একেবারে নিখুত ফুটবল, পাহাড়ের দ্বিতীয় ম্যাচেও দুর্দান্ত জয় তুলে টগবগিয়ে এগোচ্ছে লাল-হলুদ
শিলং লাজং বনাম ইস্টবেঙ্গল আইলিগ ২০১৮-১৯-এর ম্যাচের প্রতিবেদন।
আই লিগে টগবগিয়ে দৌড়চ্ছে মশাল বাহিনী। বৃহস্পতিবার পাহাড়ে দ্বিতীয় ম্যাচেও শিলঙ-এর জহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম থেকে ১-৩ গোলে সহজ জয় তুলে নিল মেনেন্দেজের ছেলেরা।
হাফটাইমের আগেই জোড়া গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে ০-২ গোলে এগিয়ে দিয়েছিলেন কেরালিয়ান ফুটবলার জবি জাস্টিন (১২', ৪১')। বিরতির পর রাকেশ প্রধান (৭১') লাজয়-এর হয়ে একটি গোল শোধ করেন। কিন্তু এর ৩ মিনিট পরেই দামেকি খোঙস্টিয়ার মিস পাস থেকে মাঝমাঠে বল ধরে একক প্রচেষ্টায় দুর্দান্ত গোল করে ইস্টবেঙ্গলের জয় নিশ্চিত করেন বিদ্যাসাগর সিং।
পাহাড়ের ডার্বিতে আইজল এফসির বিরুদ্ধে তাদের আইলিগের প্রথম ম্যাচে ২-০ গোলে জয় পেয়েছিল শিলঙ লাজঙ। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে সেই জয়ী দলের প্রথম এগারোই এদিন তাদের কোচ অ্যালিসন খারসিন্টিউ। অপরদিকে লেরোকার বিরুদ্ধে খেলা দলের থেকে একটিমাত্র পরিবর্তন করেছিলেন মেনেন্দেজ। ইয়ামি লঙভা-র পরিবর্তে এদিন তিনি খেলান ব্র্যান্ডন ভ্যানলালরেমডিকা-কে।
শুরুতে অবশ্য বলের দখল রেখে ভাল শুরু করেছিল লাজঙ-ই। মাঃঝমাঠ থেকে একের পর এক চমৎকার আক্রমণ তুলে আনছিল তারা। কিন্তু খেলার গতির বিরুদ্ধেই ম্যাচের ১২ মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যায় লাল-হলুদ। ফ্রিকিক থেকে বক্সের মধ্যে বল ভাসিয়েছিলেন লালরিনডিকা রালতে। তার থেকে একেবারে নিখুত হেড করে বল গোলে জড়য়ে দেন জাস্টিন।
গোল খাওয়ার পর আরও তেড়েফুড়ে ওঠে লাজঙ। ২২ মিনিটে তাদের সামনে সুযোগও এসে গিয়েছিল ম্যাচে সমতা ফেরানোর। আক্রমণে উঠে এসেছিলেন লাজঙয়ের মহেশ। তাঁকে আটকাতে পারলেও বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি ব্যান্ডন। হল যায় লাজঙ-এর আরেক ফুটবলার হামতের পায়ে। তিনি সরাসরি গোলে শট নেন।
ইস্টবেঙ্গলের গোল রক্ষক রক্ষিত দাগার বলটি ফিস্ট করে আটকাতে পারলেও ফিরতি বল যায় আবার লাজঙ ফুটবলারের পায়ে। প্রায় ফাঁকা গোল পেয়েও বুয়াম ক্রসবারের উপর দিয়ে মারেন। বেঁচে যায় লাল হলুদ। এরপরেও লাজঙ একের পর এক সুযোগ তৈরি করলেও ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ এদিন অসাধারণ খেলায় শেষ কাজটা করতে পারেনি।
বরং ৪১ মিনিটে ম্যাচের ও নিজের দ্বিতীয় গোল করে যান জাস্টিন। এদিন গোল না করলেও কিন্তু আরও একবার এস্কেদা বুঝিয়ে দিলেন মরশুমের শুরুতে যতই জনি অ্যাকোস্টাকে নিয়ে বেশি মাতামাতি হোক তিনিই ইস্টবেঙ্গেলের এই মরশুমের সেরা সাইনিং।
লাজংয়ের ডিফেন্ডারদের তিনি নিজের দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ফাঁকে বিনা মার্কিংয়ে জাস্টিন ঢুকে পড়েন প্রতিপক্ষ বক্সে। এরপরই তাঁকে লক্ষ্য করে ক্রশ বাড়ান এস্কেদা। সেই বল থেকে নিখুঁত ভলিতে গোল করে যান জাস্টিন। এদিন তিনি যে বলই ছোঁয়া লাগিয়েছেন প্রায় প্রতিটিতেই সোনা ফলেছে। বিরতিতে ইস্টবেঙ্গল এগিয়েছিল ০-২ গোলে।
বিরতির পর একেবারে শুরুতেই কিন্তু গোল শোধের সুযোগ এসেছিল শিলঙ-এর ক্লাবটির সামনে। ফ্রিকিক থেকে সরাসরি গোলে শট নিয়েছিলেন স্যামুয়েলস। কিন্তু গোলে ঢোকার মুখে সেই বল রুখে দেন দাগার। কিন্তু ফিরতি বল গিয়ে পড়ে ইউজেনস লিংডোর পায়ে। একেবারে ঢিল ছোঁড়া দূরত্ব থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন তিনি।
এরপর ম্যাচের ৭১ মিনিটে সেই স্যামুয়েলস-এর কর্ণার কিক থেকেই হেড করে ব্যবধান কমান রাকেশ প্রধান। এখান থেকে ম্যাচে ফেরার আশা দেখেছিল লাজঙ। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্নে জল ঢেলে দেন ইস্টবেঙ্গল অ্যাকাডেমির ফসল বিদ্যাসুন্দর সিং।
মাঝমাঠে সামান্য একটিু ভুল করে ফেলেন লাজঙ ফুটবলার খোঙস্টিয়া। সেই ভুলেরচড়া মাসুল চোকাতে হয় তাঁর দলকে। মাঝমাঠ থেকে সেই বল ধরে প্রবল গতিতে পৌছে যান লাজঙ বক্সে। তারপর ঠান্ডা মাথায় গোল করে যান।
এরপরও লাজঙ যখন যখনই সেটপিস পেয়েছে, তাদের ভয়ঙ্কর মনে হয়েছে। এরকমই এক সেটপিস ম্যাচের একেবারে অন্তিম লগ্নে ইস্টবেঙ্গল গোলে হেড নিয়েছিলেন আইবান। সেই বল তিন কাঠির মধ্যে রাখতে পারলে বিপদ হতে পারত।
এই জয়ের ফলে ইস্টবেঙ্গল এখন লিগ টেবিলে সবার উপরে থাকল। তাদের পরের খেলা ১৩ নভেম্বর। ঘরের মাঠে খেলতে হবে চেন্নাই সিটি এফসির বিরুদ্ধে। ঘরের মাঠে পর পর দুই ম্যাচের পর শিলঙ লাজঙ এরপর ৫ নভেম্বর অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে যাবে ইন্ডিয়ান অ্যআরোজের বিরুদ্ধে।