আই লিগ ২০১৮: নেমেই গোল সোনির, তাও দ্বিতীয় ম্য়াচেও জয় অধরা মোহনবাগানের
কলকাতায় আইলিগের মোহনবাগান বনাম আইজল ম্য়াচের প্রতিবেদন।
মোহনবাগানকে জেতাতে পারলেন না সনি নর্ডেও। ম্যাচের ২৯ মিনিটে মাপুইয়ার গোলে ১-০' পিছিয়ে পড়েছিল সবুজ মেরুন। এরপর প্রথমার্ধে কিমকিমা (৪৪') ও দ্বিতীয়ার্ধে সনি নর্ডে (৬৯') গোলে ২-১ গোলে এগিয়ে গেলেও শেষ মুহূর্তের লালরিনমুয়ানার একেবারে শেষ মুহুর্তের গোলে দ্বিতীয় ম্যাচেও ২-২ ড্র করে ১ পয়েন্টেই সন্তুষ্ট থাকতে হল মোহনবাগানকে।
তবে এদিন কিন্তু নর্ডেকে প্রথম দলে রাখেননি সবুজ মেরুন কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী। কেরালায় গোকুলামের বিরুদ্ধে ১-১ গোলে ড্র করা দলের থেকে মাত্র একটিই পরিবর্তন করেছিলেন তিনি। সৌরভ দাসের বদলে প্রথম দলে আসেন ইউতা কিনোওয়াকি।
অপরদিকে আইজলের কোচ গিফ্ট রাইখান তাদের দলে চারটি পরিবর্তনে করেন। তোছাওং, পল রামফাঙজুয়াভা, রেমসাঙ্গা ও ডোডোজের বদলে আইজলের প্রথম একাদশে আসেন গোবিন সিং, জোহমিংমাওয়াইয়া, বেকতুর তালগাত এবং মাপুইয়া।
প্রত্যাশিতভাবেই, ম্যাচের শুরু থেকে গতিতে ঝড় তুলে শুরু করেছিল পাহাড়ের দলটি। বিশেষ করে ডানপ্রান্ত থেকে শুরু থেকেই আক্রমণ শুরু করেছিলেন জোহমিংমাওয়াইয়া। অপরদিকে ঘরের মাঠে রক্ষণ সামলে আক্রমণে ওঠার রাস্তায় যায় মোহনবাগান।
ম্যাচের ৮ মিনিটের মাথাতেই বক্সের ঠিক বাইরে আইজলকে ফ্রিকিক উপহার দেন আম্বেদকর। কিন্তু করিমের শট সরাসরি গোলকিপারের হাতে যায়। সময় নষ্ট না করে শঙ্কর বল ছুঁড়ে দিযেছিলেন দিপান্ডা ডিকার হাতে। কিন্তু মাঝমাঠেই আইজলের ডিফেন্ডাররা সেই প্রতিআক্রমণ রুখে দেয়।
এরপর শুরুর সেই ঝড় সামলে ধীরে ধীরে আক্রমণে উঠতে শুরু করে সবুজ মেরুন। ১৩ মিনিটের মাথায় প্রথম গোলের সুযোগ পেয়েছিল বাগান। আইজল রক্ষণের খেলোয়াড় করিমকে কাটিয়ে দিপান্ডা ডিকার উদ্দেশ্যে বল বাড়িয়েছিলেন কিসেকা। ডিকা ফাঁকা জায়গায় পাস দিয়েছিলেন পিন্টু মাহাতোকে। পিন্টু গোলে বাঁক খাওয়া শট নিলেও, বল তিন কাঠির মধ্যে রাখতে পারেননি।
১৭ মিনিটের মাথায় আবার গোল করার সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান। এবার কিসেকার উদ্দেশ্য়ে বল বাড়িয়েছিলেন দিপান্ডা। কিন্তু অনেকখানি দৌড়ে এসে একেবারে নিখুঁত ট্যাকলে বল ক্লিয়ার করেন আইজলের রক্ষণভাগের খেলোয়ার করিম। গ্যালারি থেকে পেনাল্টির আবেদন ওঠে। কিন্তু রেফারি তাতে প্রভাবিত হননি। টিভি রিপ্লেতেও দেখা গিয়েছে একেবারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রেফারি।
২৩ মিনিটের মাথায় প্রায় গোল করেই ফেলেছিলেন দিপান্ডা ডিকা। ফ্রিকিক থেকে অরিজিত বাগুই বল ভাসিয়েছিলেন আইজল বক্সের মধ্যে। উইতা তা হেড করে দ্বিতীয় পোস্টে রেখেছিলেন দিপান্ডা ডিকার জন্য়। চলতি বলেই তিনি শট নেন। অল্পের জন্য তা বারপোস্টের উপর দিয়ে উড়ে যায়।
ম্যাচে প্রথম বল গোলে পাঠায় মোহনবাগানই। ম্যাচের ২৫ মিনিটে নিজেদের অর্ধে বল ধরে অনেকটা এগিয়ে এসেছিলেন ওমর। সেখান থেকে দিপান্ডা ডিকার জন্য চমতকার থ্রু পাস বাড়িয়েছিলেনষ। যা ধরে বল গোলে পাঠান ক্যামেরুনের স্ট্রাইকার। কিন্তু তার আগেই অফসাইডের সঙ্কেত দিয়েছিলেন লাইন্সম্য়ান।
এর ঠিক ৪ মিনিট পরই খেলার গতির বিরুদ্ধে গোল খেয়ে যায় মোহনবাগান। অনেকটা উঠে এসে মাপুইয়ার উদ্দেশ্যে বল বাড়িয়েছিলেন জোহমিংমাোয়াইয়া। প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে দুরন্ত শটে গোল করে যান মাপুইয়া। দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া মোহনবাগান গোলকিপার শঙ্করের কিছু করার ছিল না। তিনি আশাই করেননি অতদূর থেকে গোলে শট নেবেন মাপুইয়া।
একগোলে পিছিয়ে যাওয়ার পরই স্ট্র্যাটেজি বদলান বাগান কোচ। দুই প্রান্ত ব্যবহার করে সুবিধা করা যাচ্ছে না দেখে ৩৪ মিনিটে তিনি ব্রিত্তোকে তুলে নামান সৌরভ দাসকে। ফলে মাঝমাঠে মোহনবাগানের খেলার ধার বাড়ে। একের পর এক সুযোগ তৈরি করলেও কাজের কাজটা হচ্ছিল না মোহনবাগানের।
কিন্তু, ৪৩ মিনিটে আইজলের প্রতিরোধ ভেঙে ম্যাচে সমতা ফেরাতে সক্ষম হয় শঙ্করলালের দল। কর্নার কিক থেকে পিন্টু বল রেখেছিলেন দিপান্ডা ডিকার উদ্দেশ্যে। কিন্তু আইজলের কড়া মার্কিংয়ে সেই বলের নাগাল পাননি তিনি। বল যায় কিমকিমার পায়ে। বাঁপায়ের শটে বল গোলে রাখেন সবুজ মেরুন সেন্টার ব্য়াক। বিরতিতে খেলার ফল ছিল ১-১। তবে বিরতির আগেই করিমের চোট লাগায় তাকে তুলে ভার্তেকে নামাতে বাধ্য হয়েছিলেন গিফ্ট রাইখান।
প্রথমার্ধে সমতা ফিরিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে দারুণভাবে শুরু করেছিল মোহনবাগান। ৫৩ মিনিটে বক্সের অরিজিত বাগুইয়ের কর্নার কিক কোনও সবুজ মনেরুন ফুটবলার ধরতে না পারেননি। আইজলের রক্ষণ বলটি ক্লিয়ার করলেও মেহনবাগান হ্য়ান্ডবলের আবেদন জানায়। কিন্তু রেফারি তাতে কর্ণপাত করেননি।
এরপর ৬১ মিনিটে গ্য়ালারির ১৬ হাজার সবুজ মেরুন সমর্থকের প্রবল উন্মাদনা মধ্য়ে মাঠে আসেন বাগানের 'ঘরের ছেলে' সনি নর্ডে। তাঁকে নামানো হয় ওমর-এর জায়গায়। ফলে এক ধাক্কায় বাগানের আক্রমণভাগের শক্তি অনেকটাই বেড়ে যায়।
সবুজ মেরুনের একের পর এক আক্রমণ আছড়ে পড়ে আইজল রক্ষণে। দুটি ক্ষেত্রে ডিপান্ডা ডিকা ব্যর্থ হলেও মাঠে নামার মাত্র ৮ মিনিটের মাথায় গোল করে যান সনি নর্ডে। সৌরভ দাসের লম্বা বাড়িয়েছিলেন তাঁর উদ্দেশ্য়ে। হাইতিয়ান স্ট্রাইকার একেবারে নিজস্ব ভঙ্গীতে বাঁপ্রান্ত ধরে ডিফেন্স চেড়া দৌড়ে একের পর এক আইজল ডিফেন্ডারকে ছিটকে দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়ে কোনাকুনি শটে গোল করে যান।
এরপর বাগানের সমর্থকরা ধরেই নিয়েছিলেন ঘরের মাঠে আইলিগের প্রথম ম্যাচে ৩ পয়েন্ট আসতে চলেছে তাদের ঝুলিতে। কিন্তু তাদের উন্মাদনায় জল ছেলে মোহনবাগান অ্য়াকাডেমিরই প্রাক্তন ছাত্র ডেভিড লালরিনমুয়ানা।
ম্যাচের শেষের দিকে বেশ কিছু ফাউল হওয়ায় ৪ মিনিটে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। ইনজুরি টাইমেরও একেবারে শেষে (৯০+৩) মিনিটে ৩২ গজ দূর থেকে বাঁক খাওয়া শটে অনবদ্য গোল করে যান লালরিনমুয়ানা। শটটি বারপোস্টের ঠিক নিচে লেগে গোলে ঢুকে যায়।
ফলে আইলিগের প্রথম দুই ম্যাচ থেকে মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে মোহনবাগান ২ ধাপ উঠে রইল লিগ টেবিলের ৫ নম্বরে। আর কলকাতার মাঠ থেকে ১ পয়েন্ট মগ্রহ করে আইজলও দুইধাপ এগোল। তারা এই মুহূর্তে রয়েছে ৮ নম্বরে।