একনাগাড়ে বৃষ্টিতে মুম্বইয়ে জনজীবন স্তব্ধ, জলছবি দেখলে আঁতকে উঠবেন
এক যুগ আগের স্মৃতি উসকে ফের একবার অতি বৃষ্টিতে বানভাসি হয়েছে মুম্বই। পরপর তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে গোটা মুম্বই জলের নিচে চলে গিয়েছে। রেল লাইন কার্যত নদীতে পরিণত হয়েছে। রাস্তার অবস্থাও তথৈবচ। বিমান পরিষেবা স্বাভাবিক না হলেও সচল রয়েছে। ফলে আমজনতার ভোগান্তির কোনও শেষ নেই। কেন ও কীভাবে বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হল মুম্বই তা জেনে নেওয়া যাক।

আবহাওয়া অত্যন্ত খারাপ
মুম্বইয়ের আবহাওয়া অত্যন্ত খারাপ তা আন্দাজ করা যায় এটা দেখে যে কোনও কোনও এলাকাতেই শুধু ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা আবহাওয়াবিদদের কথায় অত্যন্ত আশঙ্কার। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে ওরলিতে ৩০৩ মিলিমিটার। মাত্র ১২ ঘণ্টাতেই এতটা বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

ট্রেন পরিষেবা বিপর্যস্ত
মুম্বইয়ের লাইফলাইন রেল পরিষেবা বৃষ্টির জেরে পুরোপুরি বিপর্যস্ত। বিভিন্ন স্টেশনে লাইন ছাপিয়ে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। পুরো সাবার্বান রেল পরিষেবা বিপর্যস্ত। সেন্ট্রাল রেলওয়ে, পশ্চিম রেলওয়ে পরিষেবা বন্ধ। রেল লাইন থেকে জল না সরলে ট্রেন চালানো বিপদের হতে পারে।

সড়ক যোগাযোগ স্তব্ধ
বৃষ্টির ফলে মুম্বইয়ের সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বিপর্যস্ত। পূর্ব ও পশ্চিম এক্সপ্রেস হাইওয়েতে ট্রাফিক স্তব্ধ। সে এলাকায় ট্রাফিক সচল রয়েছে সেই পথ পেরোতে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সময় লাগছে। ফলে উপায় না দেখে হাঁটু বা কোমর জলে মানুষ রাস্তায় বেরোতে বাধ্য হয়েছেন বা বাইরে থেকে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন।

চারিদিকে জমা জল
মাতুঙ্গা, সিওন সার্কেল, জৈন স্যোসাইটি এলাকায় কোমরের বেশি জল জমে গিয়েছে। বেশিরভাগ জায়গাতেই অন্তত তিন ফুটের বেশি জল জমে রয়েছে। কুরলা এলাকায় বেশিরভাগ বাড়িতে জল ঢুকে গিয়েছে। কালিনা এলাকায় দেওয়ালে ফুটো করে বাড়ি থেকে জল বের করছেন বাসিন্দারা।

পথচারীরা আটকে পথেই
মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কম দৃশ্যমানতার কারণে পরিষেবা বিপর্যস্ত। দশটি বিমান বাতিল হয়েছে, সাতটিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে বাইরে থেকে আসা পর্যটকেরা একেবারে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছেন।

পাবলিক ট্রান্সপোর্ট আটকে
মুম্বইয়ের সরকারি বাস পরিষেবা 'বেস্ট' পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। অটো, ট্যাক্সি বা অনলাইন ক্যাব পরিষেবার কোনও পাত্তা পাওয়া যাচ্ছে না।

ওলা, উবার উধাও
অনলাইন ক্যাব বুকিং পরিষেবা ওলা বা উবারের ক্যাব পরিষেবা বৃষ্টি বিধ্বস্ত মুম্বইয়ে প্রায় অমিল। কোনও কোনও এলাকায় তা কিছুটা পাওয়া গেলেও স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে অন্তত তিনগুণ বেশি ভাড়া দাবি করা হচ্ছে। বিমানবন্দরে যেতে গিয়ে অনেকেই না পেরে হাল ছেড়ে দিয়েছেন কারণ কোনও ক্যাব পরিষেবাই নেই।

লোডশেডিং
মুম্বইয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে রয়েছে। খার, পালি হিল, কার্টার রোড, বান্দ্রা, সান্তাক্রুজ এলাকায় ব্যাপক হারে লোডশেডিং চলছে। এছাড়া ঘাটকোপর, মুলান্ড, ভাণ্ডুপ এলাকাও বিদ্যুতবিহীন হয়ে রয়েছে।

রাস্তায় গাড়ি ভাসছে
দাদারন্ড প্যারেল এলাকায় মাত্র ৫ ঘণ্টায় ২৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। মুম্বইয়ের নিচু জায়গা বলে পরিচিত হিন্দমাতা ও দাদর এলাকা বন্যার মতো ভাসছে। সেখানে রাস্তায় রাখা গাড়িও ভেসে চলে যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় বর্ষার কারণে রাস্তাতেই গাড়ি আটকে রয়েছে। কোথাও রাস্তাতে গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ায় বিপত্তি বেড়েছে।

মুম্বই-পুনে এক্সপ্রেসওয়ে
পুনে-মুম্বই এক্সপ্রেসওয়ে বৃষ্টির জেরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় টোল ট্যাক্সও নেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকাতেও টোল বন্ধ রাখতে হয়েছে বৃষ্টির জেরে।