গম, ভোজ্যতেলের পর এবার চিনি নিয়ে বড়সড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল কেন্দ্র সরকার
গম, ভোজ্যতেলের পর এবার চিনি নিয়ে বড়সড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল কেন্দ্র সরকার
মূল্যবৃদ্ধি থেকে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। গম, ভোজ্য তেল, পেট্রোল–ডিজেলের পর এবার চিনি নিয়ে বড়সড় সিদ্ধান্ত নিয়ে বসল সরকার। মঙ্গলবার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে ১ জুন থেকে চিনি রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। দেশীয় বাজারে এই গুরুত্বপূর্ণ পণ্যটির উপলব্ধতা বাড়ানো ও মূল্যবৃদ্ধি রোধ করার লক্ষ্যে এটি সরকারের একটি পদক্ষেপ।
চিনি রপ্তানিতে বিধিনিষেধ
ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেন ট্রেডের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, 'অপরিশোধিত, পরিশোধিত এবং সাদা চিনির রপ্তানি ২০২২ সালের ১ জুন থেকে নিয়ন্ত্রিত করা হবে ৷' ডিজিএফটি-র এই নির্দেশিকা ১ জুন থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কার্যকরী থাকবে ৷ তবে বিজ্ঞপ্তিতে এও বলা হয়েছে যে সিএক্সএল ও টিআরকিউ-এর অধীনে থাকা ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা চিনির ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞাগুলি প্রযোজ্য হবে না। সিএলএক্স ও টিকিউআরের অধীনে এই দেশগুলিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চিনি রপ্তানি করা হয়। প্রসঙ্গত, এর আগে এর আগে সূর্যমুখী এবং সয়াবিন তেল আমদানিতে শুল্ক বাতিল করে সরকার। এই সিদ্ধান্তের প্রভাব সরাসরি পড়বে ভোজ্যতেলের দামে।
১ জুন থেকে চিনি রপ্তানি নিষিদ্ধ
এক বিবৃতিতে সরকার জানিয়েছে যে ২০২১-২২ সালে চিনির মরসুমে (অক্টোবর-সেপ্টেম্বর) দেশে চিনির অভ্যন্তরীণ উপলব্ধতা এবং দামের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য, ১ জুন থেকে চিনি রপ্তানি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়াও চিনির মরসুমে অভ্যন্তরীণ উপলব্ধতা এবং দামের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য, ১০০ এলএমটি (লাখ মেট্রিক টন) পর্যন্ত চিনি রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে খাদ্য দফতরের অধীনে ডিরেক্টরেট অফ সুগার-এর বিশেষ অনুমতি নিয়ে চিনি বাইরের দেশে রপ্তানি করা যাবে ৷ প্রসঙ্গত, চিনির রেকর্ড রপ্তানির কারণেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।
২০১৭ থেকে ২০২০ চিনির রপ্তানি
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ সালে চিনির মরশুমে যথাক্রমে ৬.২ এলএমটি, ৩৮ এলএমটি ও ৫৯.৬০ এলএমটি চিনি রপ্তানি করা হয়েছিল। এরপর অবশ্য ২০২০-২১ সালে ফের চিনির মরশুমে ৬০ এলএমটির লক্ষ্যের বিপরীতে গিয়ে ৭০ এলএমটি চিনি রপ্তানি করা হয়। তবে ২০২১-২২ সালের বর্তমান চিনির মরশুমে ৯০ এলএমটি চিনি রপ্তানি করার চুক্তিতে সই হয়ে গিয়েছে, যার মধ্যে ৮২ এলএমটি চিনি সুগার মিল থেকে প্রেরণ করা হয়ে গিয়েছে রপ্তানির জন্য এবং ৭৮ এলএমটি চিনি রপ্তানি করা হয়ে গিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ সালের বর্তমান চিনির মরশুমে চিনি রপ্তানি ঐতিহাসিকভাবে সর্বোচ্চ ছিল।
অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য চিনির শেষ মজুত কাজে লাগবে
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'এই সিদ্ধান্তটি নিশ্চিত করবে যে চিনির মরশুমের শেষের দিকে (৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২) চিনির শেষ মজুত ৬০-৬৫ এলএমটি থাকে যা ২-৩ মাসের স্টক (মাসিক প্রয়োজন প্রায় ২৪ এলএমটি) অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয়।' এর সঙ্গে যোগ করে বলা হয় যে কর্নাটকে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরে মহারাষ্ট্রে ও নভেম্বরে উত্তরপ্রদেশে চিনির নতুন মরশুম শুরু হয়ে গিয়েছে। সরকার বলেছে, 'তাই সাধারণত, নভেম্বর পর্যন্ত, চিনির সরবরাহ আগের বছরের মজুত থেকে হয়।' সরকার আরও বলে, 'চিনির রপ্তানিতে অভূতপূর্ব বৃদ্ধি এবং দেশে চিনির পর্যাপ্ত মজুত বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রেখে দেশের সাধারণ নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ভারত সরকার চিনির রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'
সরকার চিনির সেক্টরের ওপর নজর রাখছে
চিনির কারখানা ও রপ্তানীকারীদের খাদ্য ও জন বন্টন বিভাগের ডিরেক্টরেট অফ সুগারের কাছ থেকে এক্সপোর্ট রিলিস অর্ডার (ইআরওএস) নিতে হবে অনুমোদনের জন্য। দেশজুড়ে চিনির সেক্টর সহ চিনি উৎপাদন, খরচ, রপ্তানির পাশাপাশি পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামের প্রবণতার ওপর সরকার ক্রমাগত নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছেন।
চিনি রপ্তানি ও সর্বোচ্চ উৎপাদনে ভারত দ্বিতীয়
ভারত চলতি বছরে বিশ্বের সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম চিনি রপ্তানিকারক দেশ হয়ে উঠেছে। সরকারের নিয়মিত প্রচেষ্টার ফলে, ২০২১-২২ সালের চিনি মরশুমে ৯৯.৫ শতাংশ আখের বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে এবং চলতি চিনি মরশুম ২০২১-২২ সালের আখের বকেয়া প্রায় ৮৫ শতাংশ কৃষকদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতে চিনির পাইকারি দাম প্রতি কুইন্টাল ৩,১৫০-৩,৫০০ টাকার মধ্যে এবং খুচরা মূল্যও দেশের বিভিন্ন অংশে প্রতি কিলোগ্রাম ৩৬-৪৪ টাকার মধ্যে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে।
লক্ষ্য মুদ্রাস্ফীতি আটকানো, বন্ধ চিনি রফতানি , শুল্ক বাতিল সোয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলে