তালগোল পাকিয়ে দিয়েছে পুনে ম্যাচ! সোমবার দলের নিখুঁত ভারসাম্যের সন্ধানে নামছে ভারত
একের পর এক ম্যাচ জিততে জিততে হঠাত পুনেতে হারতে হয়েছে টিম ইন্ডিয়াকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠের সিরিজে এই প্রথম পরাজিত হয়েছে ভারত। আর তারপরই দলের ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে ক্রিকেট মহলে।
টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের আত্মসমর্পন দেখার পর সবাই ধরেই নিয়েছিলেন একদিনের ক্রিকেটে ভারতের জেতাটা হবে কেকের উপর ছুরি চালানোর মতোই সহজ কাজ। কিন্তু সেই সিরিজই তিন ম্যাচের পর দাঁড়িয়ে আছে ১-১ ফলে। হাতে রয়েছে আর দুটি ম্যাচ। এই অবস্থায় সিরিজ জিততে গেলে সোমবার (২৯ অক্টোবর) ক্রিকেট ক্লাব অব ইন্ডিয়া বা সিসিআইতে ভারতকে জিততেই হবে।

কেদারের প্রত্যাবর্তন
দুই ম্যাচের পর শেষ তিন একদিনের ম্যাচের জন্য নির্বাচিত দলে প্রথমে জায়গা হয়নি কেদার যাদবের। এশিয়া কাপের ফাইনালে হ্যামস্ট্রিংয়ের পুরনো চোট ফিরে আসার পর তাঁকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজে ব্রাত্যই করে দিয়েছিলেন নির্বাচকরা। পরে বিতর্কের চাপে পরে শেষ দুই ম্যাচের জন্য তাঁকে দলের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়।
এখন পুনের হারের পর সেই কেদারকেই ত্রাতা হিসেবে ধরা হচ্ছে। পুনেতে রবীন্দ্র জাদেজাকে বসিয়ে ৫ বোলারে খেলায় দলের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে বলে মনে করছে টিম ম্যানেজমেন্ট। ম্যাচের পর কহলি বলেন, 'ভারসাম্য না থাকলে সবসময়ই একদিকে ঝুঁকে পড়তে হয়।' ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাও বলছেন ভারতীয় দলে অন্তত তিনজন অলরাউন্ডার দরকার (উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান-সহ)। কেদার দলকে সেই দরকারি ব্যাটিং ও বোলিং গভীরতা দিতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

সময় কম ধোনির হাতে
বিশ্বকাপের আগে ভারতের হাতে আর ঠিক ১৫ টি ম্যাচ আছে। কিন্তু এখনও ভারতের মিডল অর্ডার স্থিতাবস্থায় আসেনি। সবচেয়ে আশঙ্কার ধোনির ব্যাটে দীর্ঘদিন রান নেই। টি২০ দল থেকে ইতিমধ্যেই বাদ পড়ে গিয়েছেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। পুনেতে তার জবাব দেওয়া মঞ্চ প্রস্তুত ছিল, কিন্তু সেখানেও ব্যর্থতাই সঙ্গী হয়েছে তাঁর। শুধু সোমবারের ম্যাচের জন্যই নয়, বিশ্বকাপেও কিন্তু ভারতকে ভাল কিছু করতে গেলে ধোনিকে রানে ফিরতেই হবে। হাতে সময় কিন্তু খুব কম।

রায়ডু ও পন্থ
এই সিরিজ শুরুর আগে ক্যাপ্টেন কোহলি বড়মুখ করে বলেছিলেন রায়ডুর ধারাবাহিকতা তাঁদের মিডল অর্ডারের সমস্যা দূর করে দিচ্ছে। কিন্তু এই সিরিজে এখনও পর্যন্ত ৪ নম্বরে নিজের জায়গাটা পোক্ত করার মতো কিছু করতে পারেননি রায়ডু। পুনেতে যখন প্রয়োজন ছিল, তখন ভালো শুরু করেও (২২) ইনিংসকে টেনে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপের আগে কিন্তু তাঁকে ধারাবাহিকভাবে রান করে যেতে হবে।
অন্যদিকে পন্থ নিজের স্বভাবসিদ্ধ মারকুটে ব্যাটিং করলেও অভিষেক সিরিজে এখনও বলার মতো রান আসেনি তাঁর ব্যাট থেকে। তাঁর মধ্যে কিন্তু ভারত একজন ম্যাচ ফিনিশারকে খুঁজছে।

চিন্তা নেই যে তিনজনকে নিয়ে
বিশ্বকাপের দলে ভারতের ব্যাটিংয়ের প্রথম তিনটি স্থান নিয়ে অন্তত কোনও সমস্যা নেই। দীর্ঘদিন বাদে পুনেতে একসঙ্গে ব্যর্থ হয়েছেন দুই ওপেনার শিখর ও রোহিত। তবে সোমবারের ম্যাচেই তাঁদের ধুন্ধুমার দেখা যেতে পারে। আর তিন নম্বরে অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে নিয়ে নতুন করে কিছুই বলার নেই। তিনি ব্য়াট ধরলে এখন আর ১০০-র নিচে থামানো যাচ্ছে না তাঁকে। সোমবার আরও একটি শতরান এলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

বোলিং বিভাগ
বোলিং বিভাগে তুলনায় ভারতে চিন্তাটা কম। বিশ্বকাপের জন্য ভারতের প্রথম পছন্দের পেসার জুটি বুমরা ও ভূবনেশ্বর কুমার। পুনেতে বুমরা দলে ফিরেই দুর্দান্ত বোলিং করে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন। তাঁর জুড়িদার ভূবি অবশ্য ইনিংসের শেষদিকে বেশ মার খেয়েছেন। তবে সোমবারের ম্যাচেই ফের তাঁকে ছন্দে ফিরতে দেখা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
স্পিনার জুটি কুলদীপ ও চাহাল পুনে ম্য়াচেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তোলার গতি রুখে দিয়েছিলেন। সোমবার আরও একবার তার পুণরাবৃত্তি আশা করা হচ্ছে তাঁদের কাছ থেকে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং
পুনের জয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজজ কিন্তু প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাসটা পেয়ে গিয়েছে। হতাশাজনক টেস্ট সিরিজের পর তাঁরা যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তাতে তাদের কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। সোমবারও তারা রান করার জন্য প্রধানত ভরসা করবে শাই হোপের উপর। প্রথম ম্যাচে ব্যর্থতার পর বিশাখাপত্তনমে তিনি করেন ১২৩ আর পুনেতে ৯৫।
একই আশা রয়েছে শিমরন হেতমিয়ারকে নিয়েও। পুনেতে ভাল শুরু করেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি তিনি। তার আগের দুটি ম্যাচে তিনি করেন যথাক্রমে ১০৬ ও ৯৪। সোমবারও তাঁর ব্যাটে ঝড় উঠলে কিন্তু ভারতের কপালে দুঃখ আছে। এছাড়া কিয়েরন পাওয়েল ও হেমরাজের থেকেও ভাল ইনিংস আশা করা হচ্ছে। অধিনায়ক হোল্ডারও এখনও পার্থক্য গড়ে দেওয়ার মতো কোনও ইনিংস খেলতে পারেননিষ

ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং
পুনেতে ভারতকে অলআউট করে দেওয়ার পর আত্মবিশ্বাসে ফুটছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং বিভাগ। সম্মিলিত বিশে, করে পেসার ওবেদ ম্যাকয় ও স্পিনার অ্যাশলে নার্স দারুণ বল করেছেন। সোমবার কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ভারতকে বিব্রত করা নয়, হারানোর হুমকি দিচ্ছে।