সচিন এমন কাজ একবারই করেছেন! কেয়ার্নসকে সামলাতে দ্রাবিড় কেন তাকাচ্ছিলেন তেন্ডুলকরের দিকেই?
ক্রিস কেয়ার্নস এখন জীবন-যুদ্ধ চালাচ্ছেন। নিউজিল্যান্ডের এই বোলিং অলরাউন্ডারকে সামলাতে একবার হিমশিম খেয়েছিলেন সচিন তেন্ডুলকর ও রাহুল দ্রাবিড়। রিভার্স স্যুইং সামলানোর কৌশল খুঁজে পাচ্ছিলেন না। যদিও মাথা খাটিয়ে এক মোক্ষম টোটকা বের করেন সচিন। ভারতের তৎকালীন অধিনায়ক নিজেই এক অনুষ্ঠানে সেই কথা জানিয়েছিলেন।
মোহালি টেস্টের ঘটনা
মোহালিতে চলছিল ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ। সেই ম্যাচেই বল করছিলেন ক্রিস কেয়ার্নস। রিভার্স স্যুইং এতো ভালোভাবে করছিলেন যে দলের অন্যতম প্রধান দুই ব্যাটার সচিন তেন্ডুলকর ও রাহুল দ্রাবিড় এক ওভারে ২-৩ বার করে পরাস্ত হচ্ছিলেন। বল কোনদিকে মুভ করবে সেটাই আঁচ করতে পারছিলেন না দুজন। যদিও কিছুক্ষণ পরেই সেই বোলিং সামলানোর দারুণ কৌশল বের করে ফেলেন মাস্টার ব্লাস্টার।
কেয়ার্নসকে সামলাতে হিমশিম
সচিন বলেন, আমরা দুজনেই বলের উজ্জ্বল দিক কোনদিকে রয়েছে সেটা বুঝতে পারছিলাম না। রিভার্স স্যুইং সামলাতে এটা বোঝা খুব জরুরি। বলের উজ্জ্বল দিকটা পিচের যেদিকে পড়ে বল সেদিকেই স্যুইং করে। কিন্তু সেটা আগাম কিছুতেই ব্যাটারদের বুঝতে দিচ্ছিলেন না কেয়ার্নস। ফলে বারবারই সমস্যায় পড়ছিলেন সচিন-দ্রাবিড়। এরপর ওভারের মাঝেই সচিন ডেকে নেন দ্রাবিড়কে। তিনি বলেন, আমি একটা আইডিয়া বের করেছি, সেটা জানাতে চাই। দ্রাবিড় বলেন, এখনই, নাকি ওভারের পরে? সচিন বলেন ওভারের পরে হতেই পারে কিন্তু এটা খুব কার্যকরী হবে। এরপর দ্রাবিড়কে ওই মোক্ষম টোটকা দেন সচিন। সচিন বলেন, আমি নন-স্ট্রাইকিং এন্ডে থাকায় বোলারের কাছেই ছিলাম। বোলার রান আপের দিকে যাওয়ার সময় তাঁর দিকে নজর রাখা সহজ ছিল। তাই দুটি বলের মাঝে ব্যাটারের দিকে না থাকিয়ে আমি ঘুরিয়ে কেয়ার্নসকে লক্ষ্য করতে থাকি এবং বোঝার চেষ্টা করি পরের বলটি কোন দিকে স্যুইং করবে।
সচিনের মাস্ট্রারস্ট্রোক
সচিনের কথায়, রাহুলকে বলেছিলাম বলের উজ্জ্বল দিক পিচে পড়ার নিরিখে যদি তা আউটস্যুইঙ্গার হয় তবে আমি বাঁহাতে ব্যাট ধরব। ইনস্যুইং হবে বুঝলে ব্যাট ধরব ডান হাতে। বোলার বল করার সময় তাঁর দিকেই তাকিয়ে থাকেন ব্যাটাররা। কিন্তু আমি একবারই ওই কৌশল অবলম্বন করায় প্রতিটি বলের আগে কেয়ার্নসের দিকে নয়, রাহুলের নজর থাকছিল আমার ইশারার দিকে। তার সুফলও মেলে। কভার ড্রাইভে বাউন্ডারি থেকে মিড উইকেট, মিড অন দিয়ে ড্রাইভ মেরে চার আসতে থাকে। কেয়ার্নসও ভাবতে শুরু করেন যে বলে এতক্ষণ ব্যাটাররা বিট হচ্ছিলেন, সেখানে কীভাবে চার আসতে থাকে অবলীলায়! নিউজিল্যান্ডের ফিল্ডাররাও আমার দিকে তাকাচ্ছিলেন বারবার। কেয়ার্নসকে দেখে ব্যাট নাড়ানো দেখে তাঁদের সন্দেহও হয়। ছন্দ হারিয়ে ক্রিস কেয়ার্নস এরপর ক্রস সিম বল করেন। সেই বলে কী হয় সেদিকে না তাকিয়ে কেয়ার্নস আমার দিকে তাকিয়ে বলেন, "এই বলের জন্য কী করবে?" সচিন বলেন, কেয়ার্নস এটা জানতেন না যে রাহুলকে বলাই ছিল যদি আমি বুঝতে না পারি কোন বল অপেক্ষা করে আছে, তালে ব্যাটটা আমি মাঝখানে ধরব!
অনবদ্য কৌশলেই বাজিমাত
সচিন কত সালের ঘটনার কথা বলছেন তার উল্লেখ না করলেও দেখা যাচ্ছে, ১৯৯৯ সালের ১৪ অক্টোবর মোহালিতে ভারত-নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম টেস্ট হয়েছিল, তাতে কেয়ার্নস খেললেও ২০০৩ সালের টেস্টে খেলেননি। ১৯৯৯ সালের টেস্টে ভারত প্রথম ইনিংসে ৮৩ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল। দ্রাবিড় ১, অধিনায়ক সচিন ১৮ রান করেছিলেন। ডিওন ন্যাশ ২৭ রানে ৬ উইকেট নেন। কেয়ার্নস ২৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। নিউজিল্যান্ড ২১৫ রানে অল আউট হয়। জাভাগল শ্রীনাথ ৪৫ রানে ৬ উইকেট দখল করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ৩ উইকেটে ৫০৫ তুলে ডিক্লেয়ার করে। দ্রাবিড় করেন ১৪৪ ও সচিন ১২৬ রান করে অপরাজিত থাকেন। কেয়ার্নস দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৬ রান দিয়ে কোনও উইকেট পাননি। নিউজিল্যান্ড ৭ উইকেটে ২৫১ তোলার পর ম্যাচ ড্র হয়। অনিল কুম্বলে তিনটি ও শ্রীনাথ এবং সুনীল যোশী পেয়েছিলেন ২টি করে উইকেট। ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হন শ্রীনাথ।