For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

মহারাজার কন্যা গৌরীর বেশে নিজবালিয়া গ্রামে এসেছিলেন দেবী, তারপরেই শুরু হয় সিংহবাহিনী পুজো

মহারাজার কন্যা গৌরীর বেশে নিজবালিয়া গ্রামে এসেছিলেন দেবী, তারপরেই শুরু হয় সিংহবাহিনী পুজো

Google Oneindia Bengali News

দেবী সিংহ বাহিনীর নাম শোনেননি এরকম মানুষ বোধহয় কম ই আছেন। হাওড়া জেলার জগৎবল্লভপুর ব্লকের নিজবালিয়া গ্রামে দেবীর অবস্থান। নিজবালিয়া গ্রাম প্রাচীন বালিয়া পরগণার অন্তর্গত ছিল। পাঁতিহাল গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে 'বালিয়া' শব্দ যুক্ত এই গ্রাম নামের উৎপত্তি সম্ভবত এই এলাকায় বালি মাটির আধিক্য বেশি থাকার জন্যই হয়েছে। জগৎবল্লভপুর থানা এলাকায় 'বালিয়া' শব্দ যুক্ত আরও কয়েকটি গ্রাম পাওয়া যায় সেগুলো হল- গড়বালিয়া ,নিমাবালিয়া,বাদেবালিয়া, যমুনাবালিয়া ,বালিয়া-রামপুর,বালিয়া-ইছাপুর, বালিয়া-পাইকপাড়া,বালিয়া-প্রতাপপুর, ইত্যাদি।

মহারাজার কন্যা গৌরীর বেশে নিজবালিয়া গ্রামে এসেছিলেন দেবী, তারপরেই শুরু হয় সিংহবাহিনী পুজো

গ্রামের নামগুলো থেকেই অনুমান করা যায় এক সময় এই এলাকা গুলো বালিয়া পরগণার অন্তর্গত ছিল। বর্তমানে বালিয়া কথাটি অপভ্রংশ হয়ে বেলে নামে পরিচিতি লাভ করেছে। নিজবালিয়া নামের পিছনে গবেষকরা অনুমান করেছেন যে একসময় এই এলাকাটি কোনো এক প্রতাপন্বিত রাজার নিজ অর্থাৎ, খাস এলাকা ছিল। তাদের অনুমানের স্বপক্ষে অদূরবর্তী "ভূরশুট - রনমহল" গ্রামটির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। রনমহল গ্রাম টির নাম রাজা রনসিংহ রায় এর নাম অনুসারে হয়েছে। যিনি ছিলেন ভূরশুট রাজবংশের বংশধর।

এবার আসা দেবী সিংহ বাহিনীর কথায়। বালিয়া পরগণার মধ্যমনি হয়ে যিনি নিজবালিয়া গ্রামে বিরাজ করছেন। দেবীর আবির্ভাব ও প্রতিষ্ঠা নিয়ে লোকমুখে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে। আনুমানিক খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে কোনো এক সময় নিজবালিয়া গ্রামে শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত মনিরাম চক্রবর্তী বাস করতেন। তিনি গৃহী হলেও বসত বাটীর সন্নিকটে এক প্রকান্ড নিম গাছের তলায় নিয়মিত যোগ সাধনা করতেন।

একদিন সন্ধ্যাবেলায় তিনি নিম গাছের তলায় বসে যোগ সাধনা করছেন। হঠাৎই এক রত্নাংলকারে ভূষিতা কিশোরী ব্রাহ্মণকে দেখা দিলেন। ব্রাহ্মণ কন্যাটির কাছে পরিচয় জানতে চাইলে, কন্যা টি বলেন, " আমি বর্ধমানের মহারাজার কন্যা, নায়েবের সাথে বাবার জমিদারি দেখতে এসেছি"। এই কথা বলে কন্যাটি আশ্রম সংলগ্ন নিম গাছের তলায় বসলেন। ব্রাহ্মণ তার স্ত্রী কে ডাকতে গেলেন, তার কিছুক্ষণ পরেই তারা চলে এলেন এবং এসে দেখলেন সেই কন্যাটি নেই।

ব্রাহ্মণ অবাক হলেন, ওই দিন ঠিক ওই একই সময়ে বর্ধমানের মহারাজার কাছে স্বপ্নাদেশ হয়। পরবর্তী সময়ে জানা যায় দেবী সিংহবাহিনী মহারাজার কন্যা গৌরীর বেশে নিজবালিয়া গ্রামে এসেছিলেন। স্বপ্নে দেবী মহারাজাকে আরও জানান যে মনিরামের বসত বাটী সংলগ্ন যে নিম গাছের তলায় তিনি বসেছিলেন। সেই নিম গাছের কাঠ দিয়েই যেন তাঁর মূর্তি তৈরী হয়। মায়ের আদেশ মতো মহারাজা নিজবালিয়া গ্রামের মধ্যস্থলে জোড়বাংলো সহ সুরম্য বিশাল মন্দির নির্মাণ করলেন। মূর্তির কাজ সম্পন্ন হলে শুভ দিনে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করলেন।

মনিরাম চক্রবর্তীকে মহারাজ প্রধান পুরোহিত হিসেবে নিযুক্ত করলেন। একই সঙ্গে দেবীর নিত্য পুজোর জন্য সূপকার,মালাকার, কুম্ভকার, কর্মকার, গোয়ালা, ময়রা, জেলে, পরিচারিকা, ঢুলি বব্যস্থা করলেন। দেবীর নিত্য ভোগের মাছের জন্য মন্দিরের পাশে পুষ্করিণী খনন করালেন এবং বাজার বসালেন। সারা বছর দেবীর পুজার ব্যয়ভার বহন করার জন্য ৩৬৫বিঘা জমি দেবী সিংহ বাহিনীর নামে করে দিলেন।

দেবীর প্রতিষ্ঠা নিয়ে আরও একটি কথা প্রচলিত আছে। সেটি হল দেবী মন্দিরের নাট মন্দিরে গেলে চোখে পড়বে, একটি চার পঙতির লিপি যাতে লেখা আছে " শ্রী রামনারায়ণ মারিক/সাং কলিকাতা সকাবদা ১৭১২সন/ ১১৯৭সাল/মাস অগ্ৰহায়ন।" এলাকার ভূমিপুত্র আঞ্চলিক ইতিহাসের গবেষক শ্রী শিবেন্দু মান্না তাঁর এক গবেষনা পত্রে বলেন দেবী ও দেবী মন্দিরের নির্মাণকাল অন্ততপক্ষে ষোড়শ শতক বলে গণ্য করা উচিত। এর স্বপক্ষে তিনি অনেক প্রমাণ ও দিয়েছিলেন।

দেবী এখানে অষ্টভুজা কাঞ্চনবর্ণা, উচ্চতা দেড় মিটার। তার ডান দিকের হস্তসমূহে অসি,বাণ ও পাশ, এবং বামদিকের হস্তসমূহে ঢাল, ধনুর্বাণ, শঙ্খ। অবশিষ্ট বাম ও ডান হাত দুটি বর ও অভয়মুদ্রা। দেবী শ্বেত সিংহের উপর বসে আছেন। পুরো মূর্তিটি নিমকাঠ দিয়ে তৈরি। দেবীর পিছনে চালচিত্রের মাথায় নন্দী সহ মহাদেব এবং দুই দিকে দশমহাবিদ্যা ও বিষ্ণুর দশ অবতার অঙ্কিত আছে। দেবীর নিত্য অন্নভোগ হয়ে থাকে।

সারা বছরই বালিয়া পরগনার মানুষ দেবীকে কেন্দ্র করে নানা উৎসবে মেতে ওঠেন। দেবীর বাৎসরিক পুজা অনুষ্ঠিত হয় সীতানবমী তিথিতে। রামনবমীর একমাস পরে বৈশাখ মাসে হয়ে থাকে। সীতানবমীর তিন দিন আগে থেকে শুরু হয় চণ্ডীপাঠ। পুজার দিন বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত কুড়িজন ব্রাহ্মণ সমবেত চণ্ডীপাঠ করেন। হয় মায়ের বিশেষ পুজো, আরতি ও গ্রামের কল্যাণার্থে বিশেষ হোমযঞ্জ।

সন্ধায় হয় আতশবাজির প্রদর্শনী। পুজোর পরদিন হয় সিংহবাহিনী দেবীর অন্নকূট মহোৎসব। নাটমণ্ডপের মাঝখানে দেবীর জিহ্বা সমান অন্ন চূড় করে রাখা হয় এবং সিলিং থেকে একটি ঘটিতে ঘি ভর্তি করে রাখা হয় এবং ঘটিটির তলায় একটি ছিদ্র করা থাকে সেখান থেকে ঘি অন্নের উপর পরে, সে এক অদ্ভুত দৃশ্য।

দেবীর পূজা উপলক্ষে মন্দির সংলগ্ন জায়গায় মেলা বসে এবং কয়েকদিন ব্যাপী যাত্রা ও নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। বালিয়া সহ পাশ্ববর্তী অঞ্চল গুলিতে দেবীর প্রভাব লক্ষ করা যায়। দেবী সিংহবাহিনী যেহেতু দুর্গাই ভিন্ন রূপ তাই বালিয়া অঞ্চলে কোথাও শারদীয়া দুর্গা পূজা হয় না। এলাকার মানুষজন দুর্গা পূজার কয়েকদিন মা সিংহবাহিনীকেই দুর্গা রূপে পূজা করেন ও অঞ্জলি দেন।

নবমীতে হয় বলিদান।নিজবালিয়ার পাশ্ববর্তী গ্রাম পাঁতিহালের বর্ধিষ্ণু রায় পরিবারে অনুরূপ সিংহবাহিনী দুর্গার মূর্তিতে শারদীয়া দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তাই তারাও দুর্গা নবমীতে প্রথা মেনে পূজা দিয়ে যান। লোকমুখে দেবীকে নিয়ে অনেক মাহাত্ম্য প্রচলিত আছে। দেবীর বাৎসরিক উৎসব অর্থাৎ, সীতানবমী তিথিতে সকালে বহু মানুষ বাঁকে করে সূদুর গঙ্গা থেকে হেঁটে গঙ্গাজল নিয়ে আসেন মোক্ষ লাভের আশায়। দেবীর মন্দিরের ভিতর সিংহবাহিনীর পাশে কষ্টিপাথরের বিষ্ণু মূর্তি বাসুদেব জ্ঞানে পুজিত হচ্ছে। সারা বছরই মা সিংহবাহিনীর টানে বহু পুণ্যার্থী নিজবালিয়ায আসেন।

দেবী সিংহবাহিনীর মন্দির দক্ষিণমুখী আটচালা এবং সামনে সংযুক্ত চারচালা দালাল শৈলীতে নির্মিত। বাঁধানো কয়েকধাপ সিঁড়ি পেরিয়ে সিংহদ্বার, সেইখান মাটিতে প্রোথিত লাল রঙের যূপকাষ্ঠ। তার পর নাটমণ্ডপ, নাটমণ্ডপ পেরিয়ে জগমোহন তার পর দেবীর গর্ভ মন্দির। গর্ভ মন্দিরের পিছনে আছে রন্ধনশালা এবং আরো কয়েকটি ঘর। পুরো মন্দিরটি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা।

পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে এই মন্দির জগৎবল্লভপুর তথা হাওড়া জেলার অন্যতম। দেবী যেহেতু নিম কাঠের তৈরী তাই এতদাঞ্চলে নিম কাঠের পোড়ানো হয় না। গ্রামের যেকোনো আনন্দ অনুষ্ঠানে সকলে মায়ের কাছে পুজো দিয়ে আশীর্বাদ নিয়ে যান। দশ - বারো বছর অন্তর দেবীর অঙ্গরাগ হয়। হাওড়া জেলার অনেক জায়গায়তেই সিংহবাহিনীর মন্দির থাকলেও, সেগুলি বেশীরভাগই দশভূজা মূর্তি।

অষ্টভুজা দারু মূর্তি বিরল যা নিজবালিয়ার সিংহবাহিনী মন্দিরেই আছে।হাওড়া জেলার খসমরা গ্রামে দেড়শতাধিক বছরের প্রাচীন চতুর্ভূজা সিংহবাহিনী মূর্তি লক্ষ্য করা যায়।হাওড়া জেলার দেউলপুর গ্রামেও দশভূজা দুর্গা মূর্তি সিংহবাহিনী জ্ঞানে পুজিত হচ্ছে।এর থেকেই বোঝা যায় নিজবালিয়ার সিংহবাহিনী মূর্তি অন্যান্য মূর্তি গুলোর থেকে আলাদা।এই ভাবেই বছরের পর বছর বালিয়া পরগনার প্রানের দেবী হিসেবে সিংহবাহিনী মা পূজিতা হচ্ছেন।

কালো দুর্গা, দেবীর এই রূপ দেখলে হয়ে যাবেন অবাক কালো দুর্গা, দেবীর এই রূপ দেখলে হয়ে যাবেন অবাক

English summary
know the history of jagatballabhpur nijobalia's durga puja
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X