রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলা, হরিয়ানার বিরুদ্ধে ইনিংস ও ৫০ রানে জয়, ১০ উইকেট আকাশ দীপের
রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা পাকা করে ফেলল বাংলা। হরিয়ানাকে ইনিংস ও ৫০ রানে হারিয়ে ৭ পয়েন্ট সংগ্রহ করে নিল মনোজ তিওয়ারির দল। ফলে গ্রুপশীর্ষে থেকেই শেষ আটে যাওয়ার দিকে এগিয়ে গেল বাংলা।
রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করে ফেলল বাংলা। ঘরের মাঠে ওড়িশা ম্যাচ এখনও বাকি। মনোজ তিওয়ারির দল যেভাবে খেলছে তাতে এলিট গ্রুপ এ-র শীর্ষে থেকেই বাংলা শেষ আটে যাচ্ছে, এটা বলাই যায়। যদিও এখনও অনেকটা পথ চলা বাকি, ফলে আত্মতুষ্টি নেই বাংলা শিবিরে।
বাংলার জয়ের ধারা অব্যাহত
হরিয়ানার বিরুদ্ধে আজ শেষ দিনে বাংলার জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩ উইকেট তুলে নেওয়া। গতকাল ফলো অনে বাধ্য হয়ে তৃতীয় দিনের শেষে হরিয়ানার স্কোর ছিল ৬৯ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৭। আজ ১০ ওভারেই বাকি তিনটি উইকেট তুলে নেয় বাংলা। ৭৪তম ওভারের শেষ বলে সুমিত কুমারকে ফেরান মুকেশ কুমার। প্রথম ইনিংসে লোয়ার অর্ডারের ব্যাটারদের নিয়ে ব্যাটিং করে শেষ অবধি ৭০ রানে অপরাজিত ছিলেন সুমিত। এদিন তিনি ২৯ বলে ১৩ করে সাজঘরে ফিরলে হরিয়ানার স্কোর দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ১৮৯।
অনবদ্য আকাশ দীপ
বাকি দুটি উইকেট তুলে নেন আকাশ দীপ। ৭৫তম ওভারের শেষ বলে আকাশ দীপ ফেরান অজিত চাহালকে। তিনি ২ বল খেলে কোনও রান করতে পারেননি। হরিয়ানার নবম উইকেটটি পড়ে ১৯০ রানে। এরপর ৭৯তম ওভারের শেষ বলে অমিত রাণা (৩৬ বলে ২০)-কে বোল্ড করে দেন আকাশ দীপ। কল্যাণীতেও আগের ম্যাচে তিনি দুরন্ত বোলিং করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন রোহতকের লাহলিতেও।
বাংলার পেসাররা দুরন্ত ফর্মে
হরিয়ানার ২০টি উইকেটের মধ্যে ১৮টিই নিলেন বাংলার পেসাররা। প্রথম ইনিংসে একটি উইকেট নেন স্পিনার প্রদীপ্ত প্রামাণিক, একটি রান আউট। ম্যাচে ১০টি উইকেটই গিয়েছে আকাশ দীপের ঝুলিতে। প্রথম ইনিংসে তিনি ১৩ ওভারে ৬১ রান খরচ করে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে আকাশ দীপের বোলিং ফিগার ২১ ওভার, ৫ মেডেন, ৫১ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এই প্রথম কোনও ম্যাচে ১০ উইকেট, স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচের সেরাও হয়েছেন আকাশ দীপ।
মুকেশ ও ঈশানও সফল
ঈশান পোড়েল প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও দুটি উইকেট নিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর বোলিং ফিগার ২০ ওভারের ৫টি মেডেন, ৪২ রান দিয়ে ২ উইকেট। মুকেশ কুমার নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি ২০ সিরিজের দলে ডাক পেয়েছেন। তাঁকে ইডেনে ওডিশা ম্যাচে পাবে না বাংলা। মুকেশ প্রথম ইনিংসে একটি উইকেট পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি সাতটি মেডেন-সহ ২৩ ওভারে ৬২ রানের বিনিময়ে দখল করলেন তিনটি উইকেট। বাংলা এবারের রঞ্জিতে চতুর্থ জয় ছিনিয়ে নিল। ইনিংসে জয় এলো এই নিয়ে দ্বিতীয়বার। নাগাল্যান্ডকে হারিয়েছিল ইনিংস ও ১৬১ রান। হরিয়ানাকে তাদের ঘরের মাঠে ইনিংস ও ৫০ রানে হারাল বাংলা। সাত পয়েন্ট পাওয়ায় ৬ ম্যাচ শেষে বাংলার মোট পয়েন্ট দাঁড়াল ৩২। দ্বিতীয় স্থানে থাকা উত্তরাখণ্ড তিন পয়েন্ট আদায় করেছে বরোদার বিরুদ্ধে ড্র হয়ে যাওয়া ম্যাচ থেকে। তাদের পয়েন্ট ৬ ম্যাচে ২৬। ফলে বাংলার গ্রুপশীর্ষে থেকেই শেষ আটে যাওয়া কার্যত নিশ্চিত হয়ে গেল।
আত্মতুষ্টি নেই, নেই সেলিব্রেশনও
বাংলার পেসারদের দুরন্ত পারফরম্যান্সের পাশাপাশি উল্লেখ করতেই হবে অনুষ্টুপ মজুমদারের কথাও। প্রথম ইনিংসে তিনি ২৪৫ বলে ১৪৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এই ইনিংসে ভর করেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলা। ১০৯ রানে বাংলার চারটি উইকেট পড়ে গিয়েছিল। ২০১ রানে পড়েছিল ৫ উইকেট। সেখান থেকেও বাংলা পৌঁছে যায় ৪১৯ রানে। এরপর ১৬৩ রানে শেষ হয় হরিয়ানার প্রথম ইনিংস। হরিয়ানা দ্বিতীয় ইনিংসে তোলে ২০৬। বাংলার হেড কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লা বলেছেন, নিঃসন্দেহে ভালো জয়। আমাদের আরও অনেকটা পথ যেতে হবে। আত্মতুষ্টির জায়গা নেই। কোনও সেলিব্রেশনও এখন হবে না। কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যেতে হবে এবং দলগত সংহতি বজায় রেখে সাফল্য সুনিশ্চিত করার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
(ছবি- সৌরাশিস লাহিড়ীর ফেসবুক)