দক্ষিণ আফ্রিকায় ফুরফুরে মেজাজে ভারত, পরিস্থিতিই আপাতত রেহাই দিল বিরাটকে?
বিরাট কোহলির সাংবাদিক বৈঠক ঘিরে ভারতীয় ক্রিকেট উত্তাল হলেও বিসিসিআই ধীরে চলো নীতিই নিয়েছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করেছিলেন ভারতের টেস্ট অধিনায়ক। কিন্তু তারপরও সৌরভ বা বিসিসিআইয়ের কোনও কর্তা এ প্রসঙ্গে কিছুই বলেননি। সৌরভ নিজে শুধু বলেছেন, স্পর্শকাতর বিষয়টি বিসিসিআই-ই দেখে নেবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ফুরফুরে মেজাজেই রয়েছে ভারতীয় দল, বিরাট বিতর্কে চাপের লেশমাত্র নেই।
|
লড়াই তুঙ্গে
এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় সৌরভ ও বিরাট অনুগামীদের লড়াই তুঙ্গে। নেশন স্ট্যান্ডস উইথ দাদা (Nation stands with Dada)-র পাল্টা হিসেবে ওয়ার্ল্ড স্ট্যান্ডস উইথ কোহলি (World stands with Kohli) হ্যাশট্যাগে চলছে টুইট-যুদ্ধ। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বোর্ডের সভাপতি যেমন, তেমনই দেশের অন্যতম সফল প্রাক্তন অধিনায়কদের মধ্যেও একজন। ভারতীয় ক্রিকেট মহল মনে করে, ম্যাচ গড়াপেটা কাণ্ডে যখন ভারতীয় ক্রিকেটে বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছিল, সেই কঠিন পরিস্থিতিতে সৌরভ টিম ইন্ডিয়াকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেন। যে শক্তিশালী দল সৌরভ গড়ে দিয়েছিলেন, মহেন্দ্র সিং ধোনি, বিরাট কোহলিরা সেই উত্তরাধিকারই বহন করেছেন। ভারতীয় ক্রিকেটে বিরাট কোহলি সৌরভকে যেভাবে নিশানা করেছেন, তাতে এই মহা-বিতর্ক কাটাতে মহারাজের পরিণত মস্তিষ্কেই আস্থা রাখছেন বোর্ডকর্তারা।
|
অস্বস্তিতে বিরাট
বিসিসিআই কর্তারা নিশ্চিত বিরাট কোহলিই মিথ্যা কথা বলছেন। তার কারণ নিয়েও চলছে নানাবিধ জল্পনা। এরই মধ্যে দিল্লি ক্যাপিটালসের কর্ণধার পার্থ জিন্দালও জানিয়ে দিয়েছেন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে কোনও সংশয়ই নেই। ফলে হাওয়া কিন্তু মোটেই বিরাটের দিকে নেই। বিরাট কোহলি পরিসংখ্যানের নিরিখে দেশের সফলতম অধিনায়ক হলেও একটিও আইসিসি ইভেন্টে দলকে চ্যাম্পিয়ন করাতে পারেননি। তাতেও প্রাক্তন হেড কোচ রবি শাস্ত্রীকে বগলদাবা করে তিনি ভারতীয় দলের শেষ কথা হতে চেয়েছিলেন। অহংবোধে এতটাই আচ্ছন্ন ছিলেন যে বোর্ডকর্তা বা নির্বাচকদের পাত্তাই দিতে চাননি। কিন্তু সেই ফানুস চুপসে গিয়েছে।
|
দল ফুরফুরে মেজাজে
ভারতীয় দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর বা সেখানে পৌঁছে গতকাল বিকেলে হাল্কা অনুশীলনের যে ভিডিও বিসিসিআই পোস্ট করেছে তাতে সৌরভ-বিরাট সংঘাতে দল যে চাপে নেই সেই ছবিটাই ফুটে উঠেছে। বিরাট কোহলি-সহ গোটা দলকে ফুরফুরে মেজাজেই দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় দল ফুটভলিও খেলেছে, ক্রিকেটাররা নিজেদের মধ্যে হাসি-ঠাট্টা করে হাল্কা মেজাজেই সময় কাটিয়েছেন। কিন্তু বিরাট কোহলির উপর নিশ্চিতভাবেই চাপ থাকছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই তাঁর অধিনায়কত্বের অগ্নিপরীক্ষা। ফর্মে থাকা রোহিত শর্মা ছিটকে গিয়েছেন। গত দুই বছরে অজিঙ্ক রাহানে ১৬ টেস্টে ২৯ ইনিংসে মাত্র ৬৮৩ রান করেছেন, গড় ২৪.৩৯। চেতেশ্বর পূজারা ১৭ ম্যাচে ৩২ ইনিংসে ৮৪৯ রান করেছেন, গড় ২৭.৩৯। অভিজ্ঞ ব্যাটারদের এই খারাপ ফর্মের কারণেই বিরাট আপাতত বোর্ডের কোনও পদক্ষেপ থেকে রেহাই পেয়ে গেলেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
|
মহা-বিতর্কের অবসান কীভাবে?
বিরাট কোহলি ২০১৯ সালের পর থেকে শতরান পাননি। ২০২০ সালের প্রথম থেকে ধরলে ১৩টি টেস্টে ২৩ ইনিংসে তাঁর রান ৫৯৯। গড় ২৬.০৪। কেন উইলিয়ামসন, স্টিভ স্মিথ, বাবর আজমদের পারফরম্যান্সের কাছে বিরাটের ফর্ম রীতিমতো লজ্জাজনক। দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারত ব্যর্থ হলে আরও চাপে পড়বেন বিরাট। নানাবিধ জল্পনা ভারতীয় ক্রিকেটে ভেসে বেড়াচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর চলাকালীন হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড় বা বোর্ড সচিব জয় শাহর মধ্যস্থতায় সৌরভ ও বিরাটের মধ্যে কথা হতে পারে, তারপর ভুল বোঝাবুঝি মিটে গিয়েছে গোছের বিবৃতি জারি করা হতে পারে। আবার বিরাটও সরাসরি সৌরভ বা জয় শাহের কাছে ফোন করে যদি দুঃখপ্রকাশ না করেন তাহলেও তিনি জয় বা দ্রাবিড়ের মধ্যস্থতায় সৌরভের সঙ্গে কথা বলার উদ্যোগ নিতে পারেন। ভারতীয় ক্রিকেটের মহা-বিতর্কের অবসান কীভাবে হয় সেটা নিশ্চিতভাবে কেউই বলতে পারছেন না।
(প্রচ্ছদের ছবি- বিসিসিআই টুইটার)