সফল হল অগ্নি ৫ -এর ষষ্ঠ পরীক্ষাও
রবিবার উড়িষ্যা উপকূল থেকে ষষ্ঠবারের জন্য অগ্নি ৫ ক্ষেপণাস্ত্রের উফক্ষেপণ পরীক্ষা সফল হল।
ফের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে সাফল্য পেল ভারত। রবিবার ওড়িষা উপকূলে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি, পরমাণু অস্ত্র বহনক্ষম, ৫০০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি - ৫ এর সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের ডঃ আব্দুল কালাম দ্বীপে ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জ (আইটিআর) - এর ৪ নম্বর লঞ্চ প্যাড থেকে, সকাল ৯টা বাজে ৪৮ মিনিটে, একটি মোবাইল লঞ্চারের সাহায্যে এই ভূমি থেকে ভূমি ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করা হয়। এর আগে এই অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রটির আরও পাঁচটি ট্রায়াল হয়েছে। এদিনের ট্রায়ালে ক্ষেপণাস্ত্রটি তার পাল্লা ক্ষমতার সম্পূর্ণ দূরত্বটাই সফলভাবে পার করেছে। প্রতিরক্ষা সূত্রটি জানায়, 'ক্ষেপণাস্ত্রটির ফ্লাইট পারফরম্যান্স ট্র্যাক করা হয়েছে, এবং একাধিক রেডার, ট্র্যাকিং যন্ত্র এবং অবজারভেশন স্টেশনগুলির গুলির মাধ্যমে এর সম্পূর্ণ অভিযানটি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।'
অগ্নি সিরিজের অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্রের থেকে, নেভিগেশন. গাইডেন্স, ওয়ারহেড, ইঞ্জিন সব দিক থেকেই অনেক উন্নত প্রযুক্তি অগ্নি - ৫'এ ব্যবহার করা হয়েছে। অগ্নি - ৫ এর সঙ্গে এই ট্রায়ালে দেশীয় সেই প্রযুক্তিগুলিরও পরীক্ষা সফল হয়েছে। এর ন্যাভিগেশন সিস্টেমে, হাই অ্যাকিউরেসির 'রিং লেজার জাইরো-বেসড ইনার্শিয়াল ন্যাভিগেশন সিস্টেম বা 'রিনস' এবং সবচেয়ে আধুনিক এবং সঠিক 'মাইক্রো ন্যাভিগেশন সিস্টেম' বা 'মিনস' ব্যবহার করা হয়েচে। এর ফলে ক্ষেপণাস্ত্রটি নির্দিষ্ট নিশানার কয়েক মিটারের মধ্যেই আঘাত হানতে পারবে। সেইসঙ্গে ভেতরে হাইস্পীড অনবোর্ড কম্পিউটার এবং ফল্ট-টলারেন্ট সফ্টওয়্যার এবং বাইরে একটি শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য খোল ক্ষেপণাস্ত্রটির যাত্রা মসৃণ করেছে।
এই প্রযুক্তিগুলি কাজে লাগিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রটি এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে যে এটি তার গতিপথের শীর্ষে পৌঁছানোর পরে, এর মুখ পৃথিবীর দিকে ঘুরে যায়। এরপর পৃথিবীর মহাকর্ষ বলের টানে গতি বাড়িয়ে নেমে আসে নির্ধারিত লক্ষ্যের দিকে। ক্ষেপণাস্ত্র পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার পর বাতাসের সঙ্গে সংঘর্ষে এর তাপমাত্রা ৪০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে উঠে যায়। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি মোকাবিলা করার জন্য দেশীয় প্রযুক্তিতে বিকশিত কার্বন-কার্বন কম্পোজি'এর উত্তাপ-ঢাল দেওয়া হয়েচে। যেটি নিজে পুড়ে ভেতরের তাপমাত্রাকে ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস নীচেই বজায় রাখে। এরপর এর উন্নত নেভিগেশন সিস্টেমের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্রটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানে।
এদিনের পরীক্ষায় এই প্রত্যেকটি ধাপই সফল হয়েছে বলে জানিয়েচেন প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা। ক্ষেপণাস্ত্রটিকে তার যাত্রাপথের মধ্যবর্তী এলাকায় এবং লক্ষ্যমাত্রা কাছাকাছি অবস্থিত জাহাজগুলি থেকে ট্র্যাক করে হয়েছে। সেখান থেকে চূড়ান্ত বিস্ফোরণটিও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
এই দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রটি ছাড়াও ভারতের হাতে মাঝারি ও দূরপাল্লার বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। আছে অগ্নি - ১ (পাল্লা ৭০০ কিলোমিটার), অগ্নি-২(পাল্লা ২০০০ কিলোমিটার), অগ্নি-৩ (পাল্লা ২৫০০ কিলোমিটার) এবং অগ্নি -4 (পাল্লা ৩৫০০ কিলোমিটার)। অগ্নি - ৫ এর প্রথম পরীক্ষাটি হয়েছিল ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল। তারপর ২০১৩-র ১৫ সেপ্টেম্বর হয় দ্বিতীয় পরীক্ষা, ২০১৫ -র ৩১ জানুয়ারি তৃতীয়, ২০১৬-র ২6 শে ডিসেম্বর চতুর্থ ও শেষ পরীক্ষাটি হয়েছিল এবছরেরই ১৮ জানুয়ারি। আজকের মতো এর আগের পাঁচবারের পরীক্ষাও সফল হয়েছিল। এরপর 'অগ্নী ফাইভ' ক্ষেপণাস্ত্র তুলে দেওয়া হবে স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড বা এসএফসির হাতে।