিল হিলারি ক্লিনটন, বিয়ন্সের মতো ভিভিআইপি অতিথিদের জন্য ব্যক্তিগত বিমান। বিয়ন্সে সহ বলিউডের অনেকেই ইশার সঙ্গীতে নাচ করেছিলেন।
সব পরিকল্পনা বদলে গেল লকডাউনের কারণে
ডাঙ্গ ও নারাঙ্গ পরিবার ভেবেছিলেন যে তাঁদের সন্তানদের বিয়েতে একমাস ধরে অনুষ্ঠান করবেন। লোভনীয় সুস্বাদু খাবারের সঙ্গে প্রত্যেক অতিথিকে উপহার দেওয়া হবে, বিয়ের দিন বর ঘোড়ায় না এসে বাইকে করে আসবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু লকডাউনের জন্য সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। ডিজিটাল বিয়েতে যে যার বাড়িতে বসেই এই যুগলের বিয়ে উপভোগ করলেন।