পূজারা-রাহানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিরাট ইঙ্গিত! দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতের সিরিজ হারের কারণ বিশ্লেষণে কোহলি
সেঞ্চুরিয়ন টেস্টে সিরিজে এগিয়ে গিয়েও পরপর দুটি টেস্টে পরাস্ত। কেপ টাউন টেস্ট তথা সিরিজ সেরা কিগান পিটারসেনের দাপুটে ব্যাটিংয়ে প্রোটিয়াদের দেশে ফাইনাল ফ্রন্টিয়ারে টেস্ট সিরিজ জয় অধরাই ভারতের। শক্তির নিরিখে এগিয়ে থেকেও ডিন এলগারদের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় স্পষ্টতই হতাশ ভারতের টেস্ট অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ব্যাটিং আর সেই সঙ্গে বিশেষ কিছু মুহূর্তে মনঃসংযোগে ঘাটতিকেই সিরিজ হারের কারণ বলে উল্লেখ করলেন তিনি। চেতেশ্বর পূজারা ও অজিঙ্ক রাহানেকে নিয়েও দিলেন বিরাট ইঙ্গিত।
হতাশ বিরাট
জোহানেসবার্গের পর কেপ টাউনেও প্রোটিয়াদের কাছে ৭ উইকেটে টেস্ট হারল ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা যেভাবে ভারতের বিরুদ্ধে রান তাড়া করে জিতেছে তার প্রশংসা করেছেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। একইসঙ্গে তিনি বলেন, দুটি টেস্টেই যে রান দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাড়া করতে হয়েছে তা সাধ্যের মধ্যেই ছিল। যদি কিছুটা বেশি রানের টার্গেট দেওয়া যেত তাহলে সিরিজের ফল অন্যরকম হতেও পারতো। আমরা প্রতিপক্ষের উপর কাঙ্ক্ষিত চাপও তৈরি করতে পারিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা উচ্চতা কাজে লাগিয়ে যেভাবে চেনা পরিবেশে বোলিং করে চাপ বজায় রেখে আমাদের ভুল অবধি ধৈর্য ধরেছেন, সেটাও দুই দলের মধ্যে ফারাক গড়ে দিয়েছে বল মত বিরাটের।
ইতিবাচক দিক
টেস্ট সিরিজ হারলেও এই সিরিজে ভারতীয় বোলারদের পারফরম্যান্সের প্রশংসা শোনা গিয়েছে বিরাটের গলায়। তিনি বলেন, দুই দলের বোলারদের মধ্যে তুলনা চলে না। আমাদের যে বোলিং শক্তি রয়েছে তা বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে টেস্ট জেতাতে সক্ষম। এখনও বিশ্বাস করি, দলগতভাবে বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে আমরা জিততে পারি। এমনকী এবার আমরাও দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জিততে পারি বলে অনেকে ধারণা করেছিলেন। সেঞ্চুরিয়নে আমরা ভালো খেলেছি। কিন্তু কয়েকটি মুহূর্তে আমাদের মনঃসংযোগের ঘাটতির সুবিধা উশুল করে নিয়েছে প্রতিপক্ষ। ভুলগুলি শুধরে নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
ডোবাল ব্যাটিং
কয়েকটি সেশনে অত্যধিক উইকেট হারানো-সহ দলের ব্যাটিংকে সিরিজ হারের অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন টেস্ট অধিনায়ক। এই সিরিজের ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করেছেন, লোকেশ রাহুল-ময়াঙ্ক আগরওয়ালের ওপেনিং পার্টনারশিপ, মিডল অর্ডারে কয়েকটি ভালো পারফরম্যান্স এবং ঋষভ পন্থের শতরান। তবে ব্যাটিংয়ে আরও গভীরতা চাইছেন বিরাট। লোয়ার মিডল অর্ডারের কাছ থেকেও আরও বেশি রান প্রত্যাশা করছেন। তাঁর কথায়, অল্প সময়ের ব্যবধানে উইকেট হারানো মোটেই ভালো বিষয় নয়। বিদেশে সাফল্য পেতে গেলে ধারাবাহিকতা ধরে রাখাটাও গুরুত্বপূর্ণ। যখন করতে পেরেছি তখন জিতেছি। তবে অন্তত আট নম্বর ব্যাটারও রান পেলে উপকৃত হবে দল।
পূজারা-রাহানের পাশে
প্রোটিয়াদের দেশে সিরিজ হারার পর অনেকেই মনে করছেন, চেতেশ্বর পূজারা (৬ ইনিংসে ১২৪, গড় ২০) ও অজিঙ্ক রাহানে ৬ ইনিংসে ১৩৬, গড় ২২) শেষ সিরিজ খেলে ফেললেন। বিশেষ করে ৫৯ রানের মাথায় কিগান পিটারসেনের ক্যাচ ফেলেন পূজারা। সেই পিটারসেন ৮২ রান করেন। শ্রেয়স আইয়ার বা হনুমা বিহারীরা যেখানে সফল হওয়ার পরও দলে জায়গা পাচ্ছেন না, সেখানে ব্যর্থ সিনিয়রদের বয়ে বেড়ানো নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বিরাট যদিও পূজারা-রাহানের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ভবিষ্যতে কী হবে সেটা আমার বলার নয়, এ ব্যাপারটি নির্বাচকদের। কিন্তু আমরা এখনও পূজারা ও রাহানের পাশে রয়েছি। তাঁরা টেস্টে দেশের জন্য কেমন খেলেছেন তা সকলেই জানেন। এমনকী জোহানেসবার্গেও তাঁদের পার্টনারশিপ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।
ডিআরএস নিয়ে চুপ
ডিআরএস বিতর্ক নিয়ে বিরাটকে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। শুধু বলেন, মাঠে কী হচ্ছিল সে সম্পর্কে বাইরের কারও ধারণা নেই। তবে আমরা তিন-চারটি উইকেট তুলে নিতে পারলে খেলার ফল অন্যরকম হতে পারতো। ভারতীয় দলে কী পরিবর্তন দরকার সেটাও খোলসা করেননি বিরাট। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সিরিজ হারের ফলে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকায় চার থেকে পাঁচে নেমে গিয়েছে ভারত। চারে উঠে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জয়ের সুযোগ হাতছাড়া করায় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার রাস্তাটাও কঠিন হয়ে গেল ভারতের কাছে।
এগিয়েও সিরিজ হার
এই নিয়ে চারবার প্রথম টেস্ট জেতার পরও ভারত সিরিজে হারল। ১৯৮৪-৮৫ মরশুমে দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড সিরিজে, ২০০৬-০৭ মরশুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে, ২০১২-১৩ মরশুমে দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এবং আজ দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে। ভারতের পরাজয়ে হতাশ সুনীল গাভাসকরও। তিনিও ভেবেছিলেন ভারত ৩-০ ব্য়বধানেই সিরিজ জিতে ফিরবে। এর কারণ হিসেবে সানি বলেন, এনরিখ নরকিয়ার মতো বোলার টেস্ট সিরিজে ছিলেন না। সমস্যায় ফেলার মতো বোলার বলতে ছিলেন কাগিসো রাবাডাই। কিন্তু তারপরও ভারত জিততে পারল না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিআরএস ডিসিশন বা স্লিপে পূজারার ক্যাচ ফেলার জন্য ভারত সিরিজ হারেনি। হেরেছে ব্যাটিংয়ের জন্য। প্রথম টেস্টের প্রথম দিনের মতো ব্যাটিংটাই ভারত করতে পারেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন বোলার মর্নি মরকেল বলেন, ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকা জিতল জয়ের খিদে বজায় রেখেই।
South Africa’s brilliant series win has placed them nicely in the latest #WTC23 standings 📈 pic.twitter.com/SJkLtZVpUS
— ICC (@ICC) January 14, 2022