রোহিতের ভারত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকায় প্রথম চারে, কার কী প্রতিক্রিয়া?
মোহালির পর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরু টেস্টও শেষ হয়ে গেল তৃতীয় দিনেই। দেশের মাটিতে গোলাপি বলের টেস্টে তিনে তিন আজ ভারত করল বেঙ্গালুরুতে। ২৩৮ রানে টেস্ট জয়ে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করল শ্রীলঙ্কাকে। চিন্নাস্বামীতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দুটি টেস্ট খেলে ভারত বড় ব্যবধানে জয় পেল দুটিতেই। ভারত সফরে শ্রীলঙ্কার টেস্ট জয়ের স্বপ্ন অধরাই রইল। যার নিট ফল বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পয়েন্ট তালিকায় ভারতের উত্থান।
|
প্রথম চারে
টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে প্রথম সিরিজেই হোয়াইটওয়াশ নিশ্চিত করল রোহিত শর্মার ভারত। তারা এখন আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকার চতুর্থ স্থানে। চলতি চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত এখনও অবধি জিতেছে ৬টি টেস্ট, পরাজয় তিনটিতে, ড্র ২টি টেস্ট। স্লো ওভার রেটের কারণে ৩ ওভার পেনাল্টি হয়েছে, অর্থাৎ পয়েন্ট কাটা গিয়েছে। সবমিলিয়ে ভারতের পয়েন্ট ৭৭। সাফল্যের শতকরা হার ৫৮.৩৩। শ্রীলঙ্কা রইল পঞ্চম স্থানে। এখনও অবধি পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তারপর যথাক্রমে পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ছয়ে গতবারের চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড।
রোহিতদের নজির
দেশের মাটিতে টানা পাঁচটি সিরিজে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়ে পাঁচটিতেই প্রতিপক্ষদের হোয়াইটওয়াশ করে ছেড়েছে ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজে আবার জোড়া হোয়াইটওয়াশ, যে নজির রোহিতের আগে কোনও প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের নেই। ইতিহাস গড়ে রোহিত বলেন, যেভাবে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আমরা খেলছি তা ব্যক্তিগত ও দলগতভাবে উপভোগ করছি। দলগতভাবে যা অর্জন করতে চেয়েছিলাম, তা পেরেছি। জাদেজা ব্যাটার হিসেবে ক্রমাগত উন্নতি করছেন। এতে দল শক্তিশালী হচ্ছে। বোলার হিসেবেও তিনি নিজের উন্নতিসাধন করে চলেছেন। একইসঙ্গে তিনি অসাধারণ ফিল্ডার, সবমিলিয়ে দারুণ প্যাকেজ। টি ২০ সিরিজের ফর্ম টেস্ট সিরিজেও ধরে রেখেছিলেন শ্রেয়স। রাহানে ও পূজারার জায়গা নেওয়ার লড়াইয়ে তিনি যে রয়েছেন সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা রেখেই তিনি যেভাবে প্রয়োজন সেভাবেই নিজেকে মেলে ধরেছেন। দলের সঙ্গে থাকতে থাকতেই তিনি আরও উন্নতি করবেন।
|
সতীর্থদের প্রশংসা
সিরিজ সেরা ঋষভ পন্থের প্রশংসা করে রোহিত বলেন, ঋষভও প্রতিটি ম্যাচেই উন্নতি করছেন। বিশেষ করে ভারতের পরিবেশ-পরিস্থিতিতে। ইংল্যান্ডেও তিনি ভালো খেলেছে, এখানেও ভালো খেললেন। বেশ কয়েকটি ক্যাচ ও স্টাম্পিংয়ে বোঝা গিয়েছে তাঁর আত্মবিশ্বাস কতটা! অশ্বিন সম্পর্কে রোহিত বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি অশ্বিন অল-টাইম গ্রেটদের একজন। যখনই তাঁর হাতে বল তুলে দিয়েছি, অশ্বিন ম্যাচ-জেতানো পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন। এখনও তাঁর মধ্যে আগামী কয়েক বছরের জন্য যথেষ্ট ক্রিকেট অবশিষ্ট রয়েছে। এখনও অনেক পথ চলা বাকি, অশ্বিনের জন্য ভালো মাইন্ডস্পেস নিশ্চিত করব। গোলাপি বল ভারতে কেমন আচরণ করবে, কীভাবে খেলতে হবে সে বিষয়ে পর্যাপ্ত ধারণা না থাকলেও আমরা অনেক কিছু মানিয়ে নিয়ে শেখার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি।
আত্মবিশ্বাসী পন্থ
ঋষভ পন্থ বলেছেন, একজন ক্রিকেটার হিসেবে আমি সব সময় উন্নতি করতে চাই। আগে কিছু ভুল করেছি। কিন্তু উন্নতির জন্য সব কিছু করেছি এবং করব। সব সময় একই ধরনের মানসিকতা নিয়ে নামি না। তবে চিন্নাস্বামীর পিচ কঠিন ছিল। তাই শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের পরিকল্পনা করেছিলাম। ব্যাট হাতে সিরিজে ১৮৫ রান করা পন্থ উইকেটের পিছনেও বেশ কিছু ভালো স্টাম্প আউট করেছেন, ক্যাচ ধরেছেন। তাঁর কথায়, সবটাই আত্মবিশ্বাসের ব্যাপার। আমি অনেক কিছু ভাবতে গিয়েই সমস্যা হতো। তবে এখন প্রসেসের উপর জোর দিয়েছি।
শ্রেয়স তৃপ্ত
ভারতের প্রথম ব্যাটার হিসেবে দিন-রাতের টেস্টে দুই ইনিংসেই অর্ধশতরান করেছেন শ্রেয়স আইয়ার। গোলাপি বলে কেরিয়ারের প্রথম টেস্টেই হলেন ম্যাচের সেরা। চিন্নাস্বামীর চ্যালেঞ্জিং পিচে সাফল্যের রহস্য জানাতে গিয়ে শ্রেয়স বলেন, যেভাবে খেলেছি সেটা আমার সাধারণ অ্যাপ্রোচ নয়। কিন্তু দেখলাম অন্য ব্যাটারদের যেখানে অসুবিধা হচ্ছে সেখানে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংই করব। বোলারদের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করে খেলছিলাম। টেল এন্ডাররা যখন এলেন তখন আমি ৫৫ রানে খেলছি, পরে আরও ৩৭ যোগ করি। প্রথম ইনিংসে যেভাবে খেলেছি তাতে শতরান হাতছাড়া হওয়া নিয়ে ভাবছিই না। সব সময় ভারতের হয়ে গ্রেটদের পাশে থেকে খেলার স্বপ্ন দেখেছি। দ্বিতীয় ইনিংসে আমাদের জন্য একটা টার্গেট দেওয়া হয়েছিল। সে কারণে যতটা সম্ভব বেশি বল খেলার চেষ্টা করেছি। নিজের সেরাটা দিয়ে দেশের জয়ে অবদান রাখতে পেরে তৃপ্ত কেকেআর অধিনায়ক। আগামী দিনেও সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান তিনি।
অশ্বিন ১০০!
ডেল স্টেইনকে টপকে যাওয়া এবং বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম বোলার হিসেবে শততম উইকেট পাওয়া রবিচন্দ্রন অশ্বিন বলেন, লাল বল থেকে গোলাপি বলে সরাসরি খেলতে হলো। যা চ্যালেঞ্জ ছিল। দুই রঙের বল ভিন্ন আচরণ করে। তাই নিজের স্পেল উপভোগ করাতেই প্রাধান্য দিয়েছিলাম। পিচের চরিত্র অনুয়ায়ী খুঁটিনাটির বিষয়ে সতর্ক থেকে ছন্দ ধরে রাখতে হয়। তবে আমেদাবাদে দিন-রাতের টেস্টে বল আরও দ্রুত যাচ্ছিল, বাউন্সও বেশি ছিল। অশ্বিনের পরামর্শ নিয়েই তিনি উইকেটের চরিত্র অনুযায়ী বোলিং করে থাকেন বলে জানিয়েছেন অক্ষর প্যাটেল।