রাজধানী এক্সপ্রেসে খাবারে আরশোলা, এক লাখ টাকা জরিমানা আইআরসিটিসি-কে
দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রীদের অখাদ্য-কুখাদ্য দেওয়া হচ্ছে, এই অভিযোগ নতুন কিছু নয়। টেনে ছেঁড়ার অযোগ্য রুটি, দুর্গন্ধযুক্ত ডাল, বাসি মাংস দেওয়া হয় আকছার। পূর্বতন ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রীরা বারবার বলেছিলেন, এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হয়নি। গত ৮ জুলাই সংসদে রেল বাজেট পেশের সময় রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া বলেছিলেন, রেলে খাবার নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এর সুরাহা হবে। তার পরই রেলের কর্তাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন তিনি। কয়েকটি ছোটো ছোটো দল গঠন করে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় খাবারের মান পরিদর্শনের। গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই কাজে নেমে পড়ে এই দলগুলি। তাতেই দেখা যায়, যাত্রীদের অভিযোগ অক্ষরে-অক্ষরে সত্যি।
নয়াদিল্লি-হাওড়া রাজধানী এক্সপ্রেস ছাড়াও খাবারের মান পরীক্ষা করতে আচমকা পরিদর্শন চালানো হয় পশ্চিম এক্সপ্রেস, পুষ্পক এক্সপ্রেস, মোতিহারি এক্সপ্রেস, শিবগঙ্গা এক্সপ্রেস, গোল্ডেন টেম্পল মেল, নেত্রবতী এক্সপ্রেস, পাঞ্জাব মেল, হাওড়া-অমৃতসর মেল, চণ্ডীগড় শতাব্দী এক্সপ্রেস ইত্যাদি ১৩টি ট্রেনে। ২৩ জুলাই থেকে দফায় দফায় এই পরিদর্শন চলে। আর তাতে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় রেলের অফিসারদের।
অভিজাত ট্রেনে খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব পাবে আইসিটি গোষ্ঠী, এমটিআর এবং হলদিরাম
নয়াদিল্লি-হাওড়া রাজধানী এক্সপ্রেসে এক যাত্রীর খাবারে পাওয়া যায় মরা আরশোলা! কোনও ট্রেনে দেখা গিয়েছে ডাল পচে গিয়ে টক গন্ধ বেরোচ্ছে। কোথাও আবার ভাত পচে গিয়ে জল কাটছে। তা কায়দা করে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে অপেক্ষাকৃত 'টাটকা' ভাতের সঙ্গে। জানা যায়, এই ট্রেনগুলিতে খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে রয়েছে যথাক্রমে আইআরসিটিসি (ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন), আর কে অ্যাসোসিয়েটস, সানশাইন ক্যাটারার্স, সত্যম ক্যাটারার্স, বৃন্দাবন ফুড প্রোডাক্টস ইত্যাদি সংস্থা। আইআরসিটিসি-কে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। বাকিদের কাউকে ৫০ হাজার, কাউকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মোট ১১.৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে দোষী সংস্থাগুলিকে। রেলকর্তারা জানান, পরপর পাঁচবার যদি কোনও সংস্থার বিরুদ্ধে খারাপ খাবার পরিবেশনের অভিযোগ আসে, তা হলে আইন অনুযায়ী তার লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হবে।
রেল সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে রেলে পরিষেবার বিষয়টি ভালো করতে উদগ্রীব। তাই রেলকর্তারা এখন তটস্থ রয়েছেন। তা ছাড়া, খুব তাড়াতাড়ি রাজধানী, দুরন্ত ও শতাব্দী এক্সপ্রেসে আইআরসিটিসি বা অন্যান্য ক্যাটারারদের আর খাবার পরিবেশন করতে দেওয়া হবে না। এই ট্রেনে যাত্রীদের খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব পাবে যথাক্রমে আইসিটি গোষ্ঠী, এমটিআর এবং হলদিরাম। নির্দিষ্ট শহরে এদের বেস কিচেনে রান্না হবে। তার পর তা প্যাকেটবন্দি করে আনা হবে ট্রেনগুলিতে। মাইক্রোওয়েভে গরম করে তা পরিবেশন করা হবে যাত্রীদের। এখনকার সাদামাটা মেনুর পরিবর্তে চেট্টিনাড চিকেন, হায়দরাবাদী বিরিয়ানি, ভাত-সম্বর-রসম, ভাত-রাজমা ইত্যাদি পরিবেশন করা হবে। বড় সংস্থাগুলিকে দিয়ে রান্না করালে খাবারের মান ভালো হবে বলেই মনে করছে রেল মন্ত্রক।
রাজধানী, দুরন্ত ও শতাব্দী এক্সপ্রেসে এই মডেল জনপ্রিয় হলে আস্তে আস্তে সাধারণ মেল-এক্সপ্রেস ট্রেনেও এটা চালু হবে।