২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে দেশে মোট ৩৫৭ বার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে
২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে দেশে মোট ৩৫৭ বার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়
উস্কানিমূলক গুজব বা আপত্তিকর কোনও পোস্ট অথবা ভুয়ো খবর। সবকিছুরই মাধ্যম হয়ে উঠেছে এই সোশ্যাল মিডিয়া। তাই দেশে কোনও হিংসাত্মক বা সাম্প্রদায়িক কোনও ঘটনা ঘটলে সরকার চেষ্টা করে সবার প্রথম এই ইন্টারনেটকে বন্ধ করতে। সম্প্রতি কেন্দ্র সরকার জম্মু–কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা, যা রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দিচ্ছিল, তা উঠিয়ে নেওয়া হয় এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ হয় সংসদে। সরকারের এই দুই সিদ্ধান্তই গোটা দেশের চেহারা আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন অংশে চলছে হিংসাত্মক প্রতিবাদ–বিক্ষোভ। গুজব বা অন্য কোনও ভুয়ো খবর যাতে না ছড়াতে পারে এবং হিংসা রোধ করতে প্রশাসন বাধ্য হয় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখতে।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ডাটা ইন্টালিজেন্স ইউনিট (ডিউ) গবেষণা করে দেখেছে যে দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হওয়ার মুখ্য দুই কারণই হল জঙ্গি কার্যকলাপ এবং সাম্প্রদায়িক অশান্তি। এসএলএফসি ডট ইন এবং ইন্টারনেটসাটডাউনস ডট কম–এর তৈরি করা তথ্যে জানা গিয়েছে যে ভারতে ২০১৪ সাল থেকে মোট ৩৫৭ বার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়।
টাইমলাইন
ভারতে ২০১৪ সালে ছ'বার, ২০১৫ সালে তা বেড়ে ১৪ বার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে সেটি দ্বিগুণ বেড়ে হয় ৩১ বার এবং তার পরের বছর তা ৭৯তে পৌঁছায়। ২০১৮ সালে ১৩৪ বার এবং ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৯৩বার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে রাখা হয়। অন্য এক ইন্টারনেট সংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে জানা গিয়েছে যে ২০১৮ সালে বিশ্বের ৬৭ শতাংশ ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল, যা ভারতের থেকে কম। একই সংস্থা থেকে সংগৃহীত তথ্য থেকে জানা গিয়েছে যে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বিশ্বের মধ্যে ভারতে সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে। জুলাইয়ের শেষে গিয়ে তা দাঁড়িয়েছে ৮০ বার। যেটি বিশ্বের ইন্টারনেট বন্ধের ৬৭ শতাংশ (১২০ বার)।
কাশ্মীরে সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট বন্ধ হয়েছে
ডিউ দেশের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হওয়ার তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ কোনও একটি বিশেষ জায়গাকে প্রভাবিত করেছে। সেখানকার তথ্যই সামনে এনেছে ডিউ। দেখা গিয়েছে জম্মু-কাশ্মীরেই সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পুলওয়ামাতে বিভিন্ন সময়ে মোট ১৫ বার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল। ২০১৯ সালে ভারতে ৯৩ বার ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয় ১৬৭টি এলাকায়। এর মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরে সবচেয়ে বেশি ৫৩ বার, যার প্রভাব পড়েছিল ৯৩টি অঞ্চলে। যা এ বছর ভারতে প্রভাবিত মোট ইন্টারনেট শাটডাউন ঘোষণার ৫৯ শতাংশ এবং মোট এলাকার ৫৬ শতাংশ। ৫ আগস্টের পর কেন্দ্র সরকার উপত্যকাকে দু'টি খণ্ডে ভাগ করে দেয় এবং ৩৭০ ধারা উঠিয়ে নেয়। এর কারণে দীর্ঘদিন ধরে জম্মু-কাশ্মীরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল। এছাড়াও জঙ্গি-কার্যকলাপ রুখতেও অনেকসময় ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা হয়েছিল।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে জঙ্গি হামলার জেরে ভারত ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানকে হারায়। ডিউয়ের তথ্যে জানা গিয়েছে, এই পুলওয়ামায় বেশ কয়েকবার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই এলাকাতেই প্রভাব পড়েছে বেশি। এখানে প্রায় ১৫ বার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়াও কাশ্মীরের পুলওয়ামা ছাড়াও সোপিয়ান (১১), কুলগাম (৯), বারামুল্লা (৯), অনন্তনাগ (৮), কুপওয়ারা (৬), শ্রীনগর (৬) এবং বদগামে (৫) ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল।
কাশ্মীর ছাড়াও দেশের অন্য রাজ্য
কাশ্মীরের পরই দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে কংগ্রেস শাসিত রাজ্য রাজস্থান। এখানেও মোট ১৮ বার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল। সাম্প্রদায়িক হিংসা রুখতে এবং উস্কানিমূলক প্রচার বন্ধ করতেই এটি করা হয়। রাজস্থানের পর অসম (১২), উত্তরপ্রদেশ (১১) ও পশ্চিমবঙ্গে (৯) ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল।
নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে পদ্মশ্রী ফেরাচ্ছেন উর্দু ব্যঙ্গ রচয়িতা মুজতবা হোসেন