করোনা ভাইরাসে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, সতর্ক করলেন বিজ্ঞানীরা
মারণ রোগ করোনা ভাইরাসের প্রভাব সরাসরি ফুসফুসে পড়ে সে কথা আগেই প্রমাণিত করেছে বিজ্ঞানীরা। এবার নতুন তথ্য সামনে এল এই মহামারি রোগ নিয়ে। বুধবার গবেষকরা সতর্ক করে জানিয়েছেন যে করোনা ভাইরাসের জেরে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। গবেষকরা এও জানিয়েছে নতুন প্রমাণ হিসাবে প্রস্তাবিত কোভিড–১৯ জ্বলন, সাইকোসিস এবং প্রলাপ সহ গুরুতর স্নায়বিক জটিলতার কারণ হতে পারে।
মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলছে করোনা ভাইরাস
লন্ডন কলেজ ইউনিভার্সিটির (ইউসিএল) গবেষকদের সমীক্ষাতে বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে যে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ৪৩ জন রোগী নয়ত অস্থায়ীভাবে তাদের মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে, স্ট্রোক, স্নায়ুর ক্ষতি অথবা অন্য কোনও মস্তিষ্কের প্রভাব দেখা দিয়েছে। গবেষণায় এটা নতুনভাবে যুক্ত করা হয়েছে যে এই মারণ রোগ মস্তিষ্কে ক্ষতি করে।
করোনার সঙ্গে মিল রয়েছে আরও দুই মহামারি রোগের
এই সমীক্ষার সহ-নেতৃত্বদানকারি ইউসিএলের স্নায়ুবিদ মাইকেল জ্যান্ডি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি এই মহামারি যেখানে বড় আকারে মস্তিষ্কের ক্ষতি করছে যার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায় ১৯২০ ও ১৯৩০ সালের মহামারি এনসেফেলাইটিস লেথারজিকা ও ১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারির।'
করোনায় সুস্থদের মধ্যেও মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা দিতে পারে
প্রসঙ্গত কোভিড-১৯, নতুন করোনা ভাইরাসের এই রোগ শ্বাসপ্রশ্বাসকে অকেজো করে ফুসফুসে প্রভাব ফেলে, কিন্তু স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মস্তিষ্কের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, করোনার প্রভাব মস্তিষ্কে যে পড়ে তার প্রমাণ রয়েছে। কানাডার ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী আদ্রিয়ান ওয়েন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত লক্ষাধিক মানুষকে নিয়ে আমার এখন চিন্তা। এক বছরের মধ্যে যদি ১০ মিলিয়ন মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং তাঁদের মধ্যে যদি তখন জ্ঞানের ঘাটতি থাকে তবে সেটার প্রভাব পড়বে তাঁদের কাজে এবং দৈনন্দিন জীবনে তাঁদের কার্যক্রমের ওপর।' ইউসিএলের এই সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল ব্রেনে। এই সমীক্ষার জন্য ৯ জন রোগীকে পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাঁদের মস্তিস্কের প্রদাহজনিত তীব্র প্রসারিত এনসেফালোমিলাইটিস (অ্যাডেম) নামক একটি বিরল অবস্থার সঙ্গে সনাক্ত করা হয়েছিল যা সাধারণত শিশুদের মধ্যে দেখা যায় এবং তা ভাইরাল সংক্রমণের মাধ্যমে হয়। গবেষকদের দল জানান যে লন্ডন ক্লিনিকে অ্যাডেম রয়েছে এমন একজন প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর দেখা সাধারণত পাওয়া যায়। কিন্তু সমীক্ষার সময় এক সপ্তাহে এই অ্যাডেম রোগীর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে, যা গবেষকরা উদ্বেগজনক বৃদ্ধি বলে বিশ্লেষণ করেছেন।
স্নায়বিক প্রভাব সম্পর্কে চিকিৎসকদের সচেতন থাকতে হবে
গবেষণার আর এক সহ-নেতৃত্বদানকারী গবেষক রস প্যাটারসন বলেন, ‘এই রোগটি কয়েক মাস ধরেই মানুষকে সংক্রমিত করছে বলে জানি, তবে আমরা এটা জানি না যে কোভিড-১৯ কত দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতি করতে পারে।' তিনি আরও বলেন, ‘সম্ভাব্য স্নায়বিক প্রভাব সম্পর্কে চিকিৎসকদের সচেতন থাকতে হবে, প্রাথমিক রোগ নির্ণয় রোগীর ফলাফল উন্নতি করতে পারে।' ওয়েন জানিয়েছেন যে উদীয়মান প্রমাণগুলি স্নায়ু এবং মনোবিদ জটিলতা কতটা সাধারণ ছিল তা নির্ধারণের জন্য বৃহত্তর, বিশদ গবেষণা এবং বিশ্ব জুড়ে ডেটা সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।