মোহনবাগান সভাপতির পদে টুটু বসুকে বসানো কি স্রেফ আই ওয়াশ? সময়েই দেবে এর উত্তর
সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে মোহনবাগান ক্লাবের সভাপতি পদে বসলেন টুটু বসু। কর্মসমিতির বৈঠকে বুধবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ক্লাবের অভিভাবক হিসেবে প্রবাদপ্রতীম কর্তা এবং ক্লাবের অসমেয়র সর্বক্ষণের সক্ষী টুটু বসুই ফের সভাপতির চেয়ারে বসবেন। মোহনবাগান অন্তঃপ্রাণ এই মানুষটিকে চাননা এমন মোহনবাগানী আতশ কাঁচ দিয়ে খুঁজেও পাওয়া যাবে না।

তবে, প্রশ্ন রয়েই গেল কত দিন পর্যন্ত মোহনবাগানের সভাপতি থাকবেন টুটু বসু। নিজের মেয়াদ কি তিনি আদৌ শেষ করতে পারবেন। এই প্রশ্নের জন্ম দেয় বুধবারের বৈঠক শেষে মোহনবাগানের নব নিযুক্ত সচিব দেবাশিস দত্তের একটি মন্তব্য। তিনি বলেছেন, "ক্লাবের সভাপতি পদে এখন টুটুবাবুই থাকছেন। সেই সঙ্গে আরও একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। মোহনবাগানের সভাপতি থাকতে হলে ২০ বছর সদস্য থাকতে হয়। সেটা আগামী দিনে কিছুটা শিথিল করে ১৫ বছর করা হবে। টুটুবাবুর শরীর ভাল না। তাছাড়া তিনি বেশিরভাগ সময় দুবাইয়ে থাকেন। সেসব ভেবেই আগামী দিনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আপাতত সভাপতি পদে টুটুবাবুই থাকছেন।"
দেবাশিসের এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, বয়স এবং সেই কারণে শরীরী অসুস্থতা ও বেশির ভাগ সময়ে দেশে না থাকার কারণ দেখিয়ে অদূর ভবিষ্যতে টুটু বসুকে সরিয়ে সেই পদে বসলতেই পারেন অন্য কোনও 'যোগ্য' ব্যক্তি। এমনিতেই দেবাশিস আগেও জানিয়েছিলেন, ক্লাব সদস্যদের অনেকেই সভাপতি হওয়ার যোগ্য। ফলে দুইয়ে দুইয়ে যে চার হয়, সেই অঙ্কটা বোঝা কি এতটাই কঠিন!
ময়দানের অভিজ্ঞ মহলের দাবি, এটা সমর্থকদের আই ওয়াশ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। যে ভাবে রাজ্য়ের দুই মন্ত্রী অরূপ রায় এবং মলয় ঘটককে সহ সভাপতি নিযুক্ত করা হয়েছে, এবং শাসক দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষকে একই পদে আনা হয়েছে তাতে, মোহনবাগানকে নিন্দুকেরা তৃণমূলের পার্টি অফিস বলে ডাকা শুরু করেছিলেন। পাশাপাশি যে ভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় দেবাশিস দত্ত সচিব নির্বাচিত হয়েছেন, সেটাও ভাল চোখে দেখেননি অনেকে। ফলে টুটু বসুকে সভাপতি রেখে দিয়ে সমর্থকদের রোষের মুখে পড়ার হাত থেকে যেমন বাঁচা গেল, তেমনই রাজনৈতিক দলের আখড়া-এই প্রবাদটিও কিছু দিনের জন্য মুছে ফেলা গেল। যদিও অরূপ রায় এর আগেও মোহনবাগানের সহ সভাপতি ছিলেন।

বিশেষ করে ক্লাব নির্বাচনে সঞ্জয় বসু এবং টুটু বসুর প্রত্যক্ষ উপস্থিতি না থাকার নেপথ্যে বাবুন (স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়)-দেবাশিস বন্ধুত্বের ফসল হিসেবেই দেখছে ওয়াকিবহল মহল। দীর্ঘদিন ময়দানের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা মানুষদের নতুন করে বলে দিতে হয় না, কী চলছে ক্লাবের অন্দরে। মোহনবাগান জনতার কাছে বসু পরিবার এক অন্য সেন্টিমেন্ট। ক্লাবের বেহাল দশায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে এই প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন টুটু বসু-সৃঞ্জয় বসুরা।
যে ভাবে একটা সময়ে ক্লাবের পিছনে জলের মতো অর্থ খরচ করেছে বসু পরিবার, তা কারোর অজানা নয়, সমর্থকরা এখনও টুটু বসু বলতে অজ্ঞান! আদ্যপ্রান্ত সবুজ-মেরুন টুটু বসু এবং তাঁর পরিবারের অবদান গেঁথে রয়েছে মনের মধ্যে। ফলে সেই জায়গায় পুরোপুরি বসু পরিবারকে ছেঁটে বাদ দিয়ে দিলে ভবিষ্যতে সমর্থকদের এবং সাধারণ সদস্যদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই হতো দেবাশিস অ্যান্ড কোম্পানিকে। তাই সদস্য-সমর্থকদের প্রশ্নবাণের হাত থেকে বাঁচতে এবং ভাবমূর্তি ঠিক করে 'অসুস্থতা, বয়স এবং দুবাই নিবাসী'-এই ত্রিফলাকে অবলম্বন করেই নতুন 'বিশেষ যোগ্য' ব্যক্তিকে সভাপতির আসনে বসানোর রাস্তা খোলাই রাখল মোহনবাগান।