আইপিএলে ভারতের চেয়ে উপকৃত বিদেশিরাই! বোর্ডের নীতি প্রশ্নের মুখে, কোন পথে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব?
টি ২০ বিশ্বকাপে ভারতের লজ্জাজনক বিদায়ের পর চলছে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানের পালা। দল নির্বাচনের খামতি থেকে শুরু করে পর্যাপ্ত টি ২০ খেলার সুযোগ না পাওয়ার মতো একাধিক কারণ উঠে আসছে। ২০০৭ সালে প্রথম টি ২০ বিশ্বকাপেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। ২০০৮ সাল থেকে আইপিএল শুরু হয়। এরপর আর টি ২০ বিশ্বকাপ খেতাব জিততে পারেনি ভারত।
লাগাতার বিপর্যয়ে একাধিক প্রশ্ন
আইপিএলে ক্রিকেটাররা আর্থিকভাবে বিপুল লাভবান হন। নিলাম চলাকালীন কয়েক মিনিটেই অখ্যাত ক্রিকেটারও হয়ে যান কোটিপতি। ভারতীয় ক্রিকেটাররা ঈর্ষণীয় দর পান। আইপিএলে সব ম্যাচ খেলতে মুখিয়েও থাকেন ক্রিকেটাররা। এমনকী আইপিএলের জন্য পুরোদমে প্রস্তুত থাকতে ভারতীয় দলের হয়ে সিরিজ থেকেও সরে দাঁড়াতে দ্বিধাবোধ করেন না বাঘা বাঘা তারকারা। আইপিএলের মাধ্যমে ভারতীয় ক্রিকেটের ব্যাপক উন্নতির কথা বোর্ডের তরফে দাবি করা হয়। বিসিসিআই রেকর্ড দরে আইপিএলের স্বত্ত্ব বিক্রি করে। তবে ভারতীয় দলের পারফরম্যান্সে সেই প্রভাব কোথায়? গাদা গাদা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে বিশ্বের ১ নম্বর দল হওয়ার চেয়ে, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্যে যে গৌরব সেটা কি বুঝতে পারেন না ধনী থেকে ধনীতর হয়ে ওঠা ক্রিকেটাররা? দেশের হয়ে কাপ জেতার তাগিদ যে কতটা রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায় এবারের টি ২০ বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর ক্রিকেটারদের করা টুইটে গত টি ২০ বিশ্বকাপের পরের করা টুইটের মিল থাকায়।
আইসিসি ইভেন্টে ব্যর্থতার ধারা
২০১৩ সালের পর থেকে ভারত আইসিসির কোনও ইভেন্টে জিততে পারেনি। ২০১৪ সালের টি ২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের পর থেকে বিশ্বকাপের নক আউট পর্বের ম্যাচগুলি জিততে পারেনি। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জয় কি সেই ক্ষতের অব্যর্থ মলম হতে পারে? কোনওভাবেই নয়। অথচ এই আইপিএলে খেলে যাওয়া বিদেশি ক্রিকেটাররা ভারতীয়দের চেয়ে টি ২০ ফরম্যাটে অনেকটাই এগিয়ে। জস বাটলার রাজস্থান রয়্যালসে খেলেন। তাঁর দল এবার টি ২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে। হ্যাঁ, এই ইংল্যান্ডই দেশের মাটিতে টি ২০ সিরিজে ভারতের কাছে হেরেছিল। ভারতে এসেও হেরেছিল। কিন্তু ভারত দেশে ফেরার বিমান ধরেছে। ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান মেলবোর্নে খেলবে ফাইনাল। বাবর আজমদের হারিয়ে বড় বড় কথা বলা ভারতীয়দের ফানুস চুপসে গিয়েছে। এই ক্রিকেটারদের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার চেয়ে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রতি তাগিদই পরিলক্ষিত।
ভন খুঁজলেন মূল সমস্যা
ভারতকে তীব্র কটাক্ষে বিদ্ধ করেছেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ভন। তিনি দ্য টেলিগ্রাফে লিখেছেন, ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ জেতার পর ভারত কী করেছে? ভারত বহু বছর ধরে একইরকমভাবে সাদা বলের ক্রিকেট খেলছে। সাদা বলের ক্রিকেট ইতিহাসে ভারত সবচেয়ে আন্ডার-পারফর্মিং দল। আইপিএল খেলতে গিয়ে সকলে বলেন, এই টুর্নামেন্ট তাঁদের খেলার কতটা উন্নতি ঘটিয়েছে। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট কী পেয়েছে? ভারতে টি ২০ খেলার ভালো মানের ক্রিকেটার থাকলেও সঠিক পদ্ধতি মেনে খেলে না। সেটা করতে হবে। কেন প্রথম পাঁচ ওভারেই প্রতিপক্ষ বোলারদের চেপে ওঠার সুযোগ দেবে? অনেকেই চাকরি খোয়ানোর ভয়ে ভারতের বিরুদ্ধে কিছু বলেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণের মুখে পড়ার কথা ভাবেন। কিন্তু সোজা কথাটা বলা জরুরি। সঠিকভাবে টি ২০ খেলা জরুরি। ভারতের বোলিং বিকল্প বেশি নেই, ব্যাটিং গভীরতাও প্রত্যাশিত মানের নয় বলেই মন্তব্য ভনের।
কুম্বলের পরামর্শ
এবারের টি ২০ বিশ্বকাপ চলাকালীন দেখা গিয়েছে আইপিএল-সহ বিভিন্ন দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলা ক্রিকেটাররা কীভাবে টি ২০ ফরম্যাটে নিজেদের দক্ষতার বিকাশ ঘটিয়েছেন। জস বাটলার, অ্যালেক্স হেলস গতকাল ভারতকে গোহারান হারিয়েছেন বিগ ব্যাশে খেলার অভিজ্ঞতাকে সম্বল করেই। পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা বহু বছর আইপিএলে নেই। তবে তাঁরা পিএসএলের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড-সহ বিভিন্ন দেশের লিগে খেলেন। অস্ট্রেলিয়ার মাঠে খেলার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছেন বিশ্বকাপেও। ভারতের প্রাক্তন হেড কোচ অনিল কুম্বলে ২০২৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আমেরিকায় অনুষ্ঠেয় টি ২০ বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে ভারতীয় ক্রিকেটারদের বিদেশের টি ২০ লিগে খেলানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন। তিনি বলেছেন, এক্সপোজার সব সময় জরুরি। আইপিএলেও অনেক বিদেশি খেলতে আসেন। সেখানে তরুণ ক্রিকেটারদের বিভিন্ন দেশে গিয়ে টি ২০ লিগে খেলার অনুমতি দিলে তা আখেরে ভালোই হবে।
দল নির্বাচনে নজর
ভারতীয় দলের ব্যাটিং লাইন আপ ও অ্যাপ্রোচে রদবদলের পক্ষে সওয়াল করেছেন কুম্বলে। তাঁর কথায়, টি ২০ ফরম্যাটে ফিক্সড ব্যাটিং অর্ডার বলে কিছু হয় না। দলের শক্তি অনুযায়ী পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ফ্লেক্সিবল থাকতে হবে। কোন ব্র্যান্ডের ক্রিকেট দল খেলবে সেইমতো প্লেয়ার চিহ্নিত করে তাঁদের পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়ার পক্ষপাতী কুম্বলে। তিনি মনে করেন, ভারতীয় দল, এমনকী ভারতের এ দলেও এমন ব্যাটারদের রাখা উচিত যাঁরা বোলিং করতে পারেন।