IND vs SA: কী কারণে জো’বার্গে হারের মুখ দেখল ভারত, কোথায় কোথায় গলদ ছিল, দেখে নিন এক নজরে
জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডেরার্সে টেস্টে অপরাজিত তকমা হারিয়েছে ভারত। অতীতে এই মাঠে দু'টি টেস্ট জিতেছে টিম ইন্ডিয়া এবং ড্র করেছে তিনটি টেস্ট। কিন্তু এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হল একটি হার। ভারত'কে ওয়ান্ডেরার্সে হারিয়ে সিরিজে সমতায় ফিরিয়ে এনেছে প্রোটিয়া ব্রিগেড। কোনও একটি কারণে জো'বার্গে হারেনি ভারত, এই হারের নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ। এই প্রতিবেদনে সেই সকল দিকের বিশ্লেষণ-ই তুলে ধরা হবে।
বিরাট কোহলি'র অনুপস্থিতি:
জোহানেসবার্গ টেস্টে ভারত শুধু নিজেদের সেরা ব্যাটসম্যানকেই মিস করেনি, একজন দক্ষ নেতার অভাবও প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করেছে টিম ইন্ডিয়া। ব্যাট হাতে খারপ সময়ের মধ্যেই অধিনায়ক কোহলি প্রায় প্রতি ইনিংসেই ৩০ বা ৪০ রান করছিলেন। কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যাটিং উপভোগ করেন কোহলি। ২০১৮ সালে যেমন ওয়ান্ডারার্সে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারতের জয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন কোহলি। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস যত জয়ের দিকে অগ্রসর হয়েছে ততই মাঠের মধ্যে ভারতীয় দলের শরীরী ভাষায় পরিবর্তন এসেছে।
ঋষভ পন্থের ভুল শট নির্বাচন:
সেঞ্চুরিয়ান টেস্টের মতো জোহানেসবার্গেও পন্থের ভুল শট নির্বাচনের খেসারত দিতে হয়েছে ভারত'কে। দুই ইনিংস মিলিয়ে বাম হাতি উইকেটরক্ষকের ব্যাট থেকে এসেছে ১৭ রান। প্রথম ইনিংসেই এই ১৭ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র তিন বল খেলে গোল্ডেন ডাকে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ঋষভ পন্থ। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করলে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য আরও কিছুটা বেশ রান টার্গেট সেট করতে পারত ভারতীয় দল।
দুর্বল মিডল অর্ডার:
জো'বার্গে প্রথম ইনিংসে ভারতীয় মিডল অর্ডার একেবারেই ছন্দে ছিল না। চেতেশ্বর পূজারা, হনুমা বিহারী, অজিঙ্ক রাহানে কেউই দলকে ভরসা জোগাতে পারেননি। এই তিন ক্রিকেটারের মোট সংগ্রহ ছিল ২৩ রান। প্রধানত এই কারণেই মাত্র ২০২ রানে গুটিয়ে যায় ভারতের ইনিংস। এর ফলে একটা সময়ে ৪৯/১ থেকে ৯১/৪ -এ পৌঁছে যায় ভারতের স্কোর। প্রথম টেস্টেও ভারতের মিডল অর্ডার দলকে নির্ভরতা দিতে পারেনি। দুই ইনিংসে ব্যর্থ হয়েছিলেন পূজারা, রাহানে বা কোহলি'রা। লোকেশ রাহুলের শতরান এবং ময়াঙ্ক আগারওয়ালের অর্ধশতরানের সৌজন্যে সেঞ্চুরিয়ানে জয়ের মুখ দেখেছিল ভারত।
খারাপ ফিল্ডিং:
দ্বিতীয় টেস্টে একাধিক ক্যাচ মিস করেছে ভারতীয় দল। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে সহজ ক্যাচ মিস করেছেন ঋষভ পন্থ। অপর দিকে, নিজের বলেই টেম্বা বাভুমা'র ক্যাচ ফসকান শার্দূল ঠাকুর। দলের সব থেকে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যানের ক্যাচ শার্দূল ফেলায় আশ্বস্থ হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাও। শেষ পর্যন্ত এলগারের সঙ্গে ক্রিজে টিকে ছিলেন টেম্বা (২৩)। গত মরসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে মোট ৩০টি ক্যাচ ফেলেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে দু'টি ক্যাচ ফেলে ভারতীয় দল।
সিরাজের চোট:
ম্যাচের মাঝেই হ্যামস্ট্রিং-এ চোট পান মহম্মদ সিরাজ। জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ শামি'র সঙ্গে ধীরে ধীরে ভারতীয় পেস অ্যাটাকের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছেন সিরাজ। প্রথম দিনে হ্যামস্ট্রিং চোটের পর দ্বিতীয় দিন কিছুটা বোলিং করলেও ১৩০কিমি/ঘণ্টা'র আশেপাশে বোলিং করছিলেন সিরাজ। প্রথম ইনিংসে ৯.৫ ওভার বোলিং করেন সিরাজ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ছয় ওভার বোলিং করেন তিনি। তিনি পুরোপুরি সুস্থ থাকলে দক্ষিণ আফ্রিকা'র অধিনায়ক ডিন এলগারের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করতেন পারতেন। জো'বার্গ টেস্টে নায়ক এলগার। তিনি শেষ পর্যন্ত ৯৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। সিরিজ থাকলে চিত্রটা হয়তো অন্য রকম হত।
লোকেশ রাহুলের অধিনায়কত্ব:
ভারতীয় দলকে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য হয়তো মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না লোকেশ রাহুল। দ্বিতীয় টেস্টের কয়েক ঘণ্টা আগে পিঠের চোটের কারণে না খেলার সিদ্ধান্ত নেন বিরাট কোহলি। দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার চাপের মুখে রাহুলের নেতৃত্বে বেশ কিছু দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি কারণে দেরিতে শুরু হয়েছিল চতুর্থ দিনের খেলা। মেঘলা আকাশে যখন খেলা শুরু হয় তখন দলের অন্যতম সুইং বোলার শার্দূল'কে ব্যবহার করেননি রাহুল। প্রথম ইনিংসে একাই দক্ষিণ আফ্রিকা'র সাতটি উইকেট নিয়েছিলেন শার্দূল ঠাকুর। তাঁকে যখন চতুর্থ দিনে নয় ওভার পর বোলিং করতে আনা হয় তখন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। পাশাপাশি রবিচন্দ্রন অশ্বিন যখন ছন্দে আসছিলেন এবং সেট করছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা'র ব্যাটসম্যানদের তখনই মাত্র দু'ওভার করিয়ে সরিয়ে নেওয়া হয় তাঁকে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজের ভাগ্য নির্ধারণকারী টেস্টে কেপ টাউনে'র নিউল্যান্ডস-এ মাঠে নামবে ভারত। ১১ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে সেই টেস্ট। চোট কাটিয়ে ওই টেস্টে দলে ফেরার সম্ভবনা প্রবল বিরাট কোহলি'র।