আতঙ্কিত নয়, মাস্ক–সামাজিক দুরত্বের মতো পুরনো অভ্যাস বজায় রাখার আবেদন বিজ্ঞানীদের
আতঙ্কিত নয়, মাস্ক–সামাজিক দুরত্বের মতো পুরনো অভ্যাস বজায় রাখার আবেদন বিজ্ঞানীদের
ব্রিটেনে নয়া কোভিড স্ট্রেন এবার ভারতেও দেখা দিল। ব্রিটেন ফের ৬ জন যাত্রীর শরীরে মিলেছে ব্রিটেনের এই নতুন ভাইরাস। তবে মঙ্গলবার বিজ্ঞানীরা আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন এই নতুন ভাইরাস ক্লিনিকালি অতটা গুরুতর নয় এবং অযথা চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই বরং মাস্ক, স্যানিটাইজেশন ও শারীরিক দুরত্বের মতো স্ট্যান্ডার্ড প্রতিরক্ষার ব্যবস্থাগুলি মেনে চললেই হবে।
ভারতে ৬ জন আক্রান্ত
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে যে ব্রিটেন থেকে ভারতে ফেরা ৬ জন যাত্রী ব্রিটেনের নয়া স্ট্রেন, যা ভিইউআই-২০২০১২/০১ নামে পরিচিত, আক্রান্ত হয়েছেন। উদ্বেগের কারণ এই যে, ভারতের দৈনিক কোভিড-১৯ গণনা যেমন হ্রাস পাচ্ছিল ঠিক তেমনই রোগের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই আরও জটিল হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, ব্রিটেনের সার্স-কোভ-২-এর নয়া স্ট্রেনের জিনোম সনাক্ত করা গিয়েছে বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেল্থ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল, হায়দরাবাদের সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি ও পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভায়রোলজির তিনটে নমুনাতে।
পুরনো অভ্যাস বজায় রাখার আবেদন
বহু বিজ্ঞানী এই নয়া স্ট্রেন নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন এবং জানিয়েছেন যে এই নয়া প্রজাতি আরও ভয়ানক তার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দিল্লির সিএসআইআর-ইনস্টিটিউট অফ জিনোমিক্স এবং ইন্টেগ্রেটিভ বায়োলজির ডিরেক্টরদের মধ্য একজন অনুরাগ আগরওয়াল বলেন, ‘সতর্ক থাকুন এবং ভালো অভ্যাসগুলি অনুসরণ করুন সেটাই যথেষ্ট।' এর সঙ্গে তিনি এও যুক্ত করেছেন যে ব্রিটেনে প্রথম যখন এই নয়া স্ট্রেন ধরা পড়ে তখনও কোনও ক্লিনিকাল রিপোর্ট ছিল না যে এটা আরও ভয়ানক। যদিও ইউরোপীয় সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (ইসিডিসি) বলেছে যে ১৯ ডিসেম্বর ব্রিটেনে যে নতুন করোনার প্রজাতি দেখা গিয়েছে তা প্রাথমিকভাবে ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রমণযুক্ত। তবে এটি আরও জানিয়েছে যে স্পাইক প্রোটিনে একাধিক রূপান্তর নিয়ে বৈকল্পিক সম্পর্কিত সংক্রমণের তীব্রতা পরিলক্ষিত হওয়ার কোনও ইঙ্গিত নেই। এই স্পাইক প্রোটিন মানবদেহের সংস্পর্শে এলে তা শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়।
কোনও পরীক্ষাগত প্রমাণ মেলেনি
ভায়রোলজিস্ট উপাসনা রায়ও একই সহমত পোষণ করে জানিয়েছেন যে এখনই এটা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই কারণ এটি যে বেশি বিপদজ্জনক তার এখনও প্রমাণ মেলেনি। কলকাতার সিএসআইআর-আইআইসিবি-র সিনিয়র বিজ্ঞানী আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, ‘বলা হয়েছে যে সংক্রমণের হার বেশি। তবে এর জন্যও পরীক্ষাগত প্রমাণ নেই।' রায় আরও উল্লেখ করে জানান যে ভ্রমণ সম্পর্কিত একটি পরীক্ষা ইতিমধ্যে প্রস্তাবিত হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে ব্রিটেন থেকে যে কেউ এ দেশে প্রবেশ করলে তার জন্য পরীক্ষার সুপারিশ করা হয়েছে। রায় বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যা এখন প্রয়োজন তা হল মাস্কের ব্যবহার (অনেকেই বন্ধ করে দিয়েছেন), সামাজিক দুরত্বের মতো প্রাথমিক সতর্কতাগুলি মেনে চলা। সংক্রমণের ওপর পর্যবেক্ষণ করা এবং টেস্টের হার বাড়ানো।
ভ্যাকসিন ব্যর্থ হওয়ার প্রমাণ নেই
সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কে বিজয় রাঘাওয়ান একটি সাংবাদিক বৈঠকে জানান, এখন পর্যন্ত এটির সন্ধান পাওয়া যায়নি যে নতুন রূপটি রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি করে। তিনি বলেন, ‘ব্রিটেন বা ইংল্যান্ড থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রমাণ মেলেনি যে বর্তমান ভ্যাকসিন কোভিডের নয়া স্ট্রেন প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হবে। বেশিরভাগ ভ্যাকসিনগুলি স্পাইক প্রোটিনকে লক্ষ্য করে যেখানে বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন রয়েছে তবে ভ্যাকসিনগুলি আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থাটিকে বিস্তৃত প্রতিরক্ষামূলক অ্যান্টিবডিগুলিকে উৎসাহিত করে।'
নয়া স্ট্রেন নিয়ে আতঙ্কিত নয়
হায়দরাবাদের সিএসআইআর-কেন্দ্রের ডিরেক্টর রাকেশ মিশ্র জানিয়েছেন যে ভারতের পরীক্ষা হওয়া নমুনায় ব্রিটেনের নয়া স্ট্রেন পাওয়ায় অবাক হওয়ার কোনও কারণ ছিল না। তাঁর মতে, প্রচুর পরিমাণে টেস্টের প্রয়োজন রয়েছে এবং নয়া করোনা স্ট্রেন নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।
'বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিজেপির মার্কামারা', মমতার আক্রমণের জবাব দিলেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী