সৌরভ-চ্যাপেল থেকে কোহলি-কুম্বলে বা ধোনি-শেহওয়াগ, ভারতীয় ক্রিকেটের বিতর্কিত অধ্যায় একনজরে
ভারতীয় ক্রিকেট এখন উত্তাল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও বিরাট কোহলির মধ্যে সংঘাত নিয়ে। সোশ্যাল মিডিয়াও সরগরম, আপাতত চাপা পড়ে গিয়েছে বিরাটের সঙ্গে রোহিত শর্মার সম্পর্কের অবনতি নিয়ে যাবতীয় জল্পনা। কপিল দেব-সুনীল গাভাসকর, মহম্মদ আজহারউদ্দিন-রবি শাস্ত্রী-সহ নানা বৈরিতার সাক্ষী ভারতীয় ক্রিকেট। তবে ম্যাচ গড়াপেটা কেলেঙ্কারি থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অধিনায়কত্বে ভারতের ঘুরে দাঁড়ানোর পর থেকেও কম বিতর্ক হয়নি ভারতের ক্রিকেট মহলে। তারই পাঁচটি বড় বিতর্কের দিকে নজর রাখা যাক।
সৌরভ বনাম চ্যাপেল
গ্রেগ চ্যাপেলকে ভারতের কোচ করে নিয়ে আসার পিছনে বড় ভূমিকা ছিল অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। কিন্তু চ্যাপেলের সঙ্গে সম্পর্ক এতটাই তিক্ত জায়গায় পৌঁছায় যে আজও অজি কিংবদন্তিকে গব্বর সিং হিসেবে অভিহিত করেন না মহারাজ। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটারকে গাইড করে ম্যাচ উইনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। যদিও পলিটিক্স দিয়ে টিম ইন্ডিয়ার বন্ধনকে বিষাক্ত করে দেন গ্রেগ চ্যাপেল। ২০০৫ সালে ভারতের কোচ হয়ে আসার পর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে কোণঠাসা করেছিলেন চ্যাপেল, ক্রমে দল থেকেও বাদ দেন। তবে তারপরও ঘরোয়া ক্রিকেটে স্মরণীয় লড়াই চালিয়ে অসাধারণ কামব্যাক করেন মহারাজ। রাহুল দ্রাবিড়ের অধিনায়কত্বে চ্যাপেলের আস্থা থাকলেও এর সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে। চরম ব্যর্থ হয় ভারত, ছিটকে যায় নক আউট থেকেই।
বিরাট-কুম্বলে বিতর্ক
২০১৬ সালে ডানকান ফ্লেচারের সঙ্গে চুক্তি শেষের পর ভারতের হেড কোচ হয়ে আসেন অনিল কুম্বলে। পরের বছর একদিনের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন ধোনি। বিরাট হয়ে যান তিন ফরম্যাটেরই অধিনায়ক। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, বিরাট কোহলির কলকাঠিতেই ভারতের কোচের ভূমিকায় বেশিদিন থাকতে পারেননি কুম্বলে। বিরাট কোহলি-সহ কয়েকজন ক্রিকেটারের কুম্বলের কোচিং পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি ছিল। দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর সময় বিবৃতিতে কুম্বলে জানিয়েছিলেন, কোচ ও অধিনায়কের ভূমিকার মধ্যে যে সীমারেখা থাকে তাকে মান্যতা দিয়েই চলছিলাম। কিন্তু বিসিসিআই কোচ ও অধিনায়কের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির নিরসন ঘটানোর চেষ্টা করলেও আমি মনে করি, এরপর আর এই জুটি বজায় রাখা সম্ভব নয়। সব ভালোর কথা চিন্তা করেই সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
ধোনি বনাম শেহওয়াগ
মহেন্দ্র সিং ধোনি ও বীরেন্দ্র শেহওয়াগের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে কম জল্পনা হয়নি। এমনকী এমএস ধোনির বায়োপিকেও এমন একটি দৃশ্যের উল্লেখ রয়েছে, যেখানে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দুজনের বৈরিতার প্রসঙ্গ উত্থাপন করছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এই তথ্য যে, ধোনি ফিট প্লেয়ারদের দলে চাইতেন, শেহওয়াগ সেই তালিকায় ছিলেন না। যদিও গত বছর বীরু এক সাক্ষাতকারে বলেন, অস্ট্রেলিয়া সফরে ধোনি আমাদের দলের প্রথম তিন ক্রিকেটারই মন্থর ফিল্ডার। সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছিলাম। আমরা যে স্লো ফিল্ডার তা ধোনি সাংবাদিক বৈঠকে বললেও আমাদের কখনও তা বলেননি, টিম মিটিংয়েও বিষয়টি ওঠেনি।
ধোনি-যুবি সম্পর্ক
যুবরাজ সিংয়ের পিতা, অধুনা প্রয়াত যোগরাজ সিং অভিযোগ করেছিলেন, যুবরাজ সিংয়ের কেরিয়ার শেষ করার চক্রান্ত করেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। শুধু যুবরাজ নয়, অনেক ক্রিকেটারকেই বাদ দিতে ধোনি যে কলকাঠি নেড়েছেন সে কথা বলেছিলেন যোগরাজ সিং। তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, যুবরাজেরই অধিনায়ক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভাগ্যের দোষে তা হয়নি, ধোনি অধিনায়ক হন। তবে ধোনি বা যুবরাজ কেউই একে অপরের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি। তাঁদের সম্পর্ক যে ভালোই রয়েছে দুজনেই তা নানা সময় সামনে এনেছেন।
বিরাট বনাম রোহিত
ভারতীয় ক্রিকেটে বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার পর থেকেই তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে নানা সময় নানা চর্চা চলেছে। কখনও এমন তথ্য সামনে এসেছে যে ভারতীয় দলও দুই শিবিরে ভাগ হয়ে গিয়েছে। যদিও এই দুই ক্রিকেটার তো বটেই, এমন বিভাজনের ইঙ্গিত সরকারিভাবে কোনও মহল থেকেই মেলেনি। তবে দুজনের ইগোর লড়াই নিয়ে চর্চা থামেনি। বিরাট কোহলি রোহিত শর্মাকে বাদ দিতে চেয়েছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল। যদিও এর সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। প্রকাশ্যে দুজনেই একে অপরের প্রশংসাই করে থাকেন। বিরাটকে সরিয়ে রোহিতকে একদিনের অধিনায়ক করা হলে প্রকাশ্যে শুভেচ্ছা বা অভিনন্দন কোনওটাই জানাননি কোহলি। তবে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, গত আড়াই বছরের মতো ফের দাবি করছি আমার ও রোহিতের মধ্যে কোনও বৈরিতা নেই। ক্যাপ্টেন রোহিতকে পূর্ণ সহযোগিতা দিতেও প্রস্তুত বিরাট।