
দুই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী সঙ্কট, জয়ী হয়েও বিজেপির কপালে চিন্তার ভাঁজ, অমৃতসরে আপের বিজয় মিছিল
১০ মার্চ বৃহস্পতিবার পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল সামনে আসার পর থেকেই বিজেপির অন্দরমহলে ব্যস্ততা আরও দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাঁচ রাজ্যের মধ্যে চার রাজ্যে বিজেপির জয়জয়কার হলেও উত্তরাখণ্ডে খোদ হেরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। অপরদিকে মণিপুরে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের ধারাবাহিকতা নিয়েও গুঞ্জন শুরু হয়েছে এবং এই পদের জন্য একাধিক যোগ্য প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

অমৃতসরে আপের রোড শো
অপরদিকে, পাঞ্জাবের ইতিহাস বদলে দিয়ে এ রাজ্যে আম আদমি পার্টি জয়ী হয়েছেন এবং আপের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ভগবন্ত মান জানিয়েছেন যে তিনি ১৬ মার্চ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করবেন। আপ তার এই জয় উদযাপন করার জন্য ১৩ মার্চ অমৃতসরে একটি রোড শো করার পরিকল্পনা করছে, যেখানে উপস্থিত থাকবেন দলের প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

হোলির পর নতুন সরকার গঠন
উত্তরপ্রদেশে গেরুয়া ঝড়ের সামনে টিকতে পারেনি অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বি দলগুলি। শুক্রবারই যোগী আদিত্যনাথ তাঁর শেষ মন্ত্রীসভার বৈঠক করেন লখনউতে। এদিনই তিনি তাঁর পদত্যাগের চিঠি জমা দিয়ে আসেন রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেলের কাছে রাজ ভবনে। সূত্রের খবর নতুন মন্ত্রীসভা হোলির পর শপথ নেবে। জল্পনা চলছে যে বর্তমান মন্ত্রীসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা হয়ত নতুন মন্ত্রীসভা গঠনে জায়গা নাও পেতে পারেন।

এমজিপি সমর্থন গোয়াতে
গোয়া বিধানসভা ভোটে দাগ কাটতে পারল না তৃণমূল। একটিও আসনে জিততে পারলেন না তৃণমূলের প্রার্থীরা। বরং গোয়ায় তৃণমূলের জোটসঙ্গী মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি, ফল ঘোষণার পরই, বিজেপিকে সরকার গড়তে সমর্থন করল। ইতিমধ্যে বিজেপিকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিন জন জয়ী নির্দল প্রার্থী এবং অপরদিকে এমজিপির পক্ষ থেক দু'জন বিধায়কও বিজেপিকে সরকার গড়তে সহায়তা করবে বলে জানা গিয়েছে। এই সমর্থন ৪০ সদস্যের বিধানসভার সংখ্যাকে ২৫-এ নিয়ে গিয়েছে। গোয়ার বিজেপি সভাপতি সদানন্দ শেঠ তানাবাড়ে এ প্রসঙ্গে বলেন, 'আমরা ২০টি আসনে জয়ী হয়েছি এবং এমজিপি তাদের সমর্থন আমাদের দিয়েছে এবং আরও তিনজন নির্দল প্রার্থী বিজেপিকে সমর্থন করেছেন। তাই এখন আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠিরতা রয়েছে।' তবে এমজির কিছু বিধায়ক এনডিএকে সমর্থনের বিরোধিতা করেছেন কারণ নির্বাচনে তাঁরা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছিলেন এবং প্রচার চলাকালীন তিক্ত কথার যুদ্ধ হয়েছিল। যদিও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বদের কাছে এই বিষয়টি অতটা গুরুত্ব পায়নি এবং তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।

উত্তরাখণ্ডে নতুন মুখ্যমন্ত্রী
উত্তরাখণ্ডের মসনদে কে বসবেন তা নিয়ে বিজেপি দ্বিধায় পড়ে গিয়েছে। পরাজিত হওয়া সত্ত্বেও পুষ্কর সিং ধামিকেই মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসাবেন নাকি অন্য কোনও জয়ী বিধায়ককে এই দায়িত্ব দেবেন আবার রাজ্যের কোনও সাংসদ সদস্যকে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বসাবেন, এই নিয়েই বিজেপির শীর্ষ স্থানীয় অন্দরে চলছে জোরদার জল্পনা। উত্তরাখণ্ডে বিজেপি ৭০টি আসনের মধ্যে ৪৭টিতে জয়লাভ করেছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং ধর্মেন্দ্র প্রধানকে বলা হয়েছে যে তাঁরা উত্তরাখণ্ড বিজেপি বিধানসভা দলের বৈঠকের জন্য পর্যবেক্ষক হবেন (যদিও কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়নি), যার তারিখও নির্ধারণ করা হয়নি। সূত্রের খবর, 'সমস্যা হল যে পুষ্কর সিং ধামি মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পরে বিজেপির হারানো পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে অনেক কিছু করেছেন, তিনি ছিলেন তৃতীয় মুখ্যমন্ত্রী ওই একই বছরে। তিনি নির্বাচনে হেরে গিয়েছেন। হিমাচল প্রদেশে ধুমালজি (প্রাক্তন মুখষমন্ত্রী প্রেম কুমার ধুমাল) দলের নেতৃত্ব দিলেও তিনিও নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন এবং নতুন মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুরকে নিযুক্ত করা হয়েছিল তাঁদের মধ্যে থেকে যাঁরা তাঁদের আসনে জয়লাভ করতে পেরেছিলেন। তাই এটা কেটে শুকোনোর মতো কোনও বিষয় নয় যে ধামিকে নিয়োগ করার ছয়মাসের মধ্যে কোনও জয়ী বিধায়ককে সরিয়ে ধামিকে জেতানো হবে।' সূত্র এও জানিয়েছে যে, 'প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী অজয় ভাটের মতো সাংসদদের বিবেচনা করা হলে একই উপনির্বাচনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। অন্যদিকে জয়ী বিধায়কদের মধ্যে থেকে যদি বেছে নিতে হয় তবে রয়েছেন ধরণ সিং রাওয়াত, যিনি অতীতে মন্ত্রীত্ব সামলেছেন এবং তিনি ঠাকুর সম্প্রদায়ের। এছাড়াও রয়েছেন বিনোদ কাণ্ডারি যিনি খুব কঠিন আসন থেকে জিতে এসেছেন এবং তিনি রাজ্যের ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার সভাপতিও। একই সঙ্গে নাম উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরেরও, যিনি ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার জাতীয় সভাপতি এবং অরবিন্দ পাণ্ডে, যিনি অতীতে মন্ত্রী ছিলেন এবং তিনি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের।'

ভগবন্ত মান শপথ নেবেন ভগত সিংয়ের গ্রামে
পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে আপের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ভগবন্ত মান দলের সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে দেখা করেন। সরকার গঠনের প্রচেষ্টা জোরদার হওয়ায় দলের বিধায়করা চণ্ডীগড়ে জড়ো হতে শুরু করেছেন। ভগবন্ত মান বলেন, 'শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমি দলের আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। শপত গ্রহণ অনুষ্ঠান মহলে হবে নাকিন্তু সেটা হবে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গ্রামে। আমরা শপথ নেব শহিদ ভগৎ সিংয়ের গ্রামে ১৬ মার্চ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে।'

মণিপুরে মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে গুঞ্জন
মণিপুরে, বর্তমান বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারাভিযান জুড়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে রাজবংশীয় রাজনীতির উপর ধারাবাহিক আক্রমণের পরে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিং-এর ধারাবাহিকতা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। সাগোলবান্দ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃতীয়বার জয়ী রাজকুমার ইমো সিংকে উল্লেখ করে এক বিজেপি নেতা বলেন, 'আমাদের অন্যতম জয়ী প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রীর জামাই।' এমনকী নির্বাচনের আগেই মুখ্যমন্ত্রী বদল নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও বিজেপি বীরেন সিংকেই এই পদে বহাল রেখে দিয়েছিল। দিল্লির নেতৃত্ব আপাতত নীরব এই বিষয় নিয়ে এবং বিধানসভা দলের বৈঠকের জন্য কোনও পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। বিজেপির সভাপতি সারদা দেবী বলেন, 'একটি জাতীয় দল হিসাবে আমাদের একটি সংসদীয় বোর্ড রয়েছে, যা রাজ্য ইউনিটের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে কে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন।' যদিও শোনা গিয়েছে যে জনতা দল (একতা) ও নাগা পিপল'স ফ্রন্ট (এনপিএফ) বিজেপিকে সরকার গঠনের জন্য সমর্থন করতে পারে ছয় ও পাঁচ আসনে, এতে ৬০ সদস্যের বিধানসভায় সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৩২।
মমতার 'স্বপ্নের উড়ানে' ধাক্কা! ২০২৪-এর চিত্রনাট্যে অ্যাডভান্টেজ আপ সুপ্রিমো কেজরিওয়ালের