শিলং-এ অল্প সময় শিথিল কারফিউ, কিন্তু সমস্যা যে তিমিরে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে
রবিবার শিলংয়ের কয়েকটি স্থানে শিথিল করা হল কারফিউ। কিন্তু সমস্যা মেটার কোনও লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না।
রবিবার শিলংয়ের কিছু অংশে সাত ঘন্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। এই সুযোগে একদিকে কারফিউ এর আওতায় থাকা ১৪ টি অঞ্চলের জনগন বাজারে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহ করেছেন। পাশাপাশি মেঘালয়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের দেখা গেছে ঘরে ফেরার তোড়জোড় করতে।
পূর্ব খাসি পাহাড়ের ডেপুটি কমিশনার পি এস দখর জানান সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৩ টে পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। তবে রাতে আগের মতোই কারফিউ চলবে। তিনি আরও জানান স্থানীয় ট্যাক্সি ও বেসরকারি যানবাহন চলাচল করলেও দূরপাল্লার পরিবহন পরিষেবা, বিশেষ করে গুয়াহাটি যাওয়ার বাস বা গাড়ি বিশেষ নিলছে না। তিনি বলেন, 'ঠিক কতজন পর্যটক আটকে পড়েছেন তা জানা নেই, তবে তাঁরা যাতে নিরাপদে ফিরতে পারেন সেটা নিশ্চিত করা হবে।'
বেশিরভাগ পর্যটকদের হোটেলগুলিই পুলিশ বাজারের এলাকায় অবস্থিত। প্রধান সংঘর্ষটি যেখানে হয়েছিল তার বেশ কাছাকাছিই। নব্বইয়ের দশকে বাঙালী - নেপালি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর থেকে রাজ্যটি মোটামুটি ঠান্ডাই ছিল। শিলং হয়ে ওঠে ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার থেম মেতোর এলাকার রাষ্ট্রীয় পরিবহনের একটি বাস পার্ক করা নিয়ে সংঘর্ষ বাধে।
এলাকাটি পাঞ্জাবি বা সুইপার লেন হিসেবে পরিচিত। অনেকে হরিজন কলোনিও বলেন। এলাকার প্রায় ৫০০ বাসিন্দার বেশিরভাগই মহিলা ও শিশু। তাঁরা দলিত শিখ সম্প্রদায়ের, অধিকাংশই পৌরসভার সাফাই কর্মী হিসাবে নিয়েজিত। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে পাঞ্জাবি লেনে এক স্থানীয় আদিবাসীকে হত্যা করার রটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শহরে দাঙ্গা বেধে যায়। তার আগের দিনই অবশ্য ওই এলাকাতেই রাষ্ট্রীয় পরিবহন বাসের চালক ও কন্ডাকটরদের সঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীদের ছোটখাট সংঘর্ষ বেধেছিল। বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল বাস রাখার কারণে তাদের জল আনার পথ অবরুদ্ধ হচ্ছে। এনিয়ে তারা বাসে পাথর নিক্ষেপ করে বলে অভিযোগ।
পূর্ব খাসি পাহাড় ও রি-ভোই জেলার কর্তৃপক্ষ এই সংঘর্ষের জন্য আপাতত জারিকেন ও বোতলে পেট্রোল বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। কারণ বৃহস্পতিবার রাতে, দুর্বৃত্তরা পেট্রোল দিয়ে মোলোটভ ককটেল তৈরি করে একটি বাড়ি এবং একটি বাইকের শোরুম-এ ভাংচুর চালায়। মাওব্লেই এলাকায় ওই শোরুমের নয়টি মোটরবাইক পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তার আগে পাঞ্জাবি লেনের অপর একটি দোকানেও একইভাবে হামলা চালান হয়েছিল।
তবে রাজ্য জুড়েই পাঞ্জাবিদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু হয়েছে। গুয়াহাটি ও শিলংয়ের মাঝে অবস্থিত নংপোর উমরান এলাকায় শনিবারও পাঞ্জাবে নথিভুক্ত একটি ট্রাক জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ট্রাকটি নেপাল থেকে সিজিআই শিট নিয়ে ত্রিপুরায় যাচ্ছিল। শিলং-এ এর জেরে হাইওয়ে বন্ধ হয়ে গেলে সমস্যায় পড়বে দক্ষিণ আসাম, মিজোরাম ও ত্রিপুরা এবং মণিপুরের কিছু অংশও।
শিলংয়ের এই ঘটনায় নতুন করে হরিজন কলোনির বাসিন্দাদের বদলি করার দাবি উঠেছে। এর আগে মেঘালয় স্টেট ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট হরিজন কলোনিকে শহরের ১২টি বস্তি এলাকার অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। দূষণ ও অস্বাস্থের কারণে এলাকার বাসিন্দাদের সেখান থেকে সরিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসন দেওয়ার কথাও হয়েছিল।
শনিবার, ১২ টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রধান হরিজন কলোনির বাসিন্দাদের স্থানান্তরের বিষয়টি নিয়ে মুখ্য়মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি অবিলম্বে হরিজন কলোনির বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়া করার দাবি জানান। তবে, মুখ্য়মন্ত্রী তাঁকে জানিয়েছেন, পুনর্বাসন নীতি নিয়ে শহর বিষয়ক দপ্তর ও রাজস্ব বিভাগ-এর প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। তা হাতে আসার আগে পরিজন কলোনির বাসিন্দাদের সরানো সম্ভব নয়।
এলাকাটি উত্তর শিলং বিধানসভার অন্তর্গত। সেখানকার বিধায়ক এডেলবার্ট নংগ্রাম-এর মত আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই এবিষয়ে এগোন উচিত। তবে এলকাটি একটি বাজার এলাকা হওয়ায় তাঁর তিনি হরিজন কলোনীর বাসিন্দাদের স্থানান্তরিত করারই পক্ষপাতি। তিনি মনেকরেন স্থানীয় লোকজনের জন্য সেখানে একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করলে তাঁরা এলাকা ছাড়তে রাজি হবেন।
শাসক ঝোটের অন্যতম, পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি জানিয়ে দিয়েছে মঙ্গলবারের মধ্যে কলোনিটি সরাতে হবে। আরেক জোট সদস্য ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক পার্টির মত ভোট ব্যাংকের রাজনীতির কারণেই কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন আগের সরকার এঅ সমস্যা নিয়ে কিছু করেনি। কংগ্রেস-এর আবার মত একে অপরকে দোষারোপ করার পরিবর্তে এই সমস্যা সমাধানের জন্য সব দলের একসঙ্গে বসা উচিত।
তবে পাঞ্জাবি লেনের বাসিন্দারা কিন্তু কোনও মূল্যেই এলাকা ছাড়তে রাজি নন। তবে, উপকণ্ঠে যেতে চলতে আগ্রহী নন। তাঁদের বক্তব্য গত ২৫ বছর ধরেই এলাকার দলিত শিখদেরকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সমস্যার সমাধানে তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করছেন।