ছিল রাজরাজড়ার পুজো, ১৭৯০ থেকে সর্বজনীন হয় দুর্গোৎসব
আদিকাল থেকে বাংলা ও বাঙালির উৎসব না হলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ছবিটা পাল্টে যায়। জনশ্রুতি, বঙ্গদেশে প্রথম দুর্গা পুজোর সূচনা করেছিলেন রাজা কংসনারায়ণ। ইনি ছিলেন অধুনা বাংলাদেশের রাজশাহীর তাহেরপুরের একজন ভূস্বামী। মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে সম্ভবত ১৫৮২ সালে শরৎকালে প্রথম দুর্গা পুজো করেন তিনি। মুঘলদের বিরুদ্ধে বাংলার যে ১২ জন ভূস্বামী (বারো ভুঁইঞা) লড়েছিলেন, রাজা কংসনারায়ণ তাঁদের একজন। মুঘল শাসনের বিরুদ্ধে নিজের দাপট দেখাতে তিনি মহাশক্তি দুর্গার পুজো শুরু করেন।
আরও
পড়ুন:
কলাবউ
গণেশের
বউ
নয়,
মহামায়ার
ভিন্ন
রূপ
আরও
পড়ুন:
কল্পারম্ভ
থেকে
সন্ধি
পুজো:
মাতৃবন্দনার
নানা
মাহেন্দ্রক্ষণ
আরও
পড়ুন:
দুর্গা
পুজোয়
পাঁচটি
করে
জিনিস
আবশ্যিক,
জানুন
সেই
'পঞ্চ'
বিষয়
আরও
পড়ুন:
ব্রহ্মার
বরে
ছিল
ফাঁক,
ফাঁকিটাই
বুঝতে
পারেননি
উচ্চাকাঙক্ষী
মহিষাসুর
রাজা কংসনারায়ণ যে পুজো শুরু করেছিলেন, তা ক্রমশ বাংলার বনেদি পরিবারগুলিতে ছড়িয়ে পড়েছিল। রাজা, জমিদার, বিত্তশালী মহাজনরা পুজো করতেন 'স্ট্যাটাস সিম্বল' হিসাবে। আশপাশের গাঁ থেকে গরিব সাধারণ মানুষ প্রসাদ লাভের আশায় ভিড় জমাতেন বনেদি বাড়িগুলিতে।
তবে দুর্গা পুজোয় জাঁকজমক কাকে বলে, তা প্রথম দেখিয়েছিল শোভাবাজারের বাবু নবকৃষ্ণ দেব। ১৭৫৭ সালে যে ক'জন ব্যক্তি ইংরেজদের পলাশি যুদ্ধ জিততে সহায়তা করেছিল, তাদের একজন হল নবকৃষ্ণ দেব। জুন মাসে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা পরাস্ত হন। আর অক্টোবরে শোভাবাজারের বাড়িতে বিপুল জাঁকজমক সহকারে দুর্গা পুজো করা হয় নবকৃষ্ণ দেবের তরফে। পুজোর আড়ালে এটা ছিল আদতে বিজয়োল্লাস। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রবার্ট ক্লাইভ, ওয়াটসন প্রমুখ হাজির ছিলেন সেই পুজোয়। এর পর থেকে প্রতি বছরই কোম্পানির সাহেবরা শোভাবাজার রাজবাড়িতে আসতে শুরু করেন। সেই জন্য লোকে এই পুজোর নাম দিয়েছিল 'কোম্পানির পুজো'। অষ্টাদশ শতকে যে বনেদি বাড়িতে যত বাঘা বাঘা সাহেব আসত, সেই বাড়ির তত নামডাক হত। কে কতজন সাহেবকে ডাকতে পারে, তা নিয়ে কলকাতার বাবুসমাজে প্রতিযোগিতা চলত।
এতদিন দুর্গা পুজো ছিল শুধু পরিবারকেন্দ্রিক। বারোয়ারি পুজো বলতে আমরা যা বুঝি, তা শুরু হয় ১৭৯০ সালে। হুগলী জেলার গুপ্তিপাড়ায়। ১২ জন ব্রাহ্মণ বন্ধু চাঁদা তুলে এই পুজো করেন। তাই একে বলা হয় 'বারোয়ারি' (বারো+ইয়ারি) পুজো। সেই থেকে বাংলায় দুর্গা পুজো ঘরের গণ্ডি ছেড়ে বেরিয়ে আসে। আক্ষরিক অর্থেই তা বাঙালির 'জাতীয় উৎসব' হয়ে দাঁড়ায়।