বেঙ্গালুরুর সবচেয়ে বড় কালীপুজোয় জমজমাট আয়োজনে মাত করল 'হট্টগোল'
শুধু একটি ক্লাব বা সংগঠন নয়। হট্টগোল বোধহয় তার থেকেও কিছু বেশি। মুষ্টিমেয় কয়েকজন বাঙালির হুজুগে ভাবনা থেকে তৈরি হট্টগোল এখন বেঙ্গালুরুর বুকে সবচেয়ে বড় কালীপুজোর আয়োজন করেছে।
শুধু একটি ক্লাব বা সংগঠন নয়। হট্টগোল বোধহয় তার থেকেও কিছু বেশি। মুষ্টিমেয় কয়েকজন বাঙালির হুজুগে ভাবনা থেকে তৈরি হট্টগোল এখন বেঙ্গালুরুর বুকে সবচেয়ে বড় কালীপুজোর আয়োজন করেছে। যা নিয়ে গর্বের শেষ নেই উদ্যোক্তাদের। বাংলার একেবারে খাঁটি বাঙালিয়ানাকে কয়েকজন বাঙালি মিলে তুলে নিয়ে এসেছেন দাক্ষিণাত্যে। একথা বললে অত্যুক্তি হয় না।
ক্লাব রয়েছে তবে ঠিকানা নেই। আয়োজক রয়েছেন তবে নেতা নেই। এভাবেই নিজেদের দেখেন হট্টগোলের সদস্যরা। জিজ্ঞাসা করায় জানা গেল, হট্টগোল-এর সদস্যরা সোশ্যাল সাইট ও নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখেন। যেকোনও বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন একে অপরের জন্য। শুধু একবার খোঁজ পেলেই হল। সকলে মিলে বিপদে পাশে থাকার চেষ্টা করেন।
এভাবেই আজ থেকে ছয় বছর আগে কোনও এক মাহেন্দ্রক্ষণে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কালীপুজো আয়োজনের হুজুগ চেপে বসে কয়েকজনের মাথায়। সেই শুরু। সালটা ২০১৩। সেবছরই বিনয়, অনুপম ও আরও কয়েকজন মিলে বিটিএম ফার্স্ট স্টেজের মাঠে ছোট্ট করে শ্যামা মায়ের আরাধনা শুরু করেন। প্রথমে মূর্তি ছোট ছিল। তবে ভাবনায় অনেকটা এগিয়ে ছিলেন সকলে।
তৈরি করে ফেলেন হট্টগোল। আর ধীরে ধীরে তাতে যোগ দিতে শুরু করেন পরিচিত থেকে শুরু করে আশপাশের অনেক বাঙা্লি। আবার যাঁরা পড়াশোনা বা চাকরির খোঁজে বেঙ্গালুরুতে এসেছেন, বিটিএম-এর কাছাকাছি থাকলে তাঁরাও এর খোঁজ জেনে এসে যোগ দিয়েছেন।
আর এভাবেই মাত্র ছয় বছরে কয়েকশো অ্যাক্টিভ সদস্য হয়ে গিয়েছে হট্টগোলের। কোনও স্বার্থ থেকে নয়, প্রবাসে বাংলা ও বাঙালিয়ানাকে বাঁচিয়ে রেখে শ্যামা মায়ের পুজোয় ব্রতী হয়েছেন এখানকার সদস্যরা। ফলে হইহই করে প্রতিবছর বাড়ছে পুজোর বহর।
অনুপমের মতো অনেকে মনে করেন এই পুজো করে তাঁরা অনেক ফল পেয়েছেন। অনেকে ভালো চাকরি নিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর তা সম্ভব হয়েছে এই পুজোয় এসে ভক্তিভরে মা-কে ডাকার ফলেই। তিনি নিজেও অনসাইটের দৌলতে সিডনিতে কর্মরত। কালীপুজোর জন্যই শুধুমাত্র এসেছেন। পুজো হলেই ফিরে যাবেন।
আগের বছরে প্রায় ১৫০০ মানুষ হট্টগোলের পুজোয় এসে ভোগ খেয়ে গিয়েছেন। খিচুড়ি, লাবড়া, চাটনি, পাপড় সহযোগে সকলে পাত পেড়ে খেয়ে যান। কোনও কার্পণ্য নেই। আয়োজকরা নিজেদের হাতে ধরে ভোগ বিতরণ করেন। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে একেবারে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন পুজোর কাজে। এবার ভিড় সেটাকেও ছাপিয়ে যাবে বলে সকলে মনে করছেন।
অনেকে রয়েছেন যাদের চাকরি সূত্রে বেঙ্গালুরু শহরের অন্য প্রান্তে চলে যেতে হয়েছে। তাঁরা এই কালীপুজোর সময় অবশ্যই আসেন। আর কেউ যদি আসতে না পারেন, নিজে যেচে চাঁদা পাঠিয়ে দেন। ফলে কোনওরকম বাহ্যিক আর্থিক সাহায্য ছাড়াই হট্টগোলের বাজেটের টাকা উঠে আসে নির্ঝঞ্ঝাটে। এভাবেই বাংলা থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে নিছক কালীপুজোর মধ্য দিয়ে বাঙালিয়ানাকে বাঁচিয়ে রেখেছে হট্টগোল।