দুর্গাপুজো স্পেশাল গল্প : মাটির মুখোশ
হীরক জয়ন্তী উপলক্ষ্যে মিত্তির পাড়ার মাঠে এবার প্যান্ডেলের বাঁশ পড়েছে পুজো শুরুর মাস তিনেক আগে। জমকালো আয়োজন! ঢাকঢোল পিটিয়ে জেলাজুড়ে রটানো হয়েছে যে এবার সেখানে থিমের গুঁতো।
হীরক জয়ন্তী উপলক্ষ্যে মিত্তির পাড়ার মাঠে এবার প্যান্ডেলের বাঁশ পড়েছে পুজো শুরুর মাস তিনেক আগে। জমকালো আয়োজন! ঢাকঢোল পিটিয়ে জেলাজুড়ে রটানো হয়েছে যে এবার সেখানে থিমের গুঁতো।
সে কী মুখের কথা! অলিতে-গলিতে পোস্টার পড়েছে। তিন রাস্তার মোড়, ছোট ও বড় বটতলায় মস্ত ব্যানার ও হোর্ডিং-এ ঘটা করে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে। পাড়া-বেপাড়ায় চলছে অটো প্রচার। কলকাতামুখী যানবাহনে মৌখিক প্রচার তো হয়েছে বিনামূল্যে। তাই মিত্তির পাড়ার কেরামতির কাহিনী দূর-দূরান্তে বিস্তৃত।
'হীরক জয়ন্তী বলে কথা। একটু জাঁক না করলে কী হয়!' উদ্যোক্তার এই 'একটু' শব্দের মধ্যে লুকিয়ে আছে একশো হাতের মস্ত দুর্গা। মণ্ডপে সনাতন গ্রাম বাংলা ও শহুরে আদব কায়দার ভাঙাচোরা মিশেল চোখে ধাঁধা লাগায়। অসমের বিশেষ বাঁশ দিয়ে তৈরি হয়েছে গেট। তাতে অজন্তা-ইলোরার গুহা গোছের সূক্ষ্ম কারুকার্য স্পেশাল এফেক্টের কাজ করবে। সঙ্গে বাউল ও ছৌ শিল্পীদের লাইভ পারফরম্যান্স তো এ পুজোর বাড়তি আকর্ষণ।
'একটু অন্যরকম আর কী!' ক্লাব সভাপতির ওই 'একটু' শব্দে নিহিত রয়েছে মায়ের জন্য পাঁচ লাখি রূপোর ভূষণ। লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গনেশের আভরণ ধরে সেই মূল্য সাত লাখ ছুঁয়ে ফেলে প্রায়। সঙ্গে নেতা-অভিনতা-উদ্যোগপতিদের হাঁকডাক, মিডিয়া কভারেজের তাল ঠুকে হুলুস্থুল কাণ্ডে মোক্ষম ঘৃতাহুতি দেওয়ার কোনও সুযোগই ছাড়ছেন না মিত্তির পাড়ার পুজো উদ্যোক্তারা।
থিম শিল্পীদের প্রাইভেসি রক্ষায় মণ্ডপের চৌহদ্দিতে ঘুরঘুর করা মানা। তা বলে অবাধ্য শৈশবের উঁকিঝুঁকি সামাল দেবে, এমন সাধ্য কার। স্কুল ফেরত পড়ুয়াদের অনুসন্ধিৎসু মনে নানান প্রশ্ন উঁকি দেবে না, তা কী হয়! সেই দলের সঙ্গে থেকেও না থাকারই মতো ভাবুক প্রকৃতির নাবালকের নাম শান্তনু। ক্লাস সেভেনের ছাত্র। মিত্তির পাড়াতেই বাড়ি। সবার মধ্যে স্বতন্ত্র শান্তনুর চোখে জড়তা ভেদ করা দীপ্তি। পড়াশোনায় ঠিক যতটা চটপটে, ততটাই পটু হাতের কাজে। স্কুলের ওয়ার্ক এডুকেশন পরীক্ষায় প্রতি বছরই ফুল মার্কস তার বাঁধা।
তবে গুণে শান্তনুর দিদি সুধাই যে এলাকার সেরা, তা একবাক্যে স্বীকার করেন প্রত্যেকে। ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী উদাত্ত কন্ঠে 'ছাড়পত্র' বা 'আফ্রিকা' কবিতা আবেগ ঢেলে অনর্গল বলে যেতে পারে। 'ওথেলো' নাটকের 'ডেসডিমনা' কিংবা 'শ্যামা' চরিত্রের সংলাপ সুধার ঠোটস্থ। জেলা ও রাজ্যস্তরের ইন্টার-স্কুল প্রতিযোগিতার একক অভিনয়, আবৃত্তি এবং বিতর্কে প্রতি বছরই তার পুরস্কার বাঁধা। পাড়ার যে-কোনও অনুষ্ঠানে মাইক হাতে সুধার উপস্থাপনাই দর্শকদের প্রথম পছন্দ। সাধারণ জ্ঞান পোক্ত হওয়ায় কুইজেও ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রীকে হারানো কার্যত অসম্ভব।
বাবা লোকাল ট্রেনে হকারি করেন। অর্থ উপার্জনে মায়ের সম্বল জং ধরা এক সেলাই মেশিন। তাপ্পি দিয়ে চলা সংসারে সুধার জন্মগত প্রাপ্তি, এক আকাশ সাহস ও লড়াই করার অদম্য জেদ। সাত লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে মিত্তির পাড়ার যে মাঠে থিম কাণ্ডের তোড়জোড় চলছে, তিন বছর আগে ঠিক সেখানেই বিজয়া সম্মেলনী উপলক্ষ্যে বসেছিল বড় জলসা। শহর থেকে নামি শিল্পীরা অনুষ্ঠান করতে এসেছিলেন। তাঁদেরই মধ্যে একজন আবার কথার খেলাপও করেছিলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে নাজেহাল উদ্যোক্তা ও মারমুখী দর্শকদের সামনে সেদিনও মাইক হাতে তুলে নিয়েছিল সুধা। গান, কবিতা ও নাটকের সংলাপ দিয়ে এমন এক জগা-খিচুড়ি অনুষ্ঠান করেছিল যে তা এখনও চর্চার কেন্দ্রে।
সেদিন দর্শকাসনে বসে মঞ্চে দিদির কেরামতি প্রত্যক্ষ করেছিল ছোট্ট শান্তনু। বাড়ি ফিরে দিদির মতোই আলাদা কিছু করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিল ওই নাবালক। শেষে সুধাই ভাইকে কাছে টেনে পরম স্নেহে বলেছিল- আমার মতো কেন, নিজের মতো বিকশিত হবি তুই।
- নিজের মতো মানে দিদি!
ভাইয়ের প্রশ্নে মুচকি হেসেছিল সুধা। তারপর সে শান্তনুর গাল টিপে বলেছিল- 'জীবনের খোঁজ' শুরু কর। এমন কিছু কর, যার সামনে পৃথিবীও খুব ক্ষুদ্র মনে হয়।
সেদিন
মানে
না
বুঝলেও
সুধার
কথাগুলো
মনে
গেঁথে
গিয়েছিল
শান্তনুর।
এরপর
নিজের
মতো
করে
জীবনের
খোঁজ
শুরু
করে
সে।
আকাশ,
বাতাস,
গাছ-গাছালির
দিকে
অবাক
পানে
তাকিয়ে
থাকে
ওই
নাবালক।
কখনও
আবার
জানলার
ধারে
বসে
শুধুই
মানুষ
দেখে
শান্তনু।
কাশবনের
সৌন্দর্য্য
তাকে
মুগ্ধ
করে।
বৃষ্টির
জলে
টইটম্বুর
পুকুর
ও
মাঠের
ধারে
দাঁড়িয়ে
নাকে
সোঁদা
মাটির
গন্ধ
মাখে
সে।
একদিন
সেই
মাটিরই
এক
দলা
হাতে
তুলে
নেয়
শান্তনু।
তা
দিয়ে
মর্জি
মতো
মণ্ড
পাকাতে
পাকাতে
সে
বাড়ির
দিকে
হাঁটা
লাগায়।
হাঁটতে
হাঁটতে
কখন
যে
বাড়ির
গলি
পেরিয়ে
যায়,
সে
টেরও
পায়
না।
আনমনে
পাশের
পাল
পাড়ায়
ঢুকে
পড়ে
শান্তনু।
হুঁশ
ফেরে
ওই
পাড়ারই
এক
প্রতিমা
শিল্পীর
ডাকে।
- তুই মিত্তির পাড়ার ছোঁড়া না! প্রশ্ন করে শিল্পী।
- হ্যাঁ কাকু। ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয় শান্তনু।
- এ পাড়ায় কী চাই তোর? কিশোরকে প্রশ্ন করেন ওই মৃৎ শিল্পী।
কোনও উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে শান্তনু।
- তোর হাতের মুঠোয় কী আছে দেখি!
শিল্পীর এক কথাতেই মুঠো খুলে দেয় শান্তনু। তার হাতে মাটির দলা দেখে ওই ব্যক্তি প্রশ্ন করেন - কী করবি ওটা দিয়ে?
- জানি না। অস্ফূটে উত্তর দেয় শান্তনু।
তখন শিল্পী তাকে বলেন, 'মাটিকে হাতের মুঠোয় আটকে রাখা যায় না। বরং তাকে হাত খুলে সম্মান করতে হয়। দাম দিতে হয়।'
- তা কীভাবে কাকু! প্রশ্ন করে ওই নাবালক।
উত্তরে আর কিছু না বলে শান্তনুর কাঁধে হাত দিয়ে তাকে এক দালানে নিয়ে যান শিল্পী। সেখানে অনেক ধরনের মাটির মূর্তি সার দিয়ে দাঁড় করানো। সেসব দেখে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যায় ওই বালক। একপাশে দেবী দুর্গার বড় মূর্তি দেখে সে মনে মনে উচ্ছ্বসিত হয়। শান্তনুকে এক স্থানে স্থির হয়ে বসতে বলেন শিল্পী। চোখ বন্ধ করে বালকের সারা মুখে হাত বুলিয়ে বলেন,
- এবার যা। শোন সোজা বাড়ি যাবি কিন্তু। আর পারলে সাত দিন পর একবার এখানে আসিস।
সেদিন বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ায় শান্তনুকে বকাবকি করেছিল তার মা। দিদি সুধাই পরিত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। পরিবারে যার সঙ্গে শান্তনু সবচেয়ে বেশি সখ্য, সেই দিদিকেই সব মনের কথা বলত সে। শুধু সেদিনের ঘটনাটাই চেপে গিয়েছিল শান্তনু। তবে সুধার তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি। কারণ ভাইয়ের ভিতরেও যে তার মতোই আগুন জ্বলছে, তা অনেক আগেই বুঝেছিল ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী। সেই আগুনই বের করার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছে সুধা। এ কাজে তার ভাই সফল হবেই, জানে ওই তরুণী।
'পুজো আসছে' গোছের আবহাওয়ার মধ্যে কেটে যায় দিন দশেক। স্কুল থেকে ফেরার পথে সেই পাল পাড়ায় ছুটে যায় শান্তনু। হাজির হয় সেই পরিচিত দালানে। এক কোণায় একটা টুলের ওপর উঠে প্রতিমার মুখে রং করছিলেন সেই মৃৎ শিল্পী। শান্তনুকে দেখেই তার মুখে হাসি ফোটে। বালককে দাঁড়াতে বলে নিজে ঘরের ভিতর চলে যান শিল্পী। কিছু পরে বেরিয়ে এসে তিনি শান্তনুর হাতে যা তুলে দেন, তা দেখে ভাষা হারায় বালক। তারই মুখের আদলে তৈরি মাটির মুখোশে নিখুঁত তুলির টান দেখে মুগ্ধ হয় শান্তনু।
পরের দিন ফিরে আসে শান্তনু। তাকেও এই শিল্প শিখিয়ে দেওয়ার জন্য শিল্পীর কাছে সে বায়না ধরে। প্রথমে রাজি না হওয়ায় কান্নাকাটি জুড়ে দেয় শান্তনু। বালকের করুণ মুখের মায়ায় পড়ে যান শিল্পী। শান্তনুকে রোজ স্কুল ফেরত তার দালানে আসতে বলেন।
রোজ এক ঘণ্টা করে সাত দিন শান্তনুকে শুধু একই স্থানে বসিয়ে নিজের কাজ যান শিল্পী। এরপর ওই বালককে মাটি ছুঁতে দেওয়া হয়। আর সেদিনই শান্তনুর হাতে সোনা ফলে। মাটির ঢেলা ভেঙে ফটাফট করে পাখির অবয়ব তৈরি করে ফেলে সে। এই ছেলের মধ্যে যে ঘুমিয়ে আছে আস্ত আগ্নেয়গিরি, তা ধরে ফেলে শিল্পী।
আরও চারদিন পর শান্তনুকে প্রথম মাটি দিয়ে তার মুখের আদলে মুখোশ বানাতে বলেন শিল্পী। চোখ বন্ধ করে শিল্পীর মুখে একবার হাত বুলিয়েই কাজ শুরু করে ওই বালক। তা শেষ করতে মাত্র পাঁচ দিন সময় নেয় শান্তনু। ততটা নিখুঁত না হওয়ায় শিল্পীর কাছে তার নিয়মিত তালিম চলতে থাকে। সেসব কিছুর ওপর যে তার দিদি সুধা নজর রাখছে, তা টেরটিও পায়নি শান্তনু।
লুকিয়ে ভাইয়ের এই কাণ্ড দেখে সুধার চোখে জল চলে আসে। সেই ছোট্ট শান্তনু যে একলাফে বড় হয়ে গিয়েছে, তা ভেবে সুখ পায় তার দিদি। ভাইকে তার পৃথিবী চেনাতে পেরে পরম শান্তি অনুভব করে সুধা। আর সেদিন রাতেই তার পেটে ব্যাথাটা ফের চাগাড় দেয়। যন্ত্রণায় ছটফট করতে শুরু করে সুধা।
তার পরের চার দিন যমে-মানুষে টানাটানি চলতে থাকে। হাসপাতাল-ঘরও চলে নিরন্তর। ক্যানসার একদম অন্তিম স্টেজে ধরা পড়ায় জবাব দিয়ে দিয়েছেন ডাক্তাররাও। অভাবের সংসারে মেয়ের চিকিসার খরচ তুলতেও ব্যর্থ হন তার হকার বাবা। আলোয় আলোকিত মিত্তির পাড়ার পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে হাত পেতেও কোন লাভ হয়নি। সাহায্য তো দূর, সুধাকে একবার দেখতেও আসেনি তার এক সময়ের শুভানুধ্যায়ী কিংবা গুনগ্রাহীরা। পুজোর আনন্দেই মশগুল পল্লীবাসী।
অন্যদিকে
সুধার
লিভার
ক্যান্সারের
খবরটা
তার
কথাতেই
প্রথমে
শান্তনুকে
জানানো
হয়নি।
মৃত্যু
পথযাত্রী
দিদির
যন্ত্রণাক্লিষ্ট
রূপ
আদরের
ভাইকে
দেখাতে
চায়নি
কিশোরী
নিজেই।
তবু
শান্তনুর
মনে
এর
প্রভাব
পড়ে
বিস্তর।
সে
বেশ
বুঝতে
পারে,
এই
রোগের
জন্যই
দিদির
নিয়মিত
স্কুলে
যাওয়া
বন্ধ
হয়েছে
দুই
মাস
আগে
থেকে।
দিদি
আর
আগের
মতো
চেঁচিয়ে
কবিতা
পাঠও
করে
না
হয়তো
সেই
কারণেই।
মনে
মনে
নিজের
ওপর
রাগ
করে
শান্তনু।
তারপর
হাউহাউ
করে
কেঁদে
ফেলে
সে।
ছোট
ভাইয়ের
সেই
আকুতি
দেখে
শান্তনুকে
কাছে
ডাকে
সুধা।
ক্ষীণ
গলায়
বলে,
'তোর
মাটির
কাজ
আমায়
দেখাবি
না
ভাই'।
সেই
মুহূর্তে
বুকটা
ভেঙে
শত
টুকরো
হয়ে
যায়
শান্তনুর।
তার
মনে
পড়ে
যায়
দিদির
সেই
'জীবনের
খোঁজ'
শুরু
করার
কথা।
শেষে
জীবনের
খোঁজ
পেলেও
তার
আস্ত
পৃথিবী
যে
এভাবে
উজাড়
হতে
চলেছে,
তা
সেদিন
অনুভব
করেছিল
শান্তনু।
দিদিরই
কথামতো
গোটা
পৃথিবীকে
তার
সামনে
হাজির
করার
সঙ্কল্প
নেয়
ওই
কিশোর।
পরদিন সকালে ফের হাসপাতালে যায় শান্তনু। ঘুমন্ত দিদির মুখে হাত বুলিয়ে সেই শিল্পীর দালানে যায় সে। সেখান থেকে মাটি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে শান্তনু। নাওয়া-খাওয়া ভুলে একমনে নিজের কাজে করে যায় বালক। কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই তার। হাসপাতালেও যাওয়া বন্ধ শান্তনুর।
এদিকে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে সুধা। ভাইকে একবার চোখের দেখা দেখতে চায় সে। ওদিকে মিত্তির পাড়ার মাঠে ঘটা করে বেজেছে বোধনের সুর। থিম মিউজিকের সঙ্গে মন্ত্রপাঠ চলছে সমানে। আলোয় মুড়ে দেওয়া হয়েছে চারিদিক। আমোদে ভেসেছে সমাজ। সেই আলোর নিচে যে নিকষ আঁধার, তা সেদিনই টের পায় শান্তনু।
সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীর রাত হাসপাতালেই কাটিয়ে দেন সুধার বাবা-মা। বাড়ি থেকে বেরোয়নি শান্তনু। দশমীর বিকেলে দেবী বরণ শুরু হতেই সুধার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় আরও। ভাইকে শেষবারের মতো চোখের দেখা দেখতে চায় সে। ঠিক তখনই বড় থলেতে কিছু একটা ভরে হাসপাতালের দিকে রওনা হয় শান্তনু। ভিড়-ভাট্টা ঠেলে সেখানে পৌঁছতে অনেকটা সময় লেগে যায় তার। সুধা তখন আচ্ছন্ন। কাছে গিয়ে দিদিকে ডাকে ভাই। অল্প চোখ মেলে সুধা। কাঁপা হাতে থলে থেকে এক মাটির মুখোশ বের করে শান্তনু।
ভাই বলে, 'দেখ দিদি তোর কথা রেখেছি। তোর মুখের আদলে বানানো এই দুর্গা আজ এই মিথ্যে আলোয় ভরা পৃথিবীর থেকেও দামী।' সুধার চোখের কোণ বেয়ে জল নেমে আসে। ধীরে ধীরে বন্ধ হয় তার অক্ষি যুগল। কৈলাসে পাড়ি জমান মা দুর্গাও।
দুর্গাপুজো স্পেশাল গল্প : আশ্রয়