দলিত খ্রিস্টান ও দলিত মুসলমানের সঙ্গে ‘বিদেশি উৎস’-এর ইঙ্গিত, সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা কেন্দ্রের
দলিত খ্রিস্টান ও দলিত মুসলমানদের সঙ্গে ‘বিদেশি উৎস’-এর ইঙ্গিত, সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা কেন্দ্রের
তফসিলি জাতির তালিকায় দলিত খ্রিস্টান এবং দলিত মুসলমানদের অন্তর্ভুক্তির জন্য মামলায় সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা পেশ করল কেন্দ্র। সেখানে দলিত মুসলিম ও দলিত খ্রিস্টানদের তফসিলি জাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা করা হয়। কেন্দ্রের তরফে দলিত খ্রিস্টান ও দলিত মুসলমানদের বিদেশি উৎসের ইঙ্গিত দেওয়া হয়।
বিদেশি উৎসের ইঙ্গিত
বুধবার সুপ্রিম কোর্টে তফসিলি জাতির তালিকায় দলিত খ্রিস্টান এবং দলিত মুসলমানদের অন্তর্ভুক্তির জন্য মামলায় হলফনামায় কেন্দ্র বিরোধিতা করে। কেন্দ্রের তরফে হলফনামায় জানানো হয়েছে, দলিত হিন্দু, শিখ ও বৌদ্ধের তুলনায় দলিত মুসলিম ও দলিত খ্রিস্টানের বিদেশি উৎসের সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্র জানায়, ভারতীয় নাগরিক ও বিদেশি নাগরিক হিসেবে এই মামলায় শ্রেণিবিভাগ করা হচ্ছে না। কিন্তু ভারতের সংবিধানের ১৪ নং ধারা অনুসারে শ্রেণিবিভাগকে নিষিদ্ধ করে না। শ্রেণিবিভাগকে কেন্দ্র করে কোনও আইন নিষিদ্ধ করে।
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ
সুপ্রিম কোর্টে তফসিলি জাতির তালিকায় দলিত খ্রিস্টান এবং দলিত মুসলমানদের অন্তর্ভুক্তির জন্য মামলায় আবেদনকারী হলফনামার বিরোধিতা করেন। আবেদনকারী হলফনামার পরস্পর বিরোধী মন্তব্য করেছে। কেন্দ্রের তরফে যে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অস্পষ্টতা রয়েছে। কোনও জাতিকে তফসিলি জাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়, এই বিষয়ে কোনও সুস্পষ্ট ইঙ্গিত কেন্দ্রের তরফে দেওয়া হয়নি। তফসিলি জাতির তালিকা থেকে খ্রিস্টান এবং মুসলিম দলিতদের বাদ দেওয়া বৈষম্যমূলক আচরণ বলে মামলাকারী তরফে জানানো হয়।
কেন্দ্রের দাবি
অক্টোবরে সামাজিক ন্যায় বিচার ও ক্ষমতায় মন্ত্রকের তরফে দাখিল করা একটি হলফনামায় বলা হয়, কেন্দ্র সরকার দলিত হিন্দু শিখ, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ধর্মালম্বীদের তফসিলি জাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার একটি পার্থক্য রয়েছে। সেখানে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ ভারতের নিজস্ব বা স্থানীয় ধর্ম বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়। অন্যদিকে, দলতি খ্রিস্টান ও মুসলমানরা বিদেশি উৎস থেকে এসেছে বলে হলফনামায় জানানো হয়েছে। সেই কারণে দলিত মুসলমান ও দলিত খ্রিস্টানদের তফসিলি জাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কেন্দ্র পরোক্ষে জানায়, খ্রিস্টান ও ইসলাম ভারতের ধর্ম নয়। কেন্দ্রের তরফে হলফ নামায় বলা হয়েছে, শুধু হিন্দু, শিখ ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দলিতদের তফসিলি জাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বৌদ্ধ ধর্মকে অন্তর্ভুক্ত করার কারণ
কেন্দ্রের হলফ নামায় বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে বলা হয়েছে, ১৯৫৬ সালে সামাজিক ও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে ডা. বি আর আম্বেদকরের নেতৃত্ব তফসিলি জাতির একাংশ স্বেচ্ছায় বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। এই ধরনের ধর্মান্তরিতদের মূল জাতি/সম্প্রদায় স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব। কিন্তু মুসলামদের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না। কারণ মুসলামনদের ক্ষেত্রে ধর্মান্তরণ প্রক্রিয়াটি কয়েক শতাব্দী ধরে সংগঠিত হয়েছে। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, তফসিলি জাতির তালিকাভুক্ত করার অর্থ হল পিছিয়ে সম্প্রদায়কে সাহায্য করা। সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা।