নোট বাতিলের প্রতিবাদে ২৮ নভেম্বর ভারত বনধ, মমতা মিছিল করবেন কলকাতায়
নোট বাতিলের প্রতিবাদে ২৮ নভেম্বর ভারত বনধের ডাক দিয়েছে বিরোধীরা। ক্রমশই বিরোধীদের সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলনের চেহারাটা বৃহৎ আকার নিচ্ছে।
নয়াদিল্লি ও কলকাতা, ২৫ নভেম্বর : নোট বাতিলের প্রতিবাদে ২৮ নভেম্বর ভারত বনধের ডাক দিয়েছে বিরোধীরা। ক্রমশই বিরোধীদের সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলনের চেহারাটা বৃহৎ আকার নিচ্ছে। তবু নরেন্দ্র মোদি নোট ইস্যুতে সংসদে নীরব। দেশজুড়ে আন্দোলনে নেমেছে অন্তত ১৩টি বিরোধী দল। এরই মধ্যে ভারত বনধে কেমন সাড়া মেলে তার উপর নির্ভর করছে বিরোধীদের এককাট্টা হওয়ার সফলতা।
এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওইদিন কলকাতার রাজপথে নোট বাতিলের প্রতিবাদে মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন। বনধ বিরোধী মমতা, ওই মিলিত আন্দোলন থেকে একটু দূরে সরে একেবারে আলাদাভাবে প্রতিবাদ জানাবেন কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।
সাধারণ মানুষের হেনস্থার প্রতিবাদে আবারও মহানগরের রাজপথে নেমে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করার পিছনে মমতার দু'টি উদ্দেশ্য পূরণ হবে। এক, গত ২৪ নভেম্বর তিনি ছিলেন না মহানগরের মিছিলে। ফলে ঝড় ওঠেনি প্রতিবাদের। সেই ঝড় তিনি তুলচে চান ২৮শে। দুই, বিরোধীরা যে সঙ্ঘবদ্ধভাবে বনধের ডাক দিয়েছে, তার সরাসরি বিরোধিতা না করেও আন্দোলনে জারি রয়েছেন, তা দেখানো যাবে।
৮ নভেম্বর দেশে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কোনও হোমওয়ার্ক ছাড়াই এই কাজ করতে গিয়ে দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের কপালে দুর্ভোগ নেমে আসে। ১৮ দিন পরও দেশের মানুষকে সেই সঙ্কট থেকে বের করে আনতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর সরকার। এখনও এটিএম পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি। স্বাভাবিক হয়নি ব্যাঙ্কের লেনদেন। এখনও বিকল্প টাকার জোগান দিতেই অপারগ সরকার।
এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে বিরোধী দলগুলি কেন্দ্রের এই জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এক হয়েছেন। গত ১৬ নভেম্বর থেকেই বিরোধীদের সম্মিলীত আন্দোলন প্রত্যক্ষ করেছেন দেশবাশী। সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন একযোগে। এই নোট-কাণ্ড এক ছাতার তলায় এনে দিয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ একাধিক বিরুদ্ধ মনোভাবাপন্ন দলকে। এমনকী সিপিএমও নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে এই মিলিত আন্দোলনের ধারায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজধানি দিল্লি আলোড়িত হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়া থেকে শুরু করে রাজধানিতে মিছিল, তারপর যন্তরমন্তরে ধরনা- আপ থেকে শিবসেনা, সমাজবাদী পার্টি থেকে বহুজন সমাবজবাদী পার্টি, কংগ্রেস নেতৃত্ব সবাই শামিল হয়েছেন। সংসদের সামনে দফায় দফায় বিক্ষোভ চলেছে। সংসদের ভিতরে মিলিত কণ্ঠে গর্জে উঠেছেন বিরোধী সাংসদরা।
তারপরই সুর নরম করে মোদি আলোচনা করতে চেয়েছেন মমতার সঙ্গে। এদিকে বিরোধীরা মোদিকে সংসদে উপস্থিত হয়ে বিরোধীদের প্রশ্নবানের মোকাবিলা করার আর্জি জানানো হয়েছে। এরই মধ্য সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন মোদি। কিন্তু অন্তত ১৩টি বিরোধী দলকে এই বৈঠকে না ডাকায়, ভেস্তে গিয়েছে সর্বদল। বিরোধীদের দাবি তাঁরা সম্মিলিতভাবে আলোচনা চান। কোনওভাবেই এককভাবে আলোচনা নয়, তাই কোনওভাবেই তারা আন্দোলন লঘু করতে নারাজ। ২৮ নভেম্বর তাই একসঙ্গে গর্জে উঠবে গোটা দেশ, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বিরোধী পক্ষে। সরকার পক্ষ বিরোধীদের এই কর্মসূচিকে কীভাবে মোকাবিলা করে, তাই দেখার।
এদিকে আজ পশ্চিমবঙ্গের ব্লকে ব্লকে পালিত হচ্ছে প্রতিবাদ কর্মসূচি। ২৬ নভেম্বর সাধারণ মানুষকে নিয়ে শহরের বুকে প্রতিবাদ কর্মসূচি রূপায়ণ করবে তৃণমূল নেতৃত্ব। তারপর আগামী ২৮ নভেম্বর প্রতিবাদ মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। ওই দিন বেলা ১টায় ফের কলকাতার কলেজ স্কয়্যার থেকে মিছিল শুরু হবে। ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মিছিলটি আসবে। ওইদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলীয় নেতৃত্ব শহরের প্রধান প্রধান ব্যাঙ্কের সামনেও ধরনা দেবেন।