কানাডায় নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর তালিকায় হিজবুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ
কানাডায় নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর তালিকায় হিজবুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ
কানাডা সরকারের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর তালিকায় হিজবুল মুজাহিদিনের নাম উঠে এসেছে। বলা হচ্ছে এই গোষ্ঠীটি বাংলাদেশে আইএস এর সহযোগী সংগঠন।
বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পক্ষ থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে যে, বাংলাদেশে এই নামে কোন সন্ত্রাসী সংগঠন নেই।
বিশ্বের কয়েকটি দেশের মতো কানাডাতেও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি অন্যতম উপায় হলো ক্রিমিনাল কোড বা চরমপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠীর নাম তালিকাবদ্ধ করা।
দেশটির সরকারি এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, কানাডার নাগরিকদের প্রত্যাশা যে তাদের সরকার দেশটির মূল্যবোধ, অধিকার এবং স্বাধীনচেতা বৈশিষ্ট্যকে সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তার অংশ হিসেবেই এবারে ১৩টি চরমপন্থী গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে ঘোষণা করে এই তালিকা প্রস্তুত করেছে কানাডার সরকার।
এ নিয়ে তাদের ক্রিমিনাল কোডে মোট ৭৩টি নাম সংযুক্ত হলো।
নতুন তালিকায় আইএস এর পাঁচটি সহযোগী গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি হলো - বাংলাদেশ হিজবুল মুজাহিদিন।
পাকিস্তান এবং ভারত শাসিত কাশ্মীর অঞ্চলে এই গ্রুপটির তৎপরতার বিষয়ে জানা গেলেও বাংলাদেশে এর অস্তিত্বের বিষয়টি এবারই প্রথম সামনে এলো।
কাশ্মীরে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে হিজবুল মুজাহিদিনের নেতা বুরহান ওয়ানির নিহত হওয়ার ঘটনা ব্যাপক বিক্ষোভ সহিংসতার জন্ম দেয়।
মূলত তখন থেকেই গণমাধ্যমের শিরোনামে এই চরমপন্থী সংগঠনটির নাম বার বার উঠে আসে।
আরও পড়তে পারেন:
হিজবুল নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুবার্ষিকীতে উত্তপ্ত কাশ্মীর
ভারতের কাশ্মীরে অপহৃত পুলিশের স্বজনেরা মুক্ত
জেগে ওঠার আওয়াজ দিচ্ছে ইসলামিক স্টেট
আল-শাবাব জঙ্গির নতুন জীবন: অস্ত্রবাহী ট্রাক ছেড়ে স্কুল বাসের ড্রাইভার
এছাড়া গত বছর বিভিন্ন সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এই বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত কমান্ডারদের নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ পায়।
তবে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের উপ কমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, হিজবুল মুজাহিদিন নামে বাংলাদেশে কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নেই।
এ কানাডার ওই তালিকার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
মি. ইসলাম বলেন, "হিজবুল মুজাহিদিন নামে বাংলাদেশে কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অস্তিত্ব আমাদের জানামতে নেই। কানাডার ওই তথ্যে সমস্যা আছে বলে আমার মনে হয়।"
ওই বিবৃতিতে হিজবুল মুজাহিদিন বাংলাদেশকে আইএস এর সহযোগী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করা হলেও মি. ইসলাম জানান, বাংলাদেশে আইএস বা এর কোন সহযোগী সংগঠন নেই।
"আইএস এর আদর্শে অনুপ্রাণিত একটি অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী সংগঠন আছে, যেটাকে আমরা বলি নব্য জেএমবি। তারা জেএমবির একটা ফ্যাকশন। কিন্তু হিজবুল মুজাহিদিনের বিষয়ে বা তাদের সাথে কোন গোষ্ঠীর যোগাযোগ আছে কিনা, সেটা আমাদের জানা নেই।" বলেন, মি. ইসলাম।
কানাডার ওই তালিকায় আইএস সংশ্লিষ্ট অন্যান্য গ্রুপগুলো হল: ইসলামিক স্টেট ইস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স, ইসলামিক স্টেট ইন গ্রেটার সাহারা, ইসলামিক স্টেট ইন লিবিয়া, ইসলামিক স্টেট ইন ইস্ট এশিয়া।
তালিকায় তিনটি আল-কায়েদার সহযোগী গোষ্ঠীর নামও স্থান পেয়েছে। সেগুলো হল, জামা'আত নুসরাত আল-ইসলাম ওয়াল-মুসলিমিন, ফ্রন্তে লিবারেশন ডু মেসিনা, এবং আনসার ডাইন।
এছাড়া চারটি গ্রুপ আছে যারা আদর্শিকভাবে হিংস্র চরমপন্থী। এর হল, অ্যাটম ওয়াফেন ডিভিশন, বেইস, দ্য প্রাউড বয়েজ এবং রাশিয়ান ইম্পেরিয়াল মুভমেন্ট।
এই গোষ্ঠীগুলোর সাম্প্রতিক তৎপরতা পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে আইনগত উপায়ে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
সেখানে বলা হয়েছে, যারা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে অংশ নিয়েছে, তাদের পক্ষে জেনেশুনে কাজ করেছে, সহযোগিতা বা মদদ যুগিয়েছে, নির্দেশনা দিয়েছে তাদেরকেই এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কানাডায় কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই তালিকার কারও সাথে জেনেশুনে অর্থ-সম্পদ লেনদেন করা গুরুতর অপরাধ। এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
তালিকাভুক্ত কারও কানাডায় কোন অর্থ-সম্পদ থাকলে, দেশটির ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো জব্দ করতে পারবে।
কানাডীয় দাতব্য সংস্থা যাদেরকে সহায়তা দিয়ে থাকে তাদের কারও সাথে এই তালিকার কারও যোগাযোগের প্রমাণ পেলে ওই সংস্থাটি তাদের সহায়তা তুলে নিতে পারবে।
এছাড়া কানাডায় আসতে ইচ্ছুক এমন কোন ব্যক্তির সাথে যদি এই তালিকার কারও সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে - তাহলে তার জন্য কানাডায় প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে দেশটির জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী বিল ব্লেয়ার বলেন,"কানাডায় সহিংস সন্ত্রাসবাদের কোনও স্থান নেই। সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোর এই ক্রিমিনাল কোড তালিকা চরমপন্থার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।"
"কানাডাবাসীর প্রত্যাশা যে সরকার তাদের সুরক্ষিত রাখবে এবং হিংস্র চরমপন্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কানাডা তাদের নাগরিক এবং বিশ্বজুড়ে দেশের স্বার্থের জন্য সন্ত্রাসবাদী হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।"
কানাডার এই সন্ত্রাসী তালিকা প্রস্তুত করা একটি চলমান প্রক্রিয়া।
এতে নতুন নাম শুধুমাত্র তখনই যুক্ত হয় যখন এর বিরুদ্ধে আইনগত প্রমাণ মেলে।
প্রতি পাঁচ বছর পর পর এই তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা হয়।