সঠিক পদ্ধতিতে কোভিড বর্জ্য নিষ্পত্তিতে ঢিলেমি, ধীরে ধীরে দূষণের দিকে যাচ্ছে পরিবেশ
বর্তমানে মানুষ এতটাই স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠেছেন যে পরিবেশের কথা মাথা থেকেই উড়ে গিয়েছে। অথচ এই সময়ই সবচেয়ে বেশি পরিবেশের দেখভাল করা প্রয়োজন। পরিবেশবিদ বিমলেন্দু ঝাঁ এ প্রসঙ্গে বলেন, 'এখন পরিবেশের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার ওপর। যেভাবে আমরা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই কিট), যেমন সার্জিকাল মাস্ক, গ্লাভস ও জুতোর কভার ব্যবহার করছি, তার কিন্তু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে এবং চারমাস পরও আমরা এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া না দেখালে তা কিছুটা উদ্বেগজনক।’
কোভিড-১৯ সঙ্কটে লড়াইয়ের সময় পিপিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস, কিন্তু তা ব্যবহারের পর রোজ ফেলে দেওয়া জরুরি, বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষেত্রে। এই বর্জ্য পদার্থগুলি ধীরে ধীরে পরিবেশকে সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পরিবেশ দূষণের দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা দিল্লি এই বর্জ্য সংগ্রহ ও নিষ্পত্তিতে এখনও পিছিয়ে রয়েছে যা স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। দিল্লির বর্জ্য ব্যবস্থা বিশেষজ্ঞ স্বাতী সিং সাম্বিয়াল সিপিসিবি রিপোর্টের দিকে ইঙ্গিত করে জানিয়েছেন যে এই বর্জ্যের মাত্র ৭০ শতাংশ ভস্মীকরণ যন্ত্রে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, 'তবে এখনও ৩০ শতাংশের ফাঁক রয়েছে। মাস্ক, গ্লাভস ও পিপিই হাসপাতালের বাইরে জড়ো করে রাখা হয় অথবা রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। পারিবারিক ক্ষেত্রেও কোনও বিভাজন চোখে পড়ছে না। বর্জ্য সংগ্রহকারীদের বাছাই করতে হয় এবং এটা করার সময় তাঁরা সম্ভাব্য সংক্রমিত উপাদানের সংস্পর্শে আসে। শুধু তাই নয়, বর্জ্য সংগ্রহকারীরা ঘন বসতিপূর্ণ জায়গায় থাকেন। কোনও ভাবে যদি তাঁরা উপসর্গহীনভাবে সংক্রমিত হয়ে পড়েন তবে তা অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়বে।'
এনডিএমসির সঙ্গে কাজ করে এমন অলাভজনক সংস্থা চিন্তনের উপদেষ্টা ও নীতি প্রধান চিত্রা মুখোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, অনেকেই তাঁদের বাড়ির ময়লা প্লাস্টিকে করে তা কাছাকাছি কোনও ঢালাওতে ফেলে দেন। তিনি বলেন, 'আমরা সাফাই সেনা নামে নথিভুক্ত বর্জ্য সংগ্রহকারী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি এবং এই সব বর্জ্য সংগ্রহকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁরা বর্জ্য সংগ্রহের সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের জানাতে পারে যে পিপিই কিট আলাদা ব্যাগে ভরে ফেলা হোক।' এসডিএমসির জনসংযোগ আধিকারিক রাধা কৃষ্ণান জানিয়েছেন যে সংগৃহীত আবর্জনা গাজিপুরের ল্যান্ডফিল সাইটে নিয়ে যাওয়া হয়।
টেরির পরিবেশ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সৌরভ মনুজা বলেন, 'গাজিপুরে গিয়ে এই বর্জ্যগুলিকে আলাদা করা হয় এবং মাস্ক, পিপিই কিট ও গ্লাভস যেগুলি পাওয়া যায় যা তেহখণ্ডের বর্জ্য থেকে জ্বালানি প্লান্টে সরাসরি চলে যায়।' টেরির পক্ষ থেকে এটা বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে মাস্ক, গ্লাভস ও কিট নিষ্পত্তি করার আগে কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টার জন্য হলুদ ব্যাগে ভরে আলাদা করে রাখা উচিত। কিন্তু সেটা করা হয় না। সৌরভ বলেন, 'সেকারণেই প্লাস্টিক সবসময়ই একটি সমাধান না হওয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নির্ভনা বিং-এর কর্ণধার জয় ধর গুপ্তা জানান, গ্লাভস এবং গগলস সহ প্রত্যেক ধরনের পিপিই এক রকমের প্লাস্টিক দিয়েই তৈরি করা হয় এবং মাইক্রো প্লাস্টিকের আকারে যে পরিমাণ প্লাস্টিক আমাদের বাতাস, জল ও খাদ্যে যাচ্ছে তা বেশ বড় আকারের। কোভিডের চেয়েও এটা আরও মারাত্মক ক্ষতি করছে।
স্বাতী সিং বলেন, 'হাসপাতাল ও কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র থেকে যখন কোভিড-১৯-এর আবর্জনা আসছে তখন এগুলিকে ভিন্ন ভিন্ন রঙের কোড সহ দ্বিগুণ স্তরের ব্যাগে ভরে তবে নিষ্পত্তি করা উচিত। সফদরজঙ্গ হাসপাতালের সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, পলিভিনাইল সিএইচএল অরাইড দিয়ে তৈরি গ্লাভস, গ্লাস ও সূঁচ জ্বালানো যায় না। কিন্তু মাস্ক, পিপিই কিট জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য হলুদ ব্যাগে ভরে রাখা হয়। মনুজা বলেন, 'হাসপাতালের নিজস্ব বর্জ্য জ্বালানোর যন্ত্র রয়েছে, কিন্তু কোভিড বর্জ্য পরিচালনা হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে পরিবর্তিত হয়।' তিনি এর সঙ্গে আরও যোগ করে বলেন, 'করোনা কেসের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি বর্জ্য তৈরি হবে এবং দ্রুত তা নিষ্পত্তি করার ক্ষমতার অভাব তৈরি হতে পারে।'
ঝাঁ বলেন, 'ছ'মাস আগেও আমরা প্লাস্টিক-মুক্ত ভারত নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। কিন্তু এখন তা জানলা দিয়ে বেড়িয়ে গিয়েছে। সরকারকে বুঝতে হবে যে করোনা ভাইরাসের পাশাপাশি এটাও অন্য এক সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং তা দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত বিপত্তি হয়ে দাঁড়াবে।' এ বিষয়ে গুপ্তা এর সমাধান হিসাবে জানিয়েছেন, কাপড়ের মাস্ক ও সুতির গ্লাভস এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। এন-৯৫ মাস্ক মানেই কোভিড থেকে সুরক্ষিত নয়। হু জানিয়েছিল যে এন-৯৫ মাস্কের মধ্যে ৩০০ ন্যানোমিটার বা তার চেয়ে বড় কণা আটকানোর কার্যকারিতা রয়েছে। কোভিডের অনুর আকার গড়ে ১২০ ন্যানোমিটার। তবে সম্পূর্ণ সুরক্ষার জন্য অ্যান্টিভাইরাস মাস্কের প্রয়োজন রয়েছে।