সার্জারির সময় শিশু মৃত্যু, সোশ্যাল মিডিয়ায় হেনস্থা, আত্মঘাতী কেরলের চিকিৎসক
এক সাত বছরের শিশুর মৃত্যুকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় হেনস্থা হতে হয় এক তরুণ চিকিৎসককে। সেই অপমানের জ্বালায় বৃহস্পতিবার কেরলের ওই অর্থোপেডিক সার্জেন আত্মহত্যা করলেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর শিশুটির অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে মারা যায় এবং অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন এই চিকিৎসক।

কোলাম জেলার কিলিকোল্লুর পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের করেছেন। ৩৫ বছরের ডাঃ অনুপ কৃষ্ণ, যিনি অনুপ অর্থো কেয়ার হাসপাতাল চালাতেন, তাঁকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় কাডাপ্পাকাড়ায় তাঁর বাড়ি থেকে। চিকিৎসক তাঁর মৃত্যুর আগে বাথরুমের দেওয়ালে তিনি 'সরি’ কথাটি লিখে যান। এ প্রসঙ্গে এক শীর্ষ পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন যে এত শীঘ্র এটা বলা সম্ভব নয় যে এই আত্মহত্যার সঙ্গে এক সপ্তাহ আগে সার্জারির সময়ে হওয়া শিশুমৃত্যুর কোনও যোগ রয়েছে কিনা। তিনি জানান যে তাঁরা তদন্ত করে দেখছেন যে ওই চিকিৎসককে অনলাইন বা ফোনে কোনওভাবে হেনস্থা করা হয়েছিল কিনা।
২৩ সেপ্টেম্বর এক সাত বছরের শিশু ডাঃ অনুপের হাসপাতালে ভর্তি হন এবং হাঁটুতে অস্ত্রপচারের সময় সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। ওই সার্জারি ডাঃ অনুপ করছিলেন নিজে। এরপর ওই শিশুকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সে মারা যায়। মৃতের পরিবারের সঙ্গে স্থানীয়রা হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে এবং এই মৃত্যুর জন্য ডাঃ অনুপ দায়ি বলে প্রতিবাদ করতে থাকে। কোল্লাম পূর্ব পুলিশের কাছে তারা চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ করেছে। এই অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে শুরু করেছিলেন অ্যাসিট্যান্ট কমিশনার প্রদীপ কুমার। কিন্তু তদন্ত প্রাথমিক স্তরে যখন ছিল তখনই ডাঃ অনুপ আত্মঘাতী হন। প্রদীপ কুমার তদন্তের বিষয়ে বলেন, 'তদন্ত এখন প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে যা দেখার পরই কোনও মীমাংসায় আসা যাবে। শিশুটির ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও অন্যান্য ল্যাব রিপোর্ট আসা বাকি রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, 'আমার চিকিৎসকের অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম এবং আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতে বলেছিলাম। তিনি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে এ বিষয়ে কিছুই বলেননি।’ যদিও ডাঃ অনুপের সমর্থনে অনেক চিকিৎসকই এগিয়ে এসেছেন।
ইএনটি সার্জেন ডাঃ সুলফি নোহু তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন যে কোভিড–১৯–এর ঝুঁকির কারণে অনেক চিকিৎসকই এই সার্জারি করতে রাজি হননি কিন্তু ডাঃ অনুপ এই সার্জারি করতে রাজি হন। তিনি লেখেন, 'দুর্ভাগ্যবশত, আমরা শিশুটিকে হারিয়ে ফেলি এবং কিছু নেটিজেন সোশ্যাল মিডিয়ায় এটা নিয়ে তামাশা শুরু করে। তারা রায় দিয়ে দিল যে চিকিৎসক দায়ি। এমনকী কিছুক্ষণের মধ্যে তারা চিকিৎসককে খুনি বানিয়ে দিল। তারা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নেতিবাচক বিষয় ছড়াতে শুরু করল।’ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন কেরল খুব ভালো একজন চিকিৎসককে হারালো।