তবুও আপনারা 'পরমধর্ম'! পেন্নাম হই
ব্রিটেনের বিদেশ দফতর বা 'ফরেন অফিস' সম্প্রতি কিছু নথিপত্র জনসমক্ষে (ডিক্লাসিফায়েড ডকুমেন্টস) এনেছে। বলা ভালো, আনতে বাধ্য হয়েছে। তা থেকে জানা যাচ্ছে, ব্রিটেন তাদের উপনিবেশগুলিকে স্বাধীনতা দেওয়ার আগে পরিকল্পিতভাবে সেই সব নথিপত্র নষ্ট করে দিয়েছে, যেখানে সাহেবি জমানার অমানুষিক শাসনের কথা ছিল। পাছে এগুলি জনসমক্ষে এলে বিশ্ববাসী ছি-ছি করে, সেই ভয়ে লন্ডন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সংশ্লিষ্ট নথি ধ্বংস করার। এই পরিকল্পনার গালভরা নাম দেওয়া হয়েছিল 'অপারেশন লিগ্যাসি'।
ভারতে থাকতে সাহেবরা কম কুকীর্তি করেননি। স্বাধীনতার অব্যবহিত আগে লর্ড মাউন্টব্যাটেন যখন ভারতের বড়লাট, তখন দিল্লিতে গোপনে নথি পোড়ানোর শুরু হয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম তা নিয়ে হইচই শুরু করে। সেই থেকে আরও হুঁশিয়ার হয়ে যায় ব্রিটিশরা। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ দশকে এর পর যখনই কোনও উপনিবেশকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, তখনই ক্ষমতা হস্তান্তরের নামে কিছুদিন সময় চেয়ে নেওয়া হয়। উদ্দেশ্য, ধীরে-সুস্থে সাম্রাজ্যবাদী শাসনের নথিগুলি নষ্ট করে দেওয়া। এর নাম দেওয়া হয় 'অপারেশন লিগ্যাসি'। জামাইকা, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, উত্তর রোডেশিয়া (এখন জাম্বিয়া ও জিম্বাবোয়ে), তাঞ্জানিয়া, উগান্ডা সর্বত্র এক ঘটনা ঘটেছে।
কেনিয়াতে হয়তো ভুলবশত সামান্য কিছু কাগজ থেকে গিয়েছিল। তা থেকে জানা যায়, মাউমাউ ব্রিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে ব্রিটিশ সেনা গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। চোখ উপড়ে নেয় বেয়নেট দিয়ে। ঘোড়ার পায়ে বিদ্রোহীদের বেঁধে কয়েক মাইল পাথুরে রাস্তায় টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। 'লজ্জিত' ব্রিটিশ সরকার চলতি বছরের গোড়ার দিকে তাই কেনিয়াকে দু'কোটি তিরিশ লক্ষ ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। শুধু কেনিয়াতেই এই...। যদি ঔপনিবেশিক যুগের সব নথি থেকে যেত, তা হলে ক্ষতিপূরণ দিতে দিতে বাকিংহাম প্রাসাদের ইট-পাথরও বেচতে হত!
শোনা যায়, 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের সময় বিহার-উত্তরপ্রদেশে গ্রামের পর গ্রামে আকাশ থেকে বোমা ফেলেছিল ব্রিটিশ সরকার। আন্দোলনকারীদের উলঙ্গ করে কাঁটাঝোাপে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হত। এ সব নাকি খোদ লন্ডনের নির্দেশে করা হয়েছিল। কিন্তু, ব্রিটিশ সরকার তখন বারবার এ সব অস্বীকার করেছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এর সমর্থনে সরকারি নথি পাওয়া যায়নি। এখন স্পষ্ট, সেগুলি কী করা হয়েছিল!
এর পরও সাহেবরা নিজেদের সভ্যতার বড়াই করে। মানবাধিকার 'রক্ষা' করতে বোমা মারে যেখানে-সেখানে। গত পঞ্চাশ বছরে কোনও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পূর্বসূরীদের কুকীর্তির নিন্দা করে ক্ষমা পর্যন্ত চাননি ভূতপূর্ব উপনিবেশগুলির কাছে। পরিস্থিতির চাপে সাম্রাজ্য গিয়েছে, কিন্তু, ঔদ্ধত্য ঘোচেনি।
লর্ড কর্নওয়ালিশ বলতেন, 'এভরি নেটিভ.... আই বিলিভ, ইজ কোরাপ্ট।' অর্থাৎ প্রতিটি কালো চামড়ার মানুষ হল দুর্নীতিগ্রস্ত। বড়লাটমশাই, আপনি বেঁচে থাকলে দেখতেন, আপনার বংশধরেরা কেমনভাবে নীতির পিণ্ডি চটকে ছেড়েছে!