আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যবহার হয় তিন রঙের এই তিন কোম্পানির বল, আছে ফারাকও
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যবহার হয় তিন রঙের এই তিন কোম্পানির বল, আছে ফারাকও
চেন্নাই টেস্টে হারের পর এসজি বলকে নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। এত খারাপ এসজি-টেস্ট বল আগে দেখিনি বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। চিপকে শক্ত, পাটা উইকেটের জন্য বলের এমন দশা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকী বল প্রস্তুতকারী সংস্থাও। বিরাট কোহলি বরাবরই ডিউকস বল পছন্দ করেন। তবে ভারতে খেলা হয় এসজি বলেই। এ ছাড়া কোকাবুরা বলেও হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এই তিন সংস্থাই লাল, সাদা ও গোলাপি বল তৈরি করে। তবে তিন সংস্থার বলের মধ্যে ফারাকও রয়েছে।
এসজি বলেই খেলা হয় ভারতে
দুই ভাই কেদারনাথ ও দ্বারকানাথ আনন্দ ১৯৩১ সালে সান্সপেয়ারিল্স নামে সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন শিয়ালকোটে। পরে ক্রীড়া সরঞ্জাম রফতানির কথা ভেবে তারা ১৯৪০ সালে আরেকটি সংস্থা গ্রিনল্যান্ডস তৈরি করেন। দেশভাগের পর এই পরিবার আগ্রায় আসে এবং ১৯৫০ সাল থেকে মীরাটে এসজি সংস্থা ক্রীড়া সরঞ্জাম তৈরি করে আসছে। বল তৈরির পাশাপাশি তারা ব্যাটও বানায়। ভারতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও ঘরোয়া ক্রিকেটে এসজি-র বল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ১৯৯৪ সাল থেকে ভারতে টেস্ট ম্যাচ হচ্ছে এসজি বলে।
অস্ট্রেলিয়ার কোকাবুরা
ক্রিকেট ও ফিল্ড হকির সরঞ্জাম বানিয়ে থাকে অস্ট্রেলিয়ার সংস্থা কোকাবুরা। অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনিতে জনপ্রিয় কিংফিশার পাখি থেকে এই সংস্থার এমন নামকরণ। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবোয়েতে এই সংস্থার বলে টেস্ট-সহ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়।
ইংল্যান্ডের ডিউক বল
১৭৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রিটিশ ক্রিকেট বলস লিমিটেড। ক্রিকেট সরঞ্জাম প্রস্তুতিতে ডিউক ফ্যামিলির প্রতিষ্ঠা করা এই সংস্থা কার্যত নির্বিকল্প আজও। ১৯৮৭ সালে এই সংস্থাটি কিনে নেন ভারতীয় উদ্যোগপতি দিলীপ জাজোদিয়া। এই সংস্থাই ডিউকস বল তৈরি করে, যা দিয়ে টেস্ট খেলা হয় ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে। আয়ারল্যান্ডেও এই বল ব্যবহার করা হয়।
তিন বলে ফারাক আছে
তিন সংস্থার বলেই সিমে ৬টা রো বা সারি আছে। এসজি ও ডিউকস বলের সেলাই হাতে করা হয়। এর ফলে সেলাই যেমন দেখা যায় স্পষ্ট, তেমনই বল ভালো থাকে দীর্ঘ সময়। কোকাবুরা বলে ভেতর দিকের ২টি সেলাই হাতের হলেও বাইরের দিকের দুদিকেই মেশিনে সেলাই করা হয়। কোকাবুরার সিম ডিউকস বলের চেয়ে অন্যরকম, তুলনায় কম স্যুইংও হয়। তাই স্যুইং বোলাররা ডিউকস বল বেশি পছন্দ করেন। ২০১৭ সালে ডিউকস বল নিয়ে তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিল নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড, বিশেষ করে টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্টদের সুবিধার কথা ভেবে। ডিউকস বলের সেলাই এমনভাবে করা হয় যার ফলে এটি দীর্ঘক্ষণ শক্ত থাকে এবং এর আকৃতিও অপরিবর্তিত থাকে দীর্ঘ সময়। কোকাবুরা বলের মাঝামাঝি হাতের সেলাই থাকে। তবে ডিউকস বলের মতো ছটি রো বলকে যতটা ভালো করে ধরে রাখে, এক্ষেত্রে সেটা হয় না। মেশিনের সেলাই করা অংশ বোলারদের বল গ্রিপ করার জন্য থাকে। বলের গুণমানে কোকাবুরার চেয়ে এগিয়ে ডিউকস। অন্য বলের চেয়ে সিমের সেলাই এসজি বলে অনেক কাছাকাছি থাকে, হাতের সেলাই হওয়ায় এর সিমও তাই সুস্পষ্ট।
আবহওয়া, পিচের চরিত্রও বলের উপর প্রভাব ফেলে। ইংল্যান্ডের পরিবেশে তাই ডিউকস বল আদর্শ। আবার ভারতীয় পিচ শক্ত হয়। অনেক সময় টেস্টের দ্বিতীয় দিন থেকে ভাঙতে থাকে। তা কাজে লাগিয়ে সফল হন স্পিনাররা। ভারতীয় পিচে সাধারণভাবে এসজি বল দীর্ঘক্ষণ ভালো আচরণ করে। বিরাট কোহলির কথাতেও সে কথা পরিষ্কার। বিরাট বলেছেন, ৬০ ওভারেই এসজি-টেস্ট বল নষ্ট হতে আমি দেখিনি। বলের শাইন নষ্ট হলেই ভারতে ক্রিকেটাররা বলের একদিক ক্রমাগত ঘষতে থাকেন বোলারদের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য। বাউন্সি উইকেটের ক্ষেত্রে আবার কোকাবুরা বল আদর্শ। প্রথমদিকে স্যুইং করাতে পারেন বোলাররা। বলের বয়স বাড়তে থাকলে পরে উইকেটের বাউন্স কাজে লাগিয়ে উইকেট তোলার চেষ্টা করেন বোলাররা। তবে বোলারদের প্রথম পছন্দ অবশ্যই থাকে ডিউকস বল। বল শক্ত থাকায় তা পুরানো হলেও স্লিপে ক্যাচ যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর আগে জশপ্রীত বুমরাহ্ খোলামেলাভাবে জানিয়েছিলেন যে, ডিউকস বলই তার সেরা পছন্দ। এতে যেমন স্যুইং করানো যায় তেমনই ব্যাটসম্যানদেরও সুবিধা হয়। এসজি বলে এত বছর ধরে ভারত ঘরের মাঠে দাপট দেখানো সত্ত্বেও ২০১৮ সালে উমেশ যাদবও ভারতে ডিউকস বল ব্যবহারের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। বিশ্বের সব জায়গায় ডিউকস বলই টেস্টের পক্ষে আদর্শ বলে ওই বছরই মন্তব্য করেন বিরাট। অশ্বিন আবার পছন্দ করেন কোকাবুরা বল।
তবে এটাও ঠিক ভারতে এসজি বল নিয়ে প্রায়ই অভিযোগ আসছে। নির্মাতা সংস্থা ক্রিকেটারদের পরামর্শ মেনে বলকে আরও উন্নত মানের করতে বদ্ধপরিকর বলেও জানিয়েছে। সিরিজের বাকি ম্যাচগুলিতে বল নিয়ে আলোচনা কোথায় পৌঁছায় সেদিকেই তাকিয়ে ক্রিকেট মহল।
বাজেট নয়, কৃষি বিল নিয়েই কথা বলব, লোকসভায় সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার রাহুল গান্ধী