করোনার পর জিকা ভাইরাসের 'হটস্পট' কানপুর, জানুন কী কারণে বাড়ছে সংক্রমণ
করোনার পর জিকা ভাইরাসের 'হটস্পট' কানপুর, জানুন কী কারণে বাড়ছে সংক্রমণ
উত্তর প্রদেশের কানপুরে তিনজন ভারতীয় বায়ুসেনার কর্মী সহ আরও ১০ জন জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত৷ সংক্রমিতের মোট সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৮৯-এ পৌঁছেছে। সম্প্রতি কানপুর মশা-বাহিত এই রোগের একটি হটস্পট হয়ে উঠেছে। শহরজুড়ে জারি করা হয়েছে সতর্কতা। জিকার সংক্রমণ রোধের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা একটি নিয়ন্ত্রণ অভিযানও চালু করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই স্থানীয় স্বাস্থ্যবিভাগ ৫২৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছে। এঁরা কোনও না কোনও সময় সংক্রামিত ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে ছিলেন৷
কারা সংক্রমিত?
প্রসঙ্গত, ২৩ অক্টোবর কানপুর শহরে জিকা ভাইরাসের প্রথম কেস রিপোর্ট করা হয়। সে সময় ভারতীয় বায়ুসেনার এর একজন ওয়ারেন্ট অফিসার জিকো সংক্রমিত হয়েছিলেন৷ জানা গিয়েছে কানপুরে জিকা ভাইরাসে সংক্রমিত ৮৯ জন ব্যক্তির মধ্যে ৫৫ জন পুরুষ এবং ৩৪ জন মহিলা। এর মধ্যে ২৩ জনের বয়স ২১ বছরের কম। মোট সংক্রামিত ব্যক্তির মধ্যে ১২ জন ভারতীয় বিমান বাহিনীর (IAF) কর্মী। সংক্রমিত বায়ুসেনা কর্মীদের মধ্যে ১১ জন পুরুষ ও একজন নারী রয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্যবিভাগ বৃহস্পতি, শুক্র এবং শনিবার ৫২৫ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছিল যা পরীক্ষার জন্য লখনউয়ের কিং জর্জ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজি ল্যাব এবং পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজিতে পাঠানো হয়েছিল৷
জিকা ভাইরাস কি?
১৯৪৭ সালে উগান্ডার বানরে প্রথম দেখা গিয়েছিল এই জিকা ভাইরাসের খোঁজ মেলে। ১৯৫২ সালে জিকার প্রথম সংক্রমণ মানুষের মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল। এই বিশেষ ভাইরাসটি সাধারণত সংক্রমিত হয় মশার কামড়ের মাধ্যমে সৌভাগ্যক্রমে সমস্ত মশা এই রোগের কারণ হতে পারে না এবং সংক্রামিত মশা দ্বারা কামড়ানো প্রত্যেক ব্যক্তি জিকায় সংক্রমিত হবেন এমনটা নয়।
কিভাবে ভাইরাস ছড়ায়?
জিকা ভাইরাস মূলত সংক্রামিত এডিস প্রজাতির মশার কামড়ে ছড়ায়। তবে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ সম্ভব। সংক্রামিত সঙ্গীর সাথে যৌনতা, যোনি, পায়ুপথ, মৌখিকভাবে এই ভাইরাস সংক্রমণ করতে পারে। এই ভাইরাস একটি সংক্রামিত গর্ভবতী মহিলা থেকে তার ভ্রূণে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমেও সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
জিকা ভাইরাসের লক্ষণগুলো কী কী?
জিকায় সংক্রমিত হলে সাধারণত জ্বর, ফুসকুড়ি, মাথাব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, পেশীতে ব্যথা, কনজাংটিভাইটিস, চোখ লাল হয়ে যাওয়া সহ সাধারণ ফ্লুর মতো হয়। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অনুসারে জিকার কারণে মৃত্যু খুব একটা হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এই ভাইরাসের লক্ষণগুলি হালকা হয় এবং খুব গুরুতর ক্ষেত্রে রোগীর হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়।
কেন হটস্পট হয়ে উঠেছে কানপুর?
জিকা ভাইরাস গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে দেখা দেয় যেখানে মশার সংখ্যা বেশি। বর্ষার বৃষ্টি এই অঞ্চলগুলিকে মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত করে। সংক্রামিত এডিস মশার কামড়ে মানুষ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। একই ধরনের মশা যা ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং হলুদ জ্বর ছড়ায়। যারা সক্রিয় জিকা সংক্রমণের এলাকায় বসবাস করেন বা ভ্রমণ করেন তাঁদেরই জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এভাবেই সংক্রমণের হটস্পট হয়ে উঠেছে কানপুর।
প্রতীকী ছবি