বিরাট কোহলি খেলার থেকে বেশি বিশ্রাম নিচ্ছেন! টি ২০ বিশ্বকাপের দলে রাখতেই কি কৌশলী পদক্ষেপ?
বিরাট কোহলির আবদার। তা মেনেও নিচ্ছে বিসিসিআই। স্বাভাবিকভাবেই বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছে, ক্রিকেটের চেয়েও নিজেকে ঊর্ধ্বে রাখছেন কিং কোহলি। আর তাতেই সায় দিয়ে চলেছেন বোর্ডের একাংশ এবং মেরুদণ্ডহীন নির্বাচকরা। ক্রিকেটীয় যুক্তিতে দেখলে টি ২০ দলে বিরাট আর অপরিহার্য তো ননই, দলে থাকারই যোগ্য নন। প্রশ্ন উঠছে, ভারত কেন অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ড হতে পারে না? সম্প্রতি খারাপ ফর্মের কারণে যেখানে ইংল্যান্ডের সাদা বলের অধিনায়ক থাকাকালীনই ক্রিকেটকে গুডবাই জানালেন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইয়ন মর্গ্যান।
বিরাটের আবদারে বোর্ডের সায়!
বিরাট কোহলি আবদার করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তাঁকে টি ২০ সিরিজেও বিশ্রাম দিতে হবে। অনিচ্ছুক ঘোড়াকে সুযোগ দিয়ে লাভ কী? এমন প্রশ্ন তুলে কোহলির সেই অনুরোধ মেনে নিল বিসিসিআই। আগেই একদিনের সিরিজের দলে রাখা হয়নি। এবার টি ২০ সিরিজেও। কখন বিরাট বিশ্রাম চাইছেন? যখন তাঁর ফর্ম তলানিতে। ছন্দে ফিরতে দেশের হয়ে ম্যাচ খেলার সুযোগ ফেলে বিরাট বিশ্রাম নিতে চাইছেন! টিম ম্যানেজমেন্টও বলিহারি। বিরাটের কুঁচকিতে টান ছিল। প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিকে খেলানো হলো শ্রেয়স আইয়ারকে। রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান ভারতকে ১০ উইকেটে জয় এনে দেন। শ্রেয়স ব্যাট করতে নামেননি। আজ হঠাৎই বিসিসিআই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করল বিরাট ব্যাট করছেন। ঘণ্টাখানেক পর রোহিত জানিয়ে দিলেন, বিরাট খেলছেন। বাদ শ্রেয়স। যিনি আগের ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ না পেয়েই বিরাটকে খেলানোর জন্য বাদ পড়লেন।
কোহলিকে খেলাতে ফর্মে থাকা ক্রিকেটার বাইরে
টি ২০ আন্তর্জাতিকে আউট অব ফর্ম বিরাটকে খেলাতে গিয়ে ঋষভ পন্থকে ওপেন করতে পাঠানো হলো। বাদ দেওয়া হলে পঞ্চম ভারতীয় হিসেবে টি ২০ আন্তর্জাতিকে শতরানকারী ও দুরন্ত ছন্দে থাকা দীপক হুডাকে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, ফর্ম নয়, নাম বা খ্যাতিই গুরুত্ব পাচ্ছে হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের জমানাতেও। কেন বিরাটকে খারাপ ফর্মের জন্য বাদ দেওয়া হবে না সেই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই জোরালো হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির পর বিরাট আজ প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছেন। ২০১৯ সালের পর থেকে তাঁর ব্যাটে শতরান নেই। ইংল্যান্ডে শেষ দুটি একদিনের আন্তর্জাতিকে বিরাট আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের ৭১তম শতরানটি পাবেন কিনা তা বলবে সময়। কিন্তু অক্টোবরে টি ২০ বিশ্বকাপে যদি বিরাটকে খেলাতেই হয় তাহলে কেন তাঁকে টি ২০ আন্তর্জাতিকে বিশ্রাম দেওয়া হচ্ছে সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না। ব্যর্থতার ধারা যাতে না বাড়ে সেটা নিশ্চিত করেই কি বিশ্বকাপে খেলানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে? যদি ইংল্যান্ডে দুটি একদিনের আন্তর্জাতিকে রান পান তাহলে সেটা ভাঙিয়েই চলবে?
বিশ্রাম নিয়েও ছন্দ পান না
বিরাট কোহলি কিন্তু আইপিএলে বিশ্রাম নেন। সাত কোটির গ্রেড এ প্লাসে থাকা বিরাট খালি দেশের হয়ে খেলার জন্যই বিশ্রাম নিতে চান। গত টি ২০ বিশ্বকাপের পর থেকে ধরলে আজ নিয়ে বিরাট সপ্তম টি ২০ আন্তর্জাতিক খেলছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তিনি তিনটি ম্যাচে করেন যথাক্রমে ৫১, ০ ও ৬১। এরপর ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে যথাক্রমে ৮, ১৮ ও ০। টি ২০ বিশ্বকাপের পর থেকে বিরাট চারটি টি ২০ আন্তর্জাতিক খেলেছেন। কলকাতায় ১৭ ও ৫২ রান করেছিলেন, ভারত সিরিজ জিতে যাওয়ায় সাতসকালে বিমানে মুম্বইয়ে ফেরেন। তৃতীয় ম্যাচ খেলেননি। এরপর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর রান যথাক্রমে ১ ও ১১। তারপরও তাঁকে কেন টি ২০ বিশ্বকাপের দলে রাখার বাধ্যবাধকতা। টি ২০ বিশ্বকাপের পর বিরাট নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি ২০ সিরিজ ও প্রথম টেস্ট খেলেননি। বিশ্রামে ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্ট খেলেননি চোটের কারণে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সাদা বলের সিরিজেও খেলেননি। শুধুই বিশ্রামে গ্রেড এ প্লাসের কোহলি! গত টি ২০ বিশ্বকাপের পর থেকে খেলা ৬টি টেস্টে তাঁর রান যথাক্রমে ০, ৩৬, ৩৫, ১৮, ৭৯, ২৯, ৪৫, ২৩, ১৩, ১১ ও ২০। বড় বড় ভাষণওয়ালা টুইটার বা ইনস্টাগ্রাম পোস্ট, স্লেজিং, নানা অঙ্গভঙ্গিতেই বিরাটের এখন মনোনিবেশ!
সাহসী হতে পারছে না টিম ম্যানেজমেন্ট
মন্টি পানেসর এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, সচিন তেন্ডুলকরের মতোই স্পনসরদের কাছে জনপ্রিয় বিরাট কোহলি। তাঁকে কেন্দ্র করেই প্রচুর লক্ষ্মীলাভের আশা থাকে অনেকের। বীরেন্দ্র শেহওয়াগও সোনি স্পোর্টসে বলেছেন, সচিন যেমন তিন-চারটে ম্যাচ অন্তর শতরান পেতেন, বিরাটও তেমন। সচিন যখন কিছুদিন শতরান পেতেন না, তখন স্বাভাবিকভাবেই তা দীর্ঘ সময় মনে হতো। বিরাটের ব্যাটেও অনেকদিন শতরান নেই। তাই ক্রিকেটপ্রেমীরা বিরাটের ব্যাটে বড় রান দেখতে মুখিয়ে আছেন বলে মনে করছেন বীরু। সবমিলিয়ে বাণিজ্যিক কারণেই বিরাটকে দলে রাখার যৌক্তিকতা থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে অফ ফর্মের একজনের হাতের পুরানো ঘিয়ের গন্ধ শুঁকে তাঁকে খেলানো ক্রিকেটীয় যুক্তিতে মেলে না। তাও যদি খারাপ সময়েও নিজের খেলার প্রতি মনোনিবেশ করে দেশের হয়ে সেরাটা দেওয়ার ন্যূনতম তাগিদ দেখা যেত! সেটাও নয়। তবু অফ ফর্মের একজনকে অপরিহার্য কেন মনে করা হচ্ছে সেই প্রশ্নের উত্তর নেই। অথচ খারাপ ফর্মের কারণে দল থেকে ছেঁটে ফেলা যে এ দেশে হয় না তা নয়। তবুও বিরাট কোহলিকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। টি ২০ বিশ্বকাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে পাঁচটি টি ২০ খেলার সুযোগ হারালেন। এরপর সেখানে সফলদের বাদ দিয়েই বিরাটকে নামিয়ে দেওয়া হবে এশিয়া কাপে।