৩০-এ বিরাট কোহলি: কোথায় এখন তাঁর ২০০৮ সালের অনুর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় দলের সতীর্থরা
সোমবার (৫ নভেম্বর) বিরাট কোহলির ৩০তম জন্মদিন। এই বিশেষ সময়ে, মাইখেল বেঙ্গালি কোহলির ২০০৮ সালের অনুর্ধ-১৯ ভারতীয় দলের সতীর্থদের খোঁজ লাগালো। তারা এখন কোথায়?
সোমবার (৫ নভেম্বর), ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি ৩০-এ পা দিলেন। এই মুহূর্তে তিনি বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু তাঁর এই উজ্জ্বল ক্রিকেট যাত্রার শুরুটা হয়েছিল আজ থেকে ১০ বছর আগে। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ভারতের অনুর্ধ্ব-১৯ দলকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন বিরাট।
পরের ১০ বছরে বিরাট নিজেকে এক অন্যমাত্রায় তুলে নিয়ে গিয়েছেন। ক্রিকেট বিশ্বে সাই একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছএন বিরাটের শ্রেষ্ঠত্ব। এমনকী, সর্বকালের সেরাদের সঙ্গেও তাঁর তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে। ২০০৮ সালের অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেই দলে বিরাট ছাড়াও আরও ১৪ জন খেলোয়াড় ছিলেন। ভারত অধিনায়কের ৩০তম জন্মদিনে মাইখেল বেঙ্গলি সেই বাকি ১৪ জনের খোঁজ লাগালো। কোথায় তারা এখন? এখনও ক্রিকেট খেলেন তাঁরা?
রবীন্দ্র জাদেজা
৩৯টি টেস্ট, ১৪৪টি ওডিআই এবং ৪০টি টি২০আই - জাদেজাই বিরাট কোহলির পর সেই দলের সবচেয়ে সফল সদস্য। বর্তমানে, তিনি ভারতের টেস্ট দলের নিয়মিত সদস্য। এশিয়া কাপ থেকে তিনি দারুণভাবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও ফিরে এসেছেন। আইপিএলে, তিনি চেন্নাই সুপার কিংস, গুজরাট লায়ন্স, কোচি টাস্কার্স কেরল এবং রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেলেছেন। সিএসকের হয়ে দুবার আইপিএল ট্রফিও জিতেছেন।
অজিতেশ আর্গল
বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্গাল, ৫ ওভারে ৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছিলেন। হয়েছিলেন ম্যান অফ দ্য ম্যাচ। কিন্তু দুঃখের কথা তিনি এখন আর ক্রিকেট খেলেন না। ভদোদরায় তিনি এখন আয়কর বিভাগের ইন্সপেক্টর হিসাবে কাজ করেন।
নেপোলিয়ন আইনস্টাইন
একসময় তাঁর অদ্ভুত নামের জন্যই এই ক্রিকেটার খবরে উঠে এসেছিলেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ২০০৮ সালে চেন্নাই সুপার কিংস তাঁকে দলে নিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তাঁর সম্পর্কে কোনও তথ্যই পাওয়া যায় না। তবে এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান যে পেশাদার ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত নেই তা বলেই দেওয়া যায়।
শ্রীবৎস গোস্বামী
২০০৮ সালের অনুর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপে মোট ১৫২ রান করেছিলেন এই বাঙালি উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। আইপিএল-এ তিনি কলকাতা নাইট রাইডার্স, রাজস্থান রয়্যালস, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু এবং সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদে খেলেছেন। এছাড়া ডোমেস্টিক ক্রিকেটে তিনি বাঙলা দলের অন্যতম সদস্য।
পেরি গোয়াল
শ্রীবৎস থাকায় বিশ্বকাপের একটিও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি দলের অপর উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান গোয়াল। সেই টুর্নামেন্টের পর তিনি ক্রিকেট খেলাই ছেড়ে দেন। কেরিয়ার গড়েন ম্যানেজমেন্টে। বর্তমানে, তিনি আরএসজি প্রপার্টি নামে একটি সংস্থার ডিরেক্টর।
ইকবাল আবদুল্লা
টুর্নামেন্টে ভারতের সেরা বোলারদের মধ্যে একজন ছিলেন এই আবদুল্লা। ১৩ গড়ে তিনি ১০ উইকেট নিয়েছিলেন। মুম্বইয়ের রঞ্জি দলের নিয়মিত সদস্য আবদুল্লা ২০১৬ সালে কেরলে চলে আসেন। আইপিএল-এ তিনি কলকাতা নাইট রাইডার্স এবং রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু দলে খেলেছেন।
সিদ্ধার্থ কল
ভারতের হয়ে সিদ্ধার্থ ৩টি ওয়ানডে এবং ২টি টি২০আই ম্যাচ খেলেছেন। এখনও তিনি ভারতীয় দলে জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে পঞ্জাবের হয়ে খেলেন। আইপিএল-এ তিনি দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, কলকাতা নাইট রাইডার্স, কিংস ইলেভেন পঞ্জাব এবং সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলেছেন।
তরুবর কোহলি
আইপিএল-এর প্রথম দুই বছরে তিনি যথাক্রমে রাজস্থান রয়্যালস ও কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের হয়ে খেলেছেন। পঞ্জাবের হয়ে ২০১২-১৩ মরসুমে ঝাড়খন্ডের বিপক্ষে রঞ্জি ট্রফির সেমিফাইনাল তিনি ত্রিশতরান করেছিলেন। ২০১৮-১৯-এর বিজয় হাজারে ট্রফিতে তরুবর কোহলি মিজোরামের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান-স্কোরার (৩৭৩) এবং উইকেট শিকারী (৮) তিনিই ছিলেন।
অভিনব মুকুন্দ
ঘরোয়া সার্কিটের মুকুন্দ একজন প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটার। তামিলনাড়ু, সাউথ জোন, ভারত এ, এবং অবশিষ্ট ভারত - সব দলের হয়েই বড় রান আছে তাঁর। ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ড সফরে তিনি ভারতীয় টেস্ট দলেরও অংশ ছিলেন। তবে রান না পাওয়ায় দল থেকে বাদ পড়ে যান। ২০১৭-তে শ্রীলঙ্কা সফরে ভারতীয় দলে ফিরেই তিনি ৮১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। কিন্তু তারপর ফের তাঁকে ঘরোয়া ক্রিকেটেই ফিরতে হয়েছে।
মনীশ পাণ্ডে
২০০৮-এর অনুর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপে বলার মতো কিছু পারফরম্যান্স ছিল না মনীশের। তবে তিনি কিন্তু ভারতীয় দলের হয়ে ২৩ টি ওয়ানডে এবং ২৫টি টি-২০ খেলে ফেলেছেন। আইপিএলে তিনি কলকাতা নাইট রাইডার্স, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, পুনে ওয়ারিয়র্স, রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু এবং সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলেছেন। আরসিবির হয়ে তিনিই প্রথম ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আইপিএল-এ শতরান করেছিলেন। ২০১২ সালে কেকেআর-এর ট্রফি জয়ের পিছনেও তাঁর বড় অবদান ছিল। ভারতীয় দলের পরিমণ্ডলে তিনি এখনও রয়েছেন।
প্রদীপ সাঙ্গোয়ান
বিশ্বকাপের সেই দলে সাঙ্গোয়ানই ছিলেন একমাত্র ভারতীয় যিনি এক ইনিংসে ৫ উইকেট দখল করেছিলেন। দিল্লি রঞ্জি দলের সদস্য তিনি। আইপিএল-এ তিনি দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, গুজরাট লায়ন্স, কলকাতা নাইট রাইডার্স, ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলেছেন। ২০১৩ সালে অবশ্য মাদক নেওয়ার অপরাধে তাঁকে ১৮ মাসের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
দুভ্ভারপু শিবা কুমার
এই বোলিং অলরাউন্ডার এখনও ঘরোয়া ক্রিকেটে অন্ধ্রপ্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ২৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার ৪২টি প্রথম শ্রেনীর ম্য়াচে ১০৬১ রান করেছেন এবং ১৩৩টি উইকেট নিয়েছেন।
তন্ময় শ্রীবাস্তব
২০০৮ সালের অনুর্ধ -১৯ বিশ্বকাপে ভারতের সেরা ব্য়াটসম্য়ান ছিলেন তন্ময়। ৫২ গড় নিয়ে তিনি টুর্নামেন্টে ২৬২ রান করেছিলেন। কিন্তু কেরিয়ারের শুরুতে তিনি যে প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছিলেন তা শীর্ষ পর্যায়ে তিনি ধরে রাখতে পারেননি। বর্তমানে তিনি উত্তরপ্রদেশের রঞ্জি দলের অধিনায়ক ও তাদের ব্য়াটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ।
সৌরভ তিওয়ারি
ভারতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে ৩টি ওডিআই খেলেছেন সৌরভ তিওয়ারি। 'ধোনির মতো চুল' রাখার জন্য বাড়তি প্রচার পেয়েছিলেন একসময়। ২০১০ সালের আইপিএলে তিনি প্রথম সুযোগ পেয়েছিলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলে। তারপর তিনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, দিল্লি ডেয়ারডেভিলস এবং রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টস-এর হয়ে খেলেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে এখনও তিনি তাঁর রাজ্য ঝাড়খন্ডের হয়ে খেলেন।