ভারতীয় ফুটবলে এক সোনালি অধ্যায়ের অবসান, প্রয়াত সনৎ শেঠ
চোখের পলকে এক পোস্ট থেকে অন্য পোস্টে উড়ে যেতে পারতেন তিনি। তাঁকে টপকে গোল করতে কালঘাম ছুটে যেত তাবড় তাবড় ফরওয়ার্ডদের। তাঁর অনবদ্য দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে ময়দানের বাজপাখি আখ্যা দিয়েছিলেন চুনী গোস্বামী। সেই তিনি কিংবদন্তি গোলরক্ষক সনৎ শেঠ প্রয়াত হলেন শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯১।
দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন সনৎ শেঠ। পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় এবং চুনী গোস্বামীর থেকে বয়সে সামান্য ছোট হলেও দীর্ঘ দিন এই দুই কিংবদন্তি'র সতীর্থ ছিলেন সনৎ শেঠ। দুই দিকপাল ফুটবলারের প্রয়াণের খবর কানে আসার পর ভেঙে পড়েছিলেন।
বাংলা এবং জাতীয় দলের জার্সিতে দাপিয়ে খেলার পাশাপাশি তিনি ক্লাব ফুটবলে দাপিয়ে খেলেছেন দুই প্রধান ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানে। এছাড়া এরিয়ান, ইস্টার্ন রেলের জার্সিতেও তেকাঠি রক্ষা করেছেন দীর্ঘদিন।
দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন সনৎ শেঠ। পানিহাটির বটতলার বাড়িতে ছেলে, পুত্রবধূ, দুই নাতনি'র সহচার্যে দিন কাটতো রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রেমী এই পৌঢ়ের। বয়স শরীরে থাবা বসালেও তাঁর গলায় রবীন্দ্র সঙ্গীতের এক আলাদাই মাধুর্য্য ছিল। মাঝে মধ্যেই তাঁর ঘর থেকে ভেসে আসত রবীন্দ্র সঙ্গীতের সুর। নিজের সঙ্গে রাখতেন একটা রেডিও।
১৯৪৯ সাল থেকে পেশাদার ফুটবলার হিসেবে জীবন শুরু করেছিলেন সনৎ শেঠ। প্রায় দুই দশকের কাছাকাছি ফুটবল মাঠে দাপিয়ে বেড়ানো নক্ষত্র অবসর ঘোষণা করেন ১৯৬৮ সালে। ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে অবসর নিলেও তাঁর বেশি প্রেম ছিল ইস্টার্ন রেল এবং এরিয়ান ক্লাবের প্রতি। ১৯৫৪-র ম্যানিলা এশিয়ান গেমসে ভারতীয় দলের সদস্য ছিসেন সনৎ শেঠ। সেই সময়ে চতুর্দলীয় প্রতিযোগীতায় পর পর দুই বছর ভারতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৫৫ সালে রাশিয়া সফরে ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ইতিহাসের জীবন্ত দলিল সর্বক্ষণ হাতে নিয়ে থাকা এই মানুষটির প্রয়াণে ভারতীয় ফুটবলের এক অধ্যায়ের সমাপতন ঘটল। স্বভাবতই শোকের কবলে দেশের ফুটবল মহল।
সনৎ শেঠের মৃত্যু'তে শোক প্রকাশ করেছে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সনৎ শেঠের পরিবার এবং কাছের মানুষদের এই কঠিন সময়ে শক্ত হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন অরূপ। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে বিশিষ্ঠ ক্রীড়াবীদ হিসেবে সংবর্ধিত করে।