রোমহর্ষক ম্যাচে দুর্দান্ত রান তাড়ার নজির! কার্তিক-ক্রুণালের প্রচেষ্টাতেও তীরে এসে তরী ডুবল ভারতের
হ্যামিল্টনে তৃতীয় টি২০আই-তে ভারতের বিরুদ্ধে ৪ রানে জিতল নিউজিল্যান্ড। এর ফলে তারা ২-১ ফলে সিরিজও জিতে নিল।
রবিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) নিউজিল্যআন্ডের বিরুদ্ধে তৃতীয় তথা শেষ টি২০আই ম্যাচে দুর্দান্ত রান তাড়ার নজির রাখল ভারত। ২১৩ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে রোহিত শর্মা ও বিজয় শঙ্কর ভারতের ইনিংসকে মজবুত ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। একেবারে শেষ লগ্নে ঝড় তুলে দীনেশ কার্তিক ও ক্রুণাল পাণ্ডিয়া, ভারতকে জয়ের খুব কাছাকাছি আনলেও, ২০৮ রানেই আটকে গেল ভারত। হার মানতে হল মাত্র ৪ রানে। ফলে ২-১ ফলে সিরিজে জয়ী হল কিউইরা।
টি২০আই ক্রিকেটে ভারত সর্বোচ্চ ২০৭ রান তাড়া করে জিতেছে। এদিন জিতলে তা ভারতের রেকর্ড গড়া জয় হতে পারত। কিন্তু ভারত থামল তাদের রান তাড়ার রেকর্ডের থেকে ১ রান বেশি করে। শুরুটা অবশ্য একেবারে নিখুঁত হয়েছিল। ৪ বলে ৫ রান করেই অবশ্য প্যাভিলিয়নে ফেরেন শিখর ধাওয়ান। কিন্তু, এরপর ভারতকে দারুণ মজবুত জায়গায় পৌঁছে দেন রোহিত শর্মা (৩২ বলে ৩৮) ও বিজয় শঙ্কর (২৮ বলে ৪৩)। প্রথম ৫ ওভারেই ভারত ৪১ রানে পৌঁছেছিল।
বিশেষ করে বিজয় শঙ্কর দুর্দান্ত ফর্মে খেলছিলেন। মোট দুটি ছয় ও ৫টি চার মারেন বিজয়। অপর প্রান্তে অবশ্য এদিন 'হিটম্যান'-এর ভূমিকায় ছিলেন না রোহিত। বিজয়কে মারতে দেখে ইনিংস গড়ায় মন দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁদের দুজনকেই প্রথম চাপে ফেলেন স্যান্টনার। কিউই জোরে বোলারই শেষ পর্যন্ত বিজয়কে ফেরান।
তিনি যেখানে ছেড়েছিলেন, ঠিক সেই গিয়ার থেকেই খেলতে শুরু করেছিলেন ঋষভ পন্থ। তাঁর বল মারা দেখে মনে হচ্ছিল যেন অন্য গ্রহ থেকে খেলতে এসেছেন। প্রথম ৬ বলেই তিনি ২৩ রান করে চাপে ফেলে দেন কিউইদের। কিন্তু অতিরিক্ত মারাটাই তাঁর কাল হয়।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে এই ম্যাচেই অভিষেক হয় জোরে বোলার ব্লেয়ার টিকনার-এর। বৈচিত্রের ফাঁদে তিনি খানিকক্ষণ বন্দী করেছিলেন ভারতের তরুণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানকে। তা ভেঙে বের হতে গিয়েই টিকনারের এক লো ফুলটসে ব্যাট চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ৩টি ছয় ও ১টি চারের সাহায্যে ১২ বলে ২৮ করে মিড উইকেট এলাকায় তিনি উইলিয়ামনের হাতে ধরা পড়েন।
উল্টো দিকে কিন্তু একপ্রান্ত ধরে রেখেছিলেন রোহিত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডেরিল মিচেলের বলে উইকেটের পিছনে ধরা পড়েন তিনি। মিচেলকে কিন্তু একই ওভারের শুরুতে হার্দিক ছয় মেরেছিলেন। কিন্তু দারুণভাবে ফিরে আসেন কিউই অলরাউন্ডার।
হার্দিক (১১ বলে ২১)-ও এদিন পন্থের মতো প্রতি বলেই মারতে যাওয়ার রোগে ভুগেছেন। নেমেই টিকনারকে একটি ছয় মেরেছিলেন হার্দিক। এরপর মিচেলকেও। কিন্তু কাগেলেইজ্ন ১৫তম ওভারে আচমকা এক দ্রুত গতির বাউন্সারে তাঁকে ফাঁদে ফেলেন। বলটি না বুঝেই পুল করতে যান হার্দিক। সময়ের ভুল করায় তা চলে যায় মিড উইকেটে কিউই অধিনায়কের হাতে। এমনকি হার্দিকের হাত থেকে ব্যাটটিও ছিটকে যায়।
শেষ ৫ ওভারে ভারতের প্রয়োজন দাঁড়ায় ৬৮ রান। মঞ্চ তৈরি ছিল মহেন্দ্র সিং ধোনি ও দীনেশ কার্তিকের জন্য। কিন্তু, ধোনির ব্যাট এদিন চলেনি। পরিস্থিতি অনুযায়ী ধোনিকে মারতেই হত, ডেরিল মিচেলের একটি বল তিনি স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে সোজাসুজি ওড়াতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বল প্রয়োজনীয় উচ্চতা না পাওয়ায়, তা বাউন্ডারি লাইনে টিম সাউদির হাতে চলে যায়। মাত্র ১ রানেই ফেরেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক।
এদিন টসের সময় ফ্ল্যাট পিচে রান তাড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রোহিত শর্মা জানিয়েছিলেন তাঁদের ব্যাটিং গভীরতা রান তাড়া করার জন্য মানানসই। ধোনির বিদায়ের পর দীনেশ কার্তিক (১৬ বলে ৩৩*) ও ক্রুণাল পাণ্ডিয়া (১৩ বলে ২৬) তার প্রমাণ রাখলেন। সপ্তম উিকেটে জুটিতে তাঁরা মাত্র ২৮ বলে ৬৩ রান তুললেন। কার্তিক মারলেন মোট ৪টি ছয়, আর ক্রুণাল ২টি চার ও ২টি ছয়।
এমনকী টিম সাউদির শেষ বলেও একটি ছয় মারলেন কার্তিক। কিন্তু শেষ বলে ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১১ রান। ফলে একেবারে তীরে এনে ফেললেও শেষ পর্যন্ত ভারত-তরীর ডুবে যাওয়াটা ঠেকাতে পারলেন না দুই কাণ্ডারি।
তার আগে একেবারে পাটা পিচ পেয়ে ভারতীয় বোলিংকে মনের সুখে পেটালেন কিউই ব্যাটসম্যানরা। ৪০ বলে ৫টি চার ও ৫টি ছয় মেরে ৭২ রানের ধুমধাড়াক্কা ইনিংস খেলেন কলিন মুনরো। ২৫ বলে ৪৩ ও ১৬ বলে ৩০ রানের দুটি ক্যামিও ইনিংস আসে যথাক্রমে সেইফার্ট ও গ্র্যান্ডহোমির ব্যাট থেকেও। এছাড়া কেইন উইলিয়ামসন ২১ বলে ২ ও ডেরিল মিচেল ১১ বলে ১৯ রান করেন।
প্রথম থেকেই মার খেলেও পাটা পিচেও শেষ দুই ওভারে ভুবনেশ্বর ও খলিল নানা বৈচিত্রপূর্ণ ডেলিভারিতে মাত্র ২০ রান দিয়ে নিউজিল্যান্ডের রান তোলার গতিতে কিছুটা রাশ টানেন। আর ভুবনেশ্বর (৩৭), খলিল (৪৭), হার্দিক (৪৪), ক্রুণাল (৫৪) প্রত্যেকেই যেখানে চুড়ান্ত মার খেলেন, সেখানে আরও একবার নিজের জাত চেনালেন ভারতের চায়নাম্যান বোলার কুলদীপ যাদব। ৪ ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে সেইফার্ট ও মুনরোর গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট নেন তিনি।
কলিন মুনরো ছাড়া আর কাউকে এদিনের ম্যাচের সেরার পুরস্কার দেওয়া সম্ভব ছিল না। আর সিরিজের সেরা হন নিউজিল্যান্ডের উইকেটরক্ষক ও ওপেনিং ব্য়াটসম্যান টিম সেইফার্ট।