IPL 2022: অর্শদীপ সিং অগ্রাহ্য করেছিলেন বাবার পরামর্শ! কানাডায় না গিয়ে আইপিএলে পিছনে ফেলছেন তারকাদের
চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে পাঞ্জাব কিংসকে জয়ের সরণিতে ফেরাতে বল হাতে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছেন অর্শদীপ সিং। বলা ভালো, ১৭ থেকে ১৯তম ওভারে অর্শদীপ সিংয়ের দুটি ও কাগিসো রাবাডার এক ওভারই রবীন্দ্র জাদেজার দলকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। এই ওভারগুলি রান তোলার গতিতে রাশ টানা না গেলে শেষ ওভারে কাজ সহজ হতো না ঋষি ধাওয়ানের। চলতি আইপিএলে যে ছন্দে অর্শদীপ সিং রয়েছেন তাতে তাঁকেও ভারতীয় দলের জন্য ভাবা উচিত বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা। ডেথ ওভারের বোলিংয়ে অর্শদীপ পিছনে ফেলেছেন জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ শামি, ভুবনেশ্বর কুমারদের।
বাবার পরামর্শ অগ্রাহ্য
পাঞ্জাবে একটা কথা বহুল প্রচলিত। ক্লাস টুয়েলভের পর কী হতে চাও? এমন প্রশ্ন সেখানে করা হয় না। বলা হয়, কবে কানাডা যাচ্ছো? উচ্চশিক্ষালাভের জন্য কানাডা গিয়ে পাঞ্জাবের অনেকেই সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, উচ্চ বেতনের চাকরিও করছেন। সালটা ২০০৭। পাঞ্জাবের বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ পাচ্ছিলেন না বলে অর্শদীপের বাবা তাঁকে বলেন, দিদির মতো কানাডার ব্র্যাম্পটনে চলে যেতে। উচ্চশিক্ষার জন্য অর্শদীপের দিদি সেখানে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসও করছেন। কিন্তু বাবার কাছে একটা বছর সময় চেয়ে নেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে এই এক বছরের মধ্যেই অর্শদীপ জেলা ক্রিকেটে ভালো পারফরম্যান্সের সুবাদে জায়গা করে নেন পাঞ্জাবের অনূর্ধ্ব ১৯ দলে। এরপর ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্যও হন। সেই বিশ্বকাপে যে বোলাররা নিয়মিত সুযোগ পেয়েছেন সেই শিবম মাভি, ঈশান পোড়েল, কমলেশ নাগরকোটিদের এখন পিছনে ফেলেছেন অর্শদীপ।
|
ডেথ ওভারে নজরকাড়া বোলিং
শুধু তাই নয়, চলতি আইপিএলে ডেথ ওভারের বোলিংয়ের ইকনমিতে ভারতীয় দলের তারকাদেরও পিছনে ফেলেছেন আন্তর্জাতিক অভিষেক না হওয়া অর্শদীপ। এ বছর আইপিএলে ডেথ ওভারে তাঁর ইকনমি ৫.৬৬। তাপর একে একে রয়েছেন সুনীল নারিন (৬.০০), জসপ্রীত বুমরাহ (৮.১৬), মহম্মদ শামি (৮.৪০), ভুবনেশ্বর কুমার (৮.৫০)। চলতি আইপিএলে শেষ চার ওভারে অন্তত ৩০টি বল যাঁরা করেছেন তাঁদের মধ্যে ইকনমির নিরিখে সেরা অর্শদীপ। চেন্নাই সুপার কিংস ম্যাচে গতকাল তিনি যখন ১৭তম ওভারে বল করতে আসেন, তার ঠিক আগের ওভারে সন্দীপ শর্মার বিরুদ্ধে ২৩ রান নিয়েছেন অম্বাতি রায়ুডু। এই ওভার সিএসকে-র জয়ের আশাও জাগায়। কিন্তু ১৭তম ওভারে অর্শদীপের ছটি বলে যে রান আসে তা হলো- ১,১,১,০১,১,২। চাপ বাড়ে সিএসকের উপর। কাগিসো রাবাডা ১৮তম ওভারে দেন মাত্র ৬ রান। অর্শদীপ ১৯তম ওভারে বল করতে আসেন। তখন চেন্নাইয়ের দরকার ১২ বলে ৩৫। ক্রিজে মহেন্দ্র সিং ধোনি, রবীন্দ্র জাদেজার মতো তারকা ফিনিশাররা। লো ফুল টস, ওয়াইড ইয়র্কারে সিএসকের উপর চাপ জিইয়ে রাখেন। ডেথ ওভারে অর্শদীপের বিরুদ্ধে ১২ বলে মাত্র ১৪ রান নিতে সক্ষম হয় চেন্নাই। এর আগে, আরসিবির বিরুদ্ধে ১৮তম ওভারে বল করতে গিয়ে দীনশ কার্তিক, বিরাট কোহলিদের শান্ত রাখেন। গুজরাত টাইটান্স ম্যাচেও ডেথ ওভারে তাঁর বোলিং প্রশংসিত হয়েছে।
প্রশংসা ময়াঙ্ক-রাবাডার
পাঞ্জাব কিংস অধিনায়ক ময়াঙ্ক আগরওয়াল ম্যাচের পর বলেছেন, অর্শদীপ দারুণ বোলিং করেছেন। চলতি আইপিএলে এর আগেও চাপের মুখে, কঠিন পরিস্থিতিতে কঠিন ওভারগুলি সাফল্যের সঙ্গেই করেছেন তিনি। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, অর্শদীপ বল চেয়ে নিতে দ্বিধা করেন না। তিনি দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। টি ২০ ক্রিকেটে ডেথ ওভার বিশেষজ্ঞ কাগিসো রাবাডা স্বীকার করেছেন, আমি ডেথ ওভারে বল করি বলে জানি যে আইপিএলেও আমাকে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে। কিন্তু অর্শদীপ চলতি আইপিএলে সেরা ডেথ বোলার। অর্শদীপের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও প্রতিভার প্রশংসা করেছেন রাবাডা। অর্শদীপ কোনওদিন ভুলবেন না, কায়রন পোলার্ডের পরামর্শের কথা।
মাথায় পোলার্ডের পরামর্শ
২০২০ সালের আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে শেষ ওভারে বল করতে গিয়ে কায়রন পোলার্ডের কাছে ছক্কা হজম করতে হয়েছিল। এরপর পোলার্ড অর্শদীপকে বলেছিলেন, বিপক্ষে কে রয়েছে তা নিয়ে না ভেবে নিজের সেরা বলটাই করো। তাতে ছয় হলেও অসুবিধা নেই। সেই পরামর্শ মেনে চলেন অর্শদীপ। ২০১৯ সালে তিন ম্যাচে ৩ উইকেট পান। ২০২০ সালে ৮ ম্যাচে ৯ উইকেট, গত আইপিএলে ১২ ম্যাচে ১৮ উইকেট দখল করেন। এবার মেগা নিলামের আগে তাঁকে ধরে রেখেছিল পাঞ্জাব কিংস। প্রথম বছর খুব বেশি ঘরোয়া ক্রিকেট না খেলায় টিম ম্য়ানেজমেন্টের আস্থা অর্জন না করতে পারলেও ভারতের অনূর্ধ্ব ২৩ দলের হয়ে নজর কাড়েন। করোনাকালে বাবার সঙ্গেই বাড়িতে ট্রেনিং চালিয়ে গিয়েছেন। পরে যুবরাজ সিং যে পাঞ্জাবের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য শিবির চালু করেছিলেন সেখানেও অনুশীলন করেন অর্শদীপ।
বাবার ইচ্ছাপূরণ অর্শদীপের
অর্শদীপের বাবা সিআইএসএফের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার, ক্রিকেটও খেলতেন। ছেলেকে নিয়ে যেতেন হকি খেলা দেখাতেও। এক স্কুটারে বাবা, দিদি ও মায়ের সঙ্গে যেতেন অর্শদীপ। বাবা বলেছিলেন, তুমি বড় হয়ে গাড়ি কিনো তখন আমরা আরাম করে খেলা দেখতে যাবো। বাবার সেই ইচ্ছাপূরণ করেছেন অর্শদীপ। কিনেছেন এসইউভি। অনিল কুম্বলে, রাহুল দ্রাবিড় থেকে মহম্মদ শামিদের পরামর্শে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করেছেন। ২০০৬ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ইরফান পাঠানের হ্যাটট্রিক দেখে তাঁকে আদর্শ মানেন। ফলো করেন মিচেল স্টার্কের বোলিংও। এবার অর্শদীপের অপেক্ষা ফর্মের ধারাবাহিকতা দেখিয়ে জাতীয় দলের দরজা খোলার।